Home রাজনীতি বছরজুড়ে সরকারবিরোধী বক্তব্য দিয়ে মিডিয়াতে জিইয়ে থাকার চেষ্টায় জাপা

বছরজুড়ে সরকারবিরোধী বক্তব্য দিয়ে মিডিয়াতে জিইয়ে থাকার চেষ্টায় জাপা

66

মাহাবুবুর রহমান: সারাবছরই সরকারবিরোধী বক্তব্য দিয়ে মিডিয়াতে জিইয়ে থাকার চেষ্টা করেছে জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধদল জাতীয় পার্টি। বিভিন্ন সভা, যোগদান অনুষ্ঠান ও বিবৃতির মাধ্যমে সক্রিয় ছিলো পুরো বছর। তবে জনগুরুত্ব বিভিন্ন বিষয়, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, জ্বালানী তেলের মূল্য বৃদ্ধির গ্রতিবাদে রাজপথে নামতে দেখা যায়নি এদলটিকে। সীমাবদ্ধ ছিলো বিবৃতির মাঝেই।

এ বছরে দলটি হারান পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুকে। তিনি ২ অক্টোবর করোনায় আক্রান্ত হয়ে ইন্তেকাল করেন। এছাড়া পার্টির সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপিকা মাসুদা এমএ রশিদ চৌধুরীও ইন্তেকাল করেন। জাপা চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা হাসান সিরাজ সুজাসহ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

দলের মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু মারা যাবার পর কে হবেন তার উত্তরসূরী, তা নিয়ে নিজেদের মাঝে বিভেদে জড়িয়ে পড়েন দলটির শীর্ষনেতারা। পার্টিতে অপেক্ষাকৃত তরুণ নেতা ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী এমপিকে পার্টির চেয়ারম্যান পার্টির মহাসচিব পদে নিয়োগের ইচ্ছা প্রদান করলে ফুসে ওঠেন অন্যান্য মহাসচিব প্রার্থীরাসহ সিনিয়র নেতারা। মহাসচিব পদ নিয়ে এক পর্যায়ে পার্টির চেয়ারম্যানের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন তারা। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদেরও পরিস্থিতি বুঝে কৌশলী খেলায় চমক দেখিয়ে অতি দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেন। মহাসচিব হিসেবে পার্টির কো-চেয়ারম্যান মুজিবুল হক চুন্নুকেই বিশস্ত মনে করে বেছে নেন।

দলীয় সংসদ সদস্য মাসুদা এমএ রশিদ চৌধুরীর ইন্তেকালে তার আসন শূণ্য হলে সেখানে এমপি নির্বাচিত হোন জাপা চেয়ারম্যানের সহধর্মিনী ও জাতীয় সাংস্কৃতিক পার্টির আহবায়ক শেরিফা কাদের।

পার্টি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয় প্রেসিডিয়মি সদস্য পীরজাদা শফিউল্লাহ আল-মনিরকে। এছাড়া জাতীয় সংসদের বিভিন্ন উপনির্বাচন এবং স্থানীয় নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে অংশ নিয়ে পরবর্তীতে সরকারদলীয় প্রার্থীর সাথে আতাত করে নিজ মনোনয়ন প্রত্যাহারে অভিযোগে দলটির ভাইস চেয়ারম্যান মোস্তাকুর রহমান মোস্তাক, লুৎফর রেজা খোকনসহ ছয়নেতা পার্টি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয় দল থেকে।

এদিকে, এরশাদের তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী বিদিশা সিদ্দিক সারাবছরই হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ট্রাস্টি বোর্ডের ওপর ভর করে জাতীয় পার্টির নাম ব্যবহার করে নিজেকে জানান দেয়ার চেষ্টা করেন। প্রয়াত এরশাদের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকীতে এরশাদের বারিধারার প্রেসিডেন্ট পার্ক বাসভবনে পুত্র এরিককে দিয়ে নিজেকে সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান হিসেবে জাতীয় পার্টির কমিটি ঘোষণা দেন। এ স্বঘোষিত কমিটিতে এরশাদের সহধর্মিনী ও বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদকে চেয়ারম্যান এবং এরশাদ ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান কাজী মামুনুর রশিদকে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ঘোষণা কার হয়। সে কমিটিতে চেয়ারম্যান হিসেবে রওশন এরশাদের নাম ঘোষণা কার হলেও তিনি এর সাথে সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করেন। এর কিছুদিন পর এরশাদ ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান কাজী মামুনুর রশীদও এরিক ঘোষিত জাতীয় পার্টি থেকে সরে আসেন। এরপর থেকে বিদিশা সিদ্দিককে আর দৃশ্যমান দেখা যায়নি।

দীর্ঘদিন মেয়াদ উত্তীর্ণ পার্টির ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের কমিটিতে পরিবর্তণ আনতে পারেনি দলটি। জাতীয় স্বেচ্ছাসেবক পাটি ছাড়া প্রায় সকল অঙ্গ সংগঠনই মেয়াদ উত্তীর্ণ। যদিও এবছর জাতীয় যুব সংহতির একটি আহবায়ক কমিটি দেয়া হয়েছে। এর পূর্ণাঙ্গরূপ দিতেও সময় লেগেছে ছয় মাস।

মূলত, জাতীয় পার্টির কর্মকা- বনানী কার্যালয়ে বিভিন্ন কর্মসূচিতে সক্রিয় থাকলেও দেশব্যাপী সাংগঠনিক কর্মকান্ড তেমন চোখে পড়েনি বলে জানান পার্টির নেতাকর্মীরা। তবে, কেন্দ্র ঘোষিত ৮টি বিভাগীয় সাংগঠনিক টিমের মাঝে খুলনা বিভাগীয় কমিটিকে সারাবছরই সক্রিয় দেখা গেছে। এছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক টিমও একাধিকবার সাংগঠনিক সফরে গিয়েছেন।

জাতীয় পার্টির ২৪জন সংসদ সদস্য থাকলেও সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এবং লিয়াকত হোসেন খোকা ছাড়া অন্য এমপির পার্টির কাকরাইলস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পদাচারণা নেই বললেই চলে। যার ফলে দলীয় সিংহভাগ এমপির সাথে তৃণমুলের কোন সম্পর্ক নেই বলে জানান কাকরাইল কার্যালয়ে নিয়মিত আসা কয়েকজন নেতাকর্মী।

২০২১ সালের সফরতা-ব্যর্থতা ও প্রাপ্তি প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টির যুগ্ম-মহাসচিব ও জাতীয় স্বেচ্ছাসেবক পার্টির সাধারণ সম্পাদক বেলাল হোসেন বলেন, যে প্রত্যাশা ছিলো তার হয়ত কিছুটা ঘাটতি ঘটেছে। পার্টির কর্মীবান্ধব মহাসচিব অকাল মৃত্যুতে আমাদের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। পরবর্তীতে চুন্নু (মুজিবুল হক চুন্নু) ভাই মহাসচিব নিযুক্ত হওয়ার পর থেকে সে শোক কাটিয়ে জাতীয় পার্টি আগের চেয়ে শক্তিশালী রূপে রূপান্তরিত হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা বিরোধীদল হিসেবে জনগণের মৌলিক অধিকার ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে পারি নাই। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, দুর্ণীতিরোধে আমাদের প্রতি জনগণের যে প্রত্যাশা ছিলো সে প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মনিরুল ইসলাম মিলন বলেন, করোনাকালীন এই বছরটিতে আমরা বিএনপি-আওয়ামী লীগের চেয়ে বেশি সক্রিয় ছিলাম। সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড চলমান ছিলো। এ বছর জাতীয় পার্টির নতুন সহযোগী সংগঠন “বাংলাদেশ মেডিকেল টেকনোলজিস্ট পরিষদ” এর আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। গঠিত হয় রিচার্স এণ্ড ডেভেলপমেন্ট উইং ( আরএমডি)। সফলতা-ব্যর্থতার বিচার বিশ্লেষণ করবে জনগণ। নতুন বছর নতুন সূর্যকে দেখবো আমরা। সফলতায় আর প্রত্যাশায় ২০২২ জাতীয় পার্টিকে প্রতিটি জেলা-উপজেলায় সাংগঠনিক কাঠামো আরো বেশি শক্তিশালী করার জন্য ব্যাপক কর্মসূচি নেয়া হয়েছে।

জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য হাজী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন বলেন, করোনাকালীন সময়েও জাতীয় পার্টি তার কর্মকাণ্ড অব্যাহত রেখেছে। অসহায় মানুষদের দেয়া হয়েছে ত্রাণসামগ্রী। বিতরণ করা হয়েছে স্যানিটাইজার, মাস্কসহ বিভিন্ন ঔষধ সামগ্রী। আমার দৃষ্টিতে এবছর জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে কোন ব্যর্থতা ছিলো না।

জনগণের সমস্যা সমাধানে আপনারা কি ভূমিকা রেখেছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে মিলন বলেন, জনগণের সমস্যা সমাধান করবে সরকার। আমরা বিরোধীদল হিসেবে জনস্বার্থ বিরোধী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করতে পারি। সরকারে থাকলে জনগণের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। তাছাড়া আমাদের চেয়ারম্যান জিএম কাদের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিসহ দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি ও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি প্রতিবাদ জানিয়েছেন। আগামী বছর পার্টিকে আরো সংগঠিত করে ক্ষমতার দ্বারপ্রান্তে নেয়া জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

জাতীয় পার্টির অতিরিক্ত মহাসচিব অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূইয়া বির্বাতাকে বলেন, প্রয়াত এরশাদবিহীন একবছরে সাংগঠনিক অবস্থা যতটুকু নিয়ে যাওয়ার কথা সেটা হয়ত করতে পারি নাই। তারপরও আমরা সংগঠনকে শক্তিশালী করার জন্য অতিরিক্ত মহাসচিবদের নেতৃত্বে বিভিন্ন জেলা সফর করেছি। আমি নিজেও চট্টগ্রাম বিভাগের ১৫টি জেলায় সংগঠন গোছানোর জন্য গিয়েছি। বিভিন্ন জাতীয় দিবস, উপজেলা দিবস ও পল্লীবন্ধু এরশাদের মৃত্যুবার্ষিকীসহ বিভিন্ন সভা ও কর্মীসভা অব্যাহত ছিল। জিয়াউদ্দিন বাবলুর মৃত্যুর পর আমরা চুন্নু সাহেবের মত যোগ্য মহাসচিব পেয়েছি। তিনি বলেন, দলের অনেক সংকট উত্তরণ করতে সক্ষম হয়েছি। সবচেয়ে প্রাপ্তি হলো পুরোদল জিএম কাদেরে নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। আমাদের আগামীদিনের প্রত্যাশা, সবগুলো সাংগঠনিক জেলা সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি সম্পূর্ণ করে ২০২৩ সালের জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়া।