Home জাতীয় পদ্মা সেতু চালুতে বাঁচবে অর্থ ও সময়

পদ্মা সেতু চালুতে বাঁচবে অর্থ ও সময়

79

স্টাফ রিপোটার: পদ্মা সেতু চালুতে বরিশাল থেকে রাজধানী শহর ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চেলের যাতায়াতের যাত্রীদের সময় এবং খরচ দুই কমবে। বর্তমানে বেশীর ভাগ যাত্রীরা কাঠালবাড়ি-মাওয়া রুটে ভেঙে ভেঙে যাত্রা করেন। এরপরে কাঠালবাড়ীয়া থেকে ফেরি, স্পিডবোট নয়তো লঞ্চে করে পদ্মা পাড়ি দিয়ে মাওয়া প্রান্তে পৌছাতে হয়। এভাবে বরিশাল থেকে ঢাকায় গিয়ে পেছাতে কম পক্ষে ৫ঘন্টা সময় ব্যয় হয়। আবার সরাসরি ফেরী পারাপার গাড়ীতে ঢাকায় পৌছাতে কম পক্ষে ৮ঘন্টা সময় লাগে। কোন কোন ক্ষেত্রে ১২ থেকে ১৪ঘন্টা সময় পর করতে হয়। পদ্ম সেতু পাড়ি দিয়ে বরিশাল থেকে ঢাকায় পৌছাতে সর্ব্বোচ্চ ৪ঘন্টা সময় ব্যয় হবে। অন্য দিকে যানবাহনের প্রকারভেদে বরিশাল থেকে ঢাকায় পৌছাতে সাড়ে ৪ শ থেকে ৬ শ টাকা পর্যন্ত যাত্রী দের খরচ হয়। আর শীতাতাপ বাসের ভাড়া আরও বেশি।
২০২১ সালের নভেম্বর মাসে বিআরটিএর সর্বশেষ নির্ধারণ করা ভাড়ার তালিকা অনুযায়ী, ঢাকা থেকে পাটুরিয়া ফেরিঘাট হয়ে বরিশাল পর্যন্ত ২৪২ কিলোমিটার পথের টোলসহ আদায়যোগ্য যাত্রীপ্রতি বাস ভাড়া ( প্রতি কিলোমিটার১.৮০ টাকা হিসাবে)নির্ধারণ করা হয় ৬২৬ টাকা। আর ঢাকা থেকে মাওয়া হয়ে বরিশাল পর্যন্ত ১৫৬ কিলোমিটার পথের টোলসহ যাত্রীপ্রতি আদায়যোগ্য বাস ভাড়া নির্ধারণ করা হয় ৪০২ টাকা। সেখানে বর্তমানে পদ্মা বহুমুখী সেতুর ওপর দিয়ে চলাচলরত বাসের টোল সংযোজনপূর্বক হালনাগাদ বাস ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৪১২ টাকা ৩২ পয়সা। যাত্রী প্রতি বাস ভাড়া বেড়েছে মাত্র ১০ টাকা ৩২ পয়সা। অথচ এ রুটে বর্তমানে ফেরি পাড়াপাড়ের বাসগুলোতে যাত্রীদের কাছ থেকে সিটপ্রতি ৫০০ টাকা ভাড়া নিচ্ছে।
এদিকে পদ্মা বহুমুখী সেতুর ওপর দিয়ে চলাচলরত বাসের টোল সংযোজনপূর্বক হালনাগাদ ভাড়া নির্ধারণ করা হলেও এক্সপ্রেসওয়ের টোল সংযোজন করা হয়নি। আর গত অর্থবছর এক্সপ্রেসওয়েতে বাসের জন্য যে টোল অনুমোদন করা হয়েছে, সেটি সংযোজন করলে এ রুটে যাত্রীপ্রতি ভাড়া আর মাত্র ১২-১৩ টাকা বাড়তে পারে। তারপরও পদ্মাসেতু হয়ে বরিশাল-ঢাকা রুটে যাত্রীদের ৪৫০ টাকার নিচেই ভাড়া গুনতে হবে।
বরিশাল জেলা বাস মালিক গ্রুপের দপ্তর সম্পাদক অমল চন্দ্র দাস বলেন, ভাড়া ও যাতায়াত পথের সময়ের হিসেবে আরিচার থেকে মাওয়া রুট জনপ্রিয় সাধারণ যাত্রীদের কাছে। তবে যারা কোনো ঝক্কি-ঝামেলা ছাড়া বাসে উঠে সরাসরি গন্তব্যে পৌঁছাতে চান তারা আরিচা রুটের গাড়িগুলো ব্যবহার করছেন। তবে পদ্মাসেতু আমাদের এ অঞ্চলের জন্য আশীর্বাদ । এ সেতুর কারনে সাধারণ যাত্রীসহ পরিবহন চালক-শ্রমিকদের ভোগান্তি কমবে। মালিকও নিশ্চিন্তে থাকতে পারবে। তবে বাস মালিকরা আশা করছেন পদ্মাসেতুর টোল কমার সাথে সাথে ভাড়াও পুনঃনির্ধারণ করা হবে।
এদিকে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কে চলাচলের ক্ষেত্রে ফেরিঘাটে সরকারী টোল বাদে চাঁদা দেওয়া, রাস্তায় মালিক সমিতি, পুলিশ বিট, ট্রাফিক পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশসহ বিভিন্ন দলের দলীয় ফান্ডসহ নানা নামে ট্রাকসহ পন্যবাহী ও যাত্রী বাহীর গাড়ি থেকে রাস্তার বাকে বাকে চাঁদা দিতে হতো। এতে ফেরী ভাড়ার চেয়ে দ্বিগুন টাকা পথে ঘাটে খরচ হতো পরিবহন মালিকদের। পদ্মা সেতু চালুর পরে অন্তত পক্ষে সেতুর টোলে বাহিরে যানবাহন মালিকদের চাঁদার পেছনে যে অর্থ খরচ হতো তা অনেকাংশই কমে আসবে।
বরিশাল-ঢাকা রুটে চলাচলকারী বাস চালাক মো. মাসুম বিল্লাহ সরদার বলেন, ফেরির টোলের বাহিবের নানাভাবে, নানা নামে চাঁদা দিতে হতো ফেরী ঘাটে। ওই সকল চাঁদা পরিশোধ না করলে ফেরীতে ট্রাক পার করতে কম পক্ষে তিনদিন সময় লাগাতো। পদ্মা সেতু চালু হলে ফেরীঘাটের যে তিন চার ধরনের যে চাঁদা দিতে হতো তার হাত থেকে বাচা যাবে।
নুরুজ্জামান নামে এক ট্রাক চালক বলেন, আমরা যে ট্রাক চালাই তাতে বর্তমান ফেরি ভাড়া ১৪০০ টাকা। কিন্তু ঘাট ফি, সিরিয়াল, অমুক দান, সমুক অনুদার মিলে কম পক্ষে ২২০০ টাকা খরচ হয়। এসব চাঁদা না দিলে ফেরী পরাতে কোন কোন সময়ে তিন দিন সময় ব্যয় হতো। এখন টোল ঘরে গাড়ি থামিয়ে নির্ধারিত টাকা দিয়ে চলে আসব। আর চাঁদাবাজি হবে না। ফলে পরিবহনের খরচও অনেকাংশ কমে আসবে। বাস স্টাফ মান্নু বলেন, ‘এখন পদ্মা পার হতে যাত্রীবাহী বাসের লাগে ১৩৫০ টাকা। তবে আনুষঙ্গিক খরচসহ ১৬০০ টাকা খরচ করতে হয়। তবে পদ্মা সেতু হলে আনুষঙ্গিক খরচ লাগবে না’।