Home কুটনৈতিক ও প্রবাস পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নে অগ্রগতি জাতিসংঘে তুলে ধরলেন বাংলাদেশ

পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নে অগ্রগতি জাতিসংঘে তুলে ধরলেন বাংলাদেশ

13

বিশেষ প্রতিনিধি, নিউইয়র্ক: নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে চলমান আদিবাসী সংক্রান্ত জাতিসংঘের স্থায়ী ফোরামের ২৩তম অধিবেশনে গতকাল পার্বত্য চট্রগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ মশিউর রহমান ঐতিহাসিক ‘পার্বত্য শান্তিচুক্তি’ বাস্তবায়ন এবং ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃ-গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের উন্নয়ন ও অনন্য বৈশিষ্ট্যপূর্ণ আঞ্চলিক সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও বিকাশে সরকারের গৃহীত কার্যক্রম বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন।
পার্বত্য চট্রগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব বলেন, বাংলাদেশের সংবিধান দেশের জনগনের মধ্যে ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারীপুরুষভেদ বা জন্মস্থান নির্বিশেষে সমঅধিকার প্রদান করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে ১৯৯৭ সালে ঐতিহাসিক পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামে কয়েক দশকের সংঘাতের অবসান ঘটেছে এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জনগনকে এদেশের উন্নয়নের মূলধারায় সম্পৃক্ত করা সম্ভব হয়েছে। চুক্তির বাস্তবায়ন সম্পর্কে তিনি আরো বলেন যে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং অংশগ্রহণমূলক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এর ধারাগুলি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। মোট ৭২টি ধারার মধ্যে ইতোমধ্যে ৬৫টি সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়িত হয়েছে, ৩টি আংশিকভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে এবং ৪টি ধারা বাস্তবায়নাধীন রয়েছে’।
এছাড়া, সচিব মোঃ মশিউর রহমান পার্বত্য চট্রগ্রামে নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষা, ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য ডিজিটাল ভূমি জরিপ ও ব্যবস্থাপনা উদ্যোগসহ এ অঞ্চলের সামগ্রিক উন্নয়ন সাধনে সরকারের গৃহীত নানা পদক্ষেপ সম্পর্কে ফোরামকে অবহিত করেন। তিনটি পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলায় তিনজন প্রথাগত সার্কেল চিফ নানাবিধ প্রশাসনিক ও আইনি কর্তৃত্ব ভোগ করেন এবং প্রতিটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং দুই-তৃতীয়াংশ সদস্য ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী থেকে নির্বাচিত হন বলেও উল্লেখ করেন পার্বত্য চট্রগ্রাম বিষয়ক সচিব। তিনি আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সাথে পরামর্শ করে সরকার বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ডে বিনিয়োগ অব্যাহত রেখেছে। জাতিসংঘের বেশ কয়েকটি সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগী এ অঞ্চলে উন্নয়ন কার্যক্রমের বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। তিনিউল্লেখকরেনস্পষ্টতই পার্বত্যচট্টগ্রামশান্তিচুক্তিরপরথেকেএইঅঞ্চলেরসার্বিকউন্নয়নেঅসামান্যপরিবর্তনঘটেছে।
সরকার আইন প্রণয়ন করে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সংস্কৃতি, ভাষা ও ঐতিহ্য, রক্ষা ও প্রচারের জন্য বিশেষায়িত সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছে। পাঁচটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিশুদের মাঝে তাদের নিজ নিজ ভাষায় বিনামূল্যে পাঠ্য পুস্তক নিয়মিতভাবে বিতরণ করা হচ্ছে। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির সরকারি চাকরি এবং সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য ৫ শতাংশ হারে কোটা সংরক্ষিত আছে। বর্তমানে, জাতীয় সংসদে ৪ জন এবং মন্ত্রিসভায় ১ জন ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর সদস্য রয়েছেন বলেও সচিব মোঃ মশিউর রহমান তাঁর বক্তব্যে উল্লেখ করেন।
জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ১৫ হতে ২৬ এপ্রিল ২০২৪ পর্যন্ত দুই সপ্তাহব্যপী আদিবাসী সংক্রান্ত জাতিসংঘের স্থায়ী ফোরাম এর ২৩তম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই সভায় পার্বত্য চট্রগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ মশিউর রহমানের এর নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল অংশগ্রহণ করছেন। প্রতিনিধি দলে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ খলিলুর রহমান এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়রাম্যান সুপ্রদীপ চাকমাসহ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং স্থায়ী মিশনের প্রতিনিধিবৃন্দ রয়েছেন।