Home কৃষি ফসলের মাঠে ফুটে আছে অসংখ্য সূর্যমুখী ফুল।।হাঁসি ফুটেছে কৃষক ও কৃষানীর মুখে

ফসলের মাঠে ফুটে আছে অসংখ্য সূর্যমুখী ফুল।।হাঁসি ফুটেছে কৃষক ও কৃষানীর মুখে

30

উত্তম কুমার হাওলাদার (পটুয়াখালী) কলাপাড়া: পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় ফসলের মাঠে ফুটে আছে অসংখ্য সূর্যমুখী ফুল। সবুজ পাতার আড়ালে উচু হয়ে সারিসারি দাঁড়িয়ে রয়েছে। কোমল রোদের আলোতে যেন হাসছে। আর সূর্যের দিকে মুখ করে ফুলগুলো বাতাসে দুলছে। ক্ষেতগুলোতে মৌমাছি ও পাখির আনাগোনাও বেড়ে গেছে। এ যেন চোখ জুড়ানো মনোমুগ্ধকর এক অপরূপ সৌন্দর্য। এ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে দিনে দিনে বাড়ছে সূর্যমুখীর চাষ। আবহাওয়া অনুক‚লে থাকায় ফলনও হয়েছে ভালো। তাই কৃষক ও কৃষানীর মুখে ফুটেছে হাঁসি। তবে বাজারজাতকরণ, সেচ ব্যবস্থা আর ঋণ সুবিধা পেলে সূর্যমুখী চাষের মাধ্যমে এ অঞ্চলের কৃষি বিপ্লব ঘটানো সম্ভব বলে ধারনা সংশ্লিষ্টদের।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর মোট ৪৪০ হেক্টার জমিতে কৃষকরা সূর্ষমুখীর চাষ করেছে। এর মধ্যে হাইসান ৩৩ জাতের ৪০০ হেক্টর, আর ডি এস ২৭৫ জাতের ২০ হেক্টর, হাইব্রিট বাড়ি ২ ও ৩ জাতের ২০ হেক্টর জমিতে সূর্ষমুখীর চাষ করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, সূর্যমুখীর তেল শরীরের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত। অন্য সব তেলের চেয়ে সূর্যমুখীর তেলে পুষ্টিগুণ বেশি। তাই বাজারে এ তেলের চাহিদাও বেশি।
স্থানীয় ও কৃষকরা জানায়, আগে অনেকে শখের বসে সূর্যমুখী ফুলের বাগান করতো। এখন এর বীজ থেকে উন্নতমানের তেল উৎপাদন করা সম্ভব বিষয়টি কৃষকরা বুঝতে সক্ষম হয়েছে। আশানুরুপ মূল্য পেলে আগামীতে আরো বেশি আবাদের আগ্রহ গ্রকাশ করেছে কৃষকরা। আর এ বিষয়ে সব ধরনের সহযোগিতা করার আশ্বাসও দিয়েছে কৃষি বিভাগ।
টিয়াখালী ইউনিয়নের পশ্চিম টিয়াখালী গ্রামের সূর্যমুখী চাষী মোসা:জেসমিন আক্তার বলেন,উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগীতায় ১৩ জন চাষি ৩০ বিঘা জমিতে সূর্যমূখীর আবাদ করেছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকালে সুর্যমুখীর বাম্পার ফলনের আশা করছি। এর আগে আমরা কখনোই সূর্যমূখীর চাষ করিনি। কৃষি অফিস বীজ, সারসহ বিভিন্ন রোগ ও পোকা দমনে পরামর্শ দিয়ে সহযোগীতা করেছে। আমাকে দেখে এলাকার অনেক নারী সূর্যমূখী চাষে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বলে জানিয়েছেন। অপর সূর্যমুখী চাষি বেল্লাল মুন্সি বলেন,তার ১০ কড়া জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেছেন তিনি। ফলনও ভাল হয়েছে। এতে তার মোট খরচ হয়েছে ৫ হাজার ২০০ টাকা। বর্তমানে অধিকাংশ গাছেই ফুল ফুটেছে। এটি একটি খুবই লাভজনক ফসল। আশা করছি ক্ষেতের সূর্যমুখী থেকে লাভবান হবো। সূর্যমুখী চাষি রফিকুল ইসলাম বলেন, বাজারে তেলের দাম বৃদ্ধি। ক্ষেতের সূর্যমুখী বীজ দিয়ে তেল তৈরী করা হবে। আগামীতে ব্যাপকভাবে সূর্যমুখী চাষ করবো। তবে এ উপজেলা আধুনিক মেশিন ও তেল ভাঙ্গার ঘানি স্থাপনের দাবি জানান ওইসব কৃষকরা।
উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা জোবায়দা আক্তার বলেন, ভোজ্য তেলের চাহিদা পূরন করার লক্ষে ব্যপক আকারে সূর্যমূখীর আবদ করা হয়েছে। এ উপজেলার টিয়াখালী, ধানখালী, চম্পাপুর, নীলগঞ্জসহ ১২ টি ইউনিয়নের কমবেশি সূর্ষমুখীর চাষ করেছে কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এ আর এম সাইফুল্লাহ বলেন, সূর্যমুখীর বীজ থেকে যে তেল উৎপন্ন হয় তা স্বাস্থ্যসম্মত ও মানসম্পন্ন। আমরা কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের বীজ ও সার প্রণোদনা দিয়ে উদ্বুদ্ধ করছি। প্রদর্শনী প্রকল্পের আওতায় এই সূর্যমুখী চাষ করেছেন কৃষকরা। যারা সূর্যমূখী চাষ করেছেন তাদের ফলনও ভাল হয়েছে।
তেল জাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্প পরিচালক কৃষিবিদ মো.জসিম উদ্দিন বলেন, দেশে ভোজ্য তেলের চাহিদা পুরন এবং অমদানি নির্ভরতা কমানোর লক্ষ্যে কৃষি মন্ত্রনালয়ের অধিনে কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের আওতায় পাঁচ বছর মেয়াদী তেল জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধি শীর্ষক প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়েছে। এ প্রকল্পটি দেশের ৬৪ জেলার ২৫০ উপজেলায় বাস্তবায়ন হচ্ছে। এ প্রকল্পের প্রধান লক্ষ হলো তেল জাতীয় বীচ আবাদ ও উৎপাদন করা।