Home রাজনীতি বর্তমান সংবিধান গণতান্ত্রিক চর্চার সাথে সাংঘর্ষিক–জি এম কাদের

বর্তমান সংবিধান গণতান্ত্রিক চর্চার সাথে সাংঘর্ষিক–জি এম কাদের

49

মাহাবুবুর রহমান : জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় উপনেতা জনবন্ধু গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি বলেছেন, সরকারের একজন প্রতিমন্ত্রী পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে কটুক্তি করে এবং রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম পরিবর্তন করার ঘোষণা দিয়ে গর্হিত কাজ করেছেন। এজন্য তাকে ক্ষমা চাইতে হবে। তিনি বলেন, ঐ প্রতিমন্ত্রী সংবিধান সংরক্ষণের শপথ ভঙ্গ করেছেন। জননন্দিত সফল রাষ্ট্রপতি পল্লীবন্ধু এরশাদ এবং দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে নিয়ে কটুক্তি করেছেন। তিনি বলেন, ২০১১ সালে পঞ্চদশ সংশোধনী করেছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার। তাতেও রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সমুন্নত আছে। তাই কটুক্তি করে ঐ প্রতিমন্ত্রী আওয়ামী লীগের দলীয় শৃঙ্খলাও ভঙ্গ করেছেন। তাকে অবশ্যই ক্ষমা চাইতে হবে, তা না হলে দেশের মানুষ একদিন এর বিচার করবে। তিনি বলেন, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম ঘোষণার সাথে সকল ধর্মের অধিকার সাংবিধানিকভাবেই নিশ্চিত করেছিলেন পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম পরিবর্তন করার সাহস আর ক্ষমতা কারো নেই।

আজ দুপুরে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান-এর বনানী কার্যালয় মিলনায়তনে গাজীপুর মহানগর ও অঙ্গ এবং সহযোগি সংগঠনের নেতা-কর্মীদের সাথে এক মতবিনিময় সভায় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের এ কথা বলেন।

এসময় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের আরো বলেন, বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী গণতান্ত্রিক চর্চা সম্ভব নয়। বর্তমান সংবিধান গণতান্ত্রিক চর্চার সাথে সাংঘর্ষিক। তিনি বলেন, গণতন্ত্র চর্চা করতে হলে সংবিধানের অনেক ধারা সংশোধণ করতে হবে। সংবিধানের ৭০ ধারার কারণে সরকার দলীয় কোন সংসদ সদস্য সরকারের কোন সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করতে পারেনা। এতে এক ব্যক্তির হাতে সকল ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হয়েছে। দেশের নির্বাহী বিভাগ, আইন সভা ও রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে বিচার বিভাগের প্রায় ৯০ ভাগই সরকার প্রধানের নিয়ন্ত্রণে। তাই সরকার প্রধান যা চাইবেন, তার বাইরে কিছুই সম্ভব নয়।

জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান বলেন, অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহনযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করতে সংবিধান অনুযায়ী আইন করতে হবে। আইন না করে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হচ্ছে, ফুটবল খেলায় একটি দলের পক্ষ থেকে রেফারী নিয়োগ দেয়ার মত। আইন করে, উপযুক্ত ব্যক্তিদের নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করে সংবিধান অনুযায়ী সকল ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনকে দিতে হবে।

প্রধান অতিথির বক্তৃতায় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, নিবন্ধিত প্রায় ৪০টি দলের মধ্যে মাত্র আওয়ামী লীগ, বিএনপি এবং জাতীয় পার্টি সক্রিয় আছে। বাকি দলগুলো সাইনবোর্ড বা নেতা সর্বস্ব রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়েছে। বিএনপি নেত্রী মুচলেকা দিয়ে জেল থেকে বের হয়ে রাজনীতির মাঠে নেই। আবার তাদের আরেক নেতা দন্ডপ্রাপ্ত হয়ে বিদেশে অবস্থান করছেন। বাকী নেতাদের মধ্যে বিভেদ ও বিভাজনের অভাব নেই। আবার আওয়ামী লীগ সরকার পরিচালনা ও উন্নয়ন কর্মকান্ডে ব্যস্ত। রাজনীতির মাঠেও আওয়ামী লীগ নেই বললেই চলে। কিন্তু গণমানুষের দাবি আদায়ে রাজনীতিতে সোচ্চার আছে শুধু জাতীয় পার্টি। ৩১ বছর রাষ্ট্র ক্ষমতার বাইরে থেকেও জাতীয় পার্টি রাজনীতিতে টিকে আছে। নানা অপবাদ ও ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে জাতীয় পার্টি এগিয়ে চলছে। দেশের মানুষ আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কর্মকান্ডে রাজনীতি নিয়ে হতাশাগ্রস্থ। দেশের মানুষ আগামী দিনে জাতীয় পার্টিকে রাষ্ট্র পরিচালনায় দেখতে চায়। গণমানুষের প্রত্যাশা পূরণে জাতীয় পার্টি স্বাতন্ত্র বৈশিষ্ট নিয়ে এগিয়ে যাবে। তাই দলকে আরো শক্তিশালী করতে নেতা-কর্মীদের প্রতি আহবান জানান জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের।

এসময় জাতীয় পার্টি মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু এমপি বলেছেন, দেশের কোটি কোটি বেকারদের জন্য কারো মাথা ব্যাথা নেই। বিএনপি হাওয়া ভবন আর খাওয়া ভবন করে রাজনীতি থেকে ছিটকে পড়েছে। আর আওয়ামী লীগের উন্নয়নের ধাক্কায় মানুষের জীবন ওষ্ঠাগত। উত্তরাঞ্চলের অনেক জেলার রাস্তাঘাট দেখলেই বোঝা যাবে উন্নয়নের হাল। দেশ ও দেশের মানুষের কথা মাথায় রেখেই জাতীয় পার্টির রাজনীতি। জাতীয় পার্টি আগামী দিনে গণমানুষের কল্যাণে কর্মসূচি ঘোষণা করে মাঠে থাকবে। দেশের মানুষের প্রত্যাশা পূরণে জাতীয় পার্টি কাজ করবে। গণমানুষের আস্থা নিয়েই জাতীয় পার্টি আগামী দিনে সরকার পরিচালনা করবে। আগামী নভেম্বর থেকে দেশের প্রতিটি জেলায় সফর করবেন বলেও জানান জাতীয় পার্টি মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু।

এসময় আরো বক্তব্য রাখেন- প্রেসিডিয়াম সদস্য সাহিদুর রহমান টেপা, এডভোকেট শেখ মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, মীর আব্দুস সবুর আসুদ, এডভোকেট মোঃ রেজাউল ইসলাম ভুঁইয়া, অনুষ্ঠানে সভপতিত্ব করেন চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা এমএম নিয়াজ উদ্দিন। উপস্থিত ছিলেন- উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য মনিরুল ইসলাম মিলন, এড. লাকী বেগম, এড. জহিরুল হক জহির, ভাইস চেয়ারম্যান এইচ এম শাহরিয়ার আসিফ, যুগ্ম মহাসচিব গোলাম মোহাম্মদ রাজু, মোঃ বেলাল হোসেন, সৈয়দ মঞ্জুর হোসেন মঞ্জু, সম্পাদকমন্ডলী আনোয়ার হোসেন তোতা, মাখন সরকার, এমএ রাজ্জাক খান, আহাদ চৌধুরী শাহীন, যুগ্ম সম্পাদকমন্ডলী নুরুল হক নুরু, জাকির হোসেন মৃধা, মামুনুর রহিম সুমন, মাহমুদ আলম, সমরেশ মন্ডল মানিক, এডভোকেট মোহাম্মদ আব্দুর রশিদ, এড. ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, কেন্দ্রীয় নেতা আবু সাঈদ স্বপন, আলহাজ্ব আব্দুল বাতেন, শেখ মোঃ মাসুদ, সাফিয়া পারভীন, জাকির হোসেন, জিয়াউর রহমান বিপুল, এমএ কাদির, ইঞ্জি এলাহান উদ্দিন, তরুন পার্টির জিয়াউর রহমান মোড়ল, তরুন পার্টির কেএম সুজন।