Home সারাদেশ বরিশাল-২ ও পিরোজপুর-২ আসনে আলোচনায় সাবেক এমপি মনি, মানুষের মুখে মুখে তার...

বরিশাল-২ ও পিরোজপুর-২ আসনে আলোচনায় সাবেক এমপি মনি, মানুষের মুখে মুখে তার আমলের উন্নয়নের জয়গান….

78

রাহাদ সুমন,বিশেষ প্রতিনিধি॥ আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরিশাল-২ (বানারীপাড়া-উজিরপুর) আসনের পাশাপাশি পিরোজপুর-২ ( স্বরূপকাঠি-কাউখালী-ভান্ডারিয়া ) আসনেও তিন বারের সাবেক সংসদ সদস্য ৭১’র রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ¦ মনিরুল ইসলাম মনি’র নাম আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। তিনি বানারীপাড়া ও উজিরপুরের পাশাপাশি স্বরূপকাঠি,কাউখালী ও ভান্ডারিয়া উপজেলায়ও গণসংযোগ-মতবিনিময়সহ নানা নির্বাচনী তৎপরতা শুরু করেছেন। সম্প্রতি স্বরূপকাঠিসহ ওই নির্বাচনী এলাকায় গণসংযোগ ও নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়ে দেওয়ার পর থেকে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে তার নামের গুঞ্জন শুরু হয়। যা প্রতিনিয়ত ডালপালা মেলছে। দুই জেলার এ ৫ উপজেলার দলীয় নেতা-কর্মী ও সমর্থকসহ সাধারণ মানুষের সঙ্গে তার নিবিড় যোগাযোগ ও সখ্যতা রয়েছে। এসব এলাকায় বহু আত্মীয়-স্বজন,ভক্ত অনুরাগী ও শুভানুধ্যায়ী রয়েছে তার। জাতীয় পার্টির আমলে বানারীপাড়া-স্বরূপকাঠি এলাকায় পরপর দুই বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে ব্যপক উন্নয়ন কর্মকান্ড করে তিনি তুমুল জনপ্রিয়তা অর্জণ করেন। তার আমলের উন্নয়নের কথা এখনও মানুষের মুখে মুখে আলোচিত হয়। এমনকি নিন্দুকেরাও তার উন্নয়নকাজের ব্যপারে প্রশংসা ও স্বীকার করেন। পিরোজপুর-২ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য মহাজোটের শরীক জেপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। এবার আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা এ আসনে আওয়ামী লীগের কোন নেতাকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবিতে সরব রয়েছেন। সেই প্রার্থীর তালিকায় সাবেক সংসদ সদস্য মনিরুল ইসলাম মনি’র নামও আলোচিত হচ্ছে। মনিরুল ইসলাম মনিকে বানারীপাড়া, উজিরপুর ও স্বরুপকাঠি উপজেলার উন্নয়নের রূপকার বলা হয়ে থাকে। এ তিন উপজেলায় তার আমলে অভূতপূর্ব উন্নয়ন কর্মকান্ডের গুনগান এখনও মানুষের মুখে মুখে আলোচিত হচ্ছে। কর্মবীর কাজপাগল একজন এমপি হিসেবে এলাকাজুড়ে তাঁর সমধিক খ্যাতি ও সুনাম রয়েছে। তিনি ১৯৮৬ ও ৮৮ সালে জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতিকে বরিশাল সংযুক্ত পিরোজপুর বানারীপাড়া-স্বরূপকাঠি আসনে পর পর দু’বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ওই সময় তিনি বানারীপাড়া ও স্বরূপকাঠি উপজেলায় রাস্তা-ঘাট,ব্রিজ-কালভার্ট,স্কুল-কলেজ,মসজিদ-মাদরাসা নির্মাণসহ ব্যপক উন্নয়ন করেন। একসময়ের অনুন্নত এ দু’উপজেলাকে তিনি উন্নয়নের ছোঁয়ায় আমুল বদলে দেন। জনভোগান্তি লাঘবে তিনি তখন পিরোজপুর জেলা থেকে বানারীপাড়া উপজেলাকে কেটে বরিশাল জেলার সঙ্গে সংযুক্ত করেন। ১৯৯০ সালে বানারীপাড়া পৌরসভা প্রতিষ্ঠা করে উপজেলা সদরকে শহুরে রূপান্তর করেন। বানারীপাড়া সদরে ডিগ্রী কলেজ প্রতিষ্ঠা করে উচ্চ শিক্ষা অর্জনের পথকে সহজতর করে দেন। একইভাবে স্বরূপকাঠি কলেজকে সরকারিকরণ ও উজিরপুর বি এন খান কলেজ প্রতিষ্ঠা করে উচ্চ শিক্ষার প্রসারে অগ্রণী ভূমিকা পালণ করেন। তিনি ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংশোধিত বরিশাল-২ (বানারীপাড়া-উজিরপুর ) আসনে আওয়ামী লীগের নৌকার টিকিটে বিপুল ভোটে তৃতীয় বারের মত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ওই নির্বাচনে বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী কেন্দ্রীয় নেতা দানবীরখ্যাত এস.শরফুদ্দিন আহমেদ সান্টু ও বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী তিন বারের সংসদ সদস্য ও চারদলীয় জোট সরকারের হুইপ সৈয়দ শহীদুল হক জামালকে হারিয়ে সংসদ সদস্য হয়ে মনিরুল ইসলাম মনি রাজনীতিতে চমক সৃষ্টি করেন। তখন তৃতীয় বারের মত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে তিনি নবউদ্যমে মহা পরিকল্পনা নিয়ে বানারীপাড়া ও উজিরপুর উপজেলায় নানা কর্মযজ্ঞ শুরু করেন। তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা ও তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন বাস্তবায়নে দেশজুড়ে চলমান উন্নয়ন ও অগ্রগতির মহা-কর্মযজ্ঞের অংশ হিসেবে বরিশালের বানারীপাড়া ও উজিরপুরে অভূতপূর্ব উন্নয়ন কর্মকান্ড বাস্তবায়ন করেন। তার আমলে দুই উপজেলায় প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড বাস্তবায়িত হয় ও চলমান থাকে । উন্নয়নের ছোঁয়ায় গ্রামীণ জনপদ অবয়বে শহুরে জনপদে রূপ নেয়। তার সময়ে বানারীপাড়া পৌরসভায় প্রায় পৌনে দুই কোটি টাকা ব্যয়ে দ্বিতল পৌর ভবন নির্মাণ ও ওয়াটার সাপ্লাই’র কাজ, দলীয় কার্যালয়,কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও প্রেসক্লাবসহ পৌর শহরের উত্তরপাড়ে কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠ,গোরস্থান ও শ্মশান ঘাট এবং রাস্তা-ঘাট,ড্রেন,ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণসহ পৌর এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করা হয়েছে। দুই উপজেলায় ৫ কোটি টাকার অধিক ব্যয়ে উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্সের আধুনিক বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়। তার উদ্যোগে বানারীপাড়া উপজেলার লবণসাড়া গ্রামে ১০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু হাসপাতাল নির্মাণ করার পাশাপাশি প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে বহুতল ভবন নির্মাণ করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। বানারীপাড়া ও উজিরপুরসহ পার্শ্ববর্তী জেলা ও উপজেলার মানুষ অতি সহজ পথে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধি সৌধে শ্রদ্ধার্ঘ জানাতে যেতে পারে এ জন্য তিনি জাইকা প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় সাড়ে ৬ শ কোটি টাকা ব্যয়ে বানারীপাড়ার সন্ধ্যা নদীর পশ্চিম পাড়ের শিয়ালকাঠি থেকে দুর্গম ইউনিয়ন বিশারকান্দি পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার সড়ক ও ১০৫টি ব্রিজ-কালভার্ট এবং কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে উজিরপুর সদর থেকে ধামুড়া-হারতা-সাতলা-কোটালীপাড়া-টুঙ্গিপাড়া সড়ক পাকাকরণ ও অসংখ্য ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ করেন। এর মধ্যে সাতলা নদীতে ১২০ কোটি ও হারতা নদীতে ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে বৃহৎ আকারের ব্রিজ নির্মাণ করা হয়। ফলে ওইসব দুর্গম এলাকার চিত্র পাল্টে যায়। বদলে যায় মানুষের জীবনমান। বরিশাল-বানারীপাড়া-স্বরূপকাঠি সড়কের মাধবপাশা. গুঠিয়া, রায়েরহাট ও মাছরং ব্রিজ নির্মাণ সহ বরিশালের গড়িয়ারপাড় থেকে বানারীপাড়া ও স্বরূপকাঠি হয়ে পিরোজপুর, গোপালগঞ্জ, খুলনা,যশোর ও ঝিনাইদহসহ দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোাগ সহজতর করতে তিনি আঞ্জলিক মহাসড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নেন। এছাড়া তার উদ্যোগে বানারীপাড়া ও উজিরপুরে শতাধিক প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল, মাদ্রাসা এবং কলেজে বহুতল ভবন ও সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ করা হয়। এ দুই উপজেলায় প্রায় দুইশ কিলোমিটার অভ্যন্তরীণ পাকা সড়ক পুনঃনির্মাণ ও সংস্কার কাজ করা হয়েছে। তার আমলে এ দুই উপজেলায় কমপক্ষে দুই শতাধিক পাকা ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। শতভাগ বিদ্যুতায়নের আওতায় আনাসহ তার সময়ে মসজিদ, মন্দির, গীর্জা, চার্চ, প্যাগোডা, ক্লাবসহ সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক উন্নয়ন করা হয়েছে। তিনি ২০১৩ সালে উজিরপুর পৌরসভা প্রতিষ্ঠা করে অনুন্নত উপজেলা সদরকে আধুনিক ও উন্নত করেন। তার উদ্যোগে বানারীপাড়ার বিশারকান্দিতে আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্র ও চাখারে শেরে বাংলা হাইটেক পার্ক নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাই ও স্থান নির্ধারণের প্রাথমিক কাজ সম্পন্ন করা হয়। তিনি সংসদ সদস্য না থাকায় এগুলোসহ বহু উন্নয়ন কাজ থমকে আছে। জানা গেছে, মনিরুল ইসলাম মনি’র আমলে তার দেওয়া বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের ডিও লেটারের কাজ এখনও চলমাণ রয়েছে। সংসদ সদস্য না থাকার পরেও তার সার্বক্ষনিক ধ্যান-মন-জ্ঞান এলাকার উন্নয়ন। মন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তর প্রধানদের কাছে এখনও তিনি এলাকার নানা উন্নয়ন কাজ নিয়ে দৌঁড়ঝাপ করে থাকেন। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বরিশাল সিটি নির্বাচনে নৌকা প্রার্থীর একটি নির্বাচনী ক্যাম্পে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে উন্নয়ন প্রসঙ্গে আলাপচারিতায় উজিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতা ও জনপ্রতিনিধি উন্নয়নের দিক থেকে মনিরুল ইসলাম মনি’র আমলকে ‘স্বর্ণযুগের’ সঙ্গে তুলনা করেছেন। এলাকার আপামর জনতাও তার উন্নয়ন নিয়ে প্রশংসায় পঞ্চমুখ। তাকে বরিশাল-২ কিংবা পিরোজপুর-২ আসন থেকে নৌকার টিকিট দেওয়া হলে বিজয়ের পথ সহজতর হবে বলে রাজনৈতিক অভিজ্ঞমহলের অভিমত।
এ প্রসঙ্গে সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ¦ মো. মনিরুল ইসলাম মনি বলেন, বরিশাল-২ কিংবা পিরোজপুর-২ এর যেকোন আসন থেকে আমাকে যদি মনোনয়ন দেওয়া হয় তাহলে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে আসনটি প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দেবো। আমৃত্যু তিনি বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেন, দলীয় মনোনয়ন অন্য কাউকে দেওয়া হলেও দেশ ও দলের স্বার্থে তার পক্ষে কাজ করে বিজয় সুনিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখবো।