Home ধর্ম পূর্নিমা তিথিতে হাজারো পুণ্যার্থী গঙ্গাস্নান করবে কুয়াকাটার নীল জলে

পূর্নিমা তিথিতে হাজারো পুণ্যার্থী গঙ্গাস্নান করবে কুয়াকাটার নীল জলে

36

কলাপাড়া(পটুয়াখালী)প্রতিনিধি: ধুয়ে মুছে যাবে জাগতিক পাপ এ বিশ্বাস নিয়ে ভরা পূর্নিমা তিথিতে হাজারো সনাতন ধর্মাবলম্বী পুণ্যার্থীরা কুয়াকাটার নীল জলে গঙ্গাস্নান করবেন। পঞ্জিকা মতে, সোমবার বিকেল ৪ টা ২৩ মিনিটে শুরু হবে পূর্ণিমা। থাকবে পরদিন বিকেল ৪ টা ১৯ মিনিট পর্যন্ত। পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় শ্রী শ্রী কৃষ্ণের রাস উৎসব উপলক্ষে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও সেই পূর্ণিমা তিথিতে ভোরে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে বিশাল সমুদ্রে পূণ্যস্নান করবেন সনাতন ধর্মাবলম্বী নারী পুরুষ পুণ্যার্থীরা। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সাধু-সন্যাসী, পুণ্যার্থী ও দর্শনার্থীর ভিড় জমবে কুয়াকাটার সৈকতে। পদ্মা সেতু ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের ফলে এবছর ব্যাপক লোকের সমাগম ঘটবে এটাই জানিয়েছেন কুয়াকাটা পর্যটন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে আগত পুণ্যার্থীদের নিরাপত্তা দিতে মাঠে থাকবে আনসার, ভিডিপি, পুলিশ, র‌্যাব, গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। এছাড়াও বিভিন্ন পয়েন্টে সিসি ক্যামেরা ও চেকপোস্টের মাধ্যমে পুণ্যার্থীদের ওপর নজর রাখা হবে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে কলাপাড়া পৌর শহরের শ্রী শ্রী মদনমোহন সেবাশ্রমে রবিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৯ টায় অধিবাসের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে শ্রী শ্রী কৃষ্ণের ৫ দিন ব্যাপী রাস উৎসবের অনুষ্ঠিকতা। আশ্রম প্রাঙ্গন সাজানো হয়েছে নতুন সাজে। স্থাপন করা হয়েছে ১৭ জোড়া রাধা কৃষ্ণের যুগল প্রতিমা। একই সাথে মেলার আয়োজন করা হয়েছে। এতে দেশের বিভিন্ন স্থানের দোকানীরা হরেক রকমের পশরা সাজিয়ে বসবে। আর সেই মেলার চলছে শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতি এমটাই জানিয়েছেন আয়োজকরা।
স্থানীয়রা জানান, স্নানের আগ মুহুর্তে সনাতন ধর্মাবলম্বী অনেক মানতকারীরা মাথার চুল ন্যাড়া করাসহ প্রাশ্চিত্ত ও পিন্ডদান করবেন। তারা পূণ্যের আশায় মোমবাতি ও আগরবাতি জ্বালিয়ে বেল পাতা, ফুল, ধান, দুর্বা, হরিতকী, ডাব, কলা, তেল, সিঁদুর ইত্যাদি সমুদ্রের জলে অর্পণ করবে। তবে উলুর ধ্বনি, গীতা পাঠ ও ঢঙ্কার বাদ্যে পুরো সৈকত থাকবে মুখরিত। পূণ্যস্নান সম্পন্ন করার পর পুণ্যার্থীরা দল বেঁধে কলাপাড়া পৌর শহরে অবস্থিত শ্রী শ্রী মদন মোহন সেবাশ্রম আঙ্গিণায় ১৭ জোড়া রাধা কৃষ্ণের যুগল প্রতিমা দর্শন করবেন ও মেলায় মিলিত হবে।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মতে, দ্বাপর যুগে মানুষের দুঃখ, দুর্দশা, হিংসা, হানাহানি দেখে এবং দুষ্টের দমন ও সৃষ্টের পালনের জন্য স্বয়ং ভগবান শ্রী কৃষ্ণ নাম ধারণ করে পৃথিবীতে অবর্তীন হয়। গোপিনীদের নাচ ও শ্রীকৃষ্ণের সুমধুর বংশী ধ্বনিতে মুখর হয়ে উঠেছিল বৃন্দাবনের পবিত্র ভূমি। পরবর্তীকালে শ্রীরাধা কৃষ্ণের এই মিলন উৎসবকে শ্রীচৈতন্যদেব নাম-সঙ্কীর্তনের মধ্য দিয়ে রাস মহোৎসবে পরিণত করেন। তিনি যে সর্বভূতে বিরাজ করেন, তারই সাক্ষী রেখেছেন পূর্নিমা তিথিতে এ রাস লীলার মাধ্যমে। সেই লীলা অনুসরণ করে কলাপাড়ার শ্রী শ্রী মদন মোহন সেবাশ্রম আঙ্গিনায় রাস মেলা ও কুয়াকাটার গঙ্গাস্নান চলে আসছে।
কলাপাড়া শ্রী শ্রী মদন মোহন সেবাশ্রম প্রহিত পরিমল চন্দ্র দাস বলেন, শতশত বছর ধরে এই পূর্ণিমা তিথিতে কুয়াকাটায় গঙ্গা স্নান ও কলাপাড়ায় রাস উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ধর্মীয় বিশ্বাস থেকে এই তিথিতে সাগরে পূণ্যস্নান করলে পাপ দুর হয় এবং মানুষের কল্যাণ হয়।
কলাপাড়া শ্রী শ্রী মদন মোহন সেবাশ্রম কমিটির সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. নাথুরাম ভৌমিক বলেন, রবিবার সন্ধ্য সাড়ে ৯ টার দিকে অধিবাসের মধ্যদিয়ে ঐতিহ্যবাহী রাস লীলা উৎসব ও মেলার অনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে। পাঁচদিন ব্যাপী রাস উৎসব অবিরাম চলবে। আগামী ১০ নভেম্বর কুঞ্জভঙ্গ ও মহাপ্রসাদ বিতরণ করা হবে। ইতোমধ্যে মন্দির প্রাঙ্গণে দোকানিরা বিভিন্ন পসরা সাজিয়ে বসেছে। এছাড়া পুরো মন্দির এলাকা সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে।
কুয়াকাটা পৌর মেয়র মো. আনোয়ার হাওলাদার বলেন, এবার পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় আগের তুলনায় দশগুন লোক সমাগম বেশি হবে বলে আশা করেন। অনেক ভাসমান ব্যবসায়ীরা ইতোমধ্যে এসে জড়ো হয়েছে। শৃংখলাভাবে তাদের বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়াও পৌর সভার পক্ষ থেকে স্বার্বক্ষনিক নজরদারি থাকবে।
কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট পুলিশ পরির্দশক মো. হাসানাইন পারভেজ বলেন, দর্শনার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে বরিশাল থেকে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া ট্যুরিস্ট পুলিশের টিম স্বার্বক্ষনিক টহলে থাকবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শংকর কুমার বৈদ্য বলেন, যে সকল দর্শনার্থী আসবে তাদের নিরাপত্তার স্বার্থে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে।