Home সারাদেশ পদ্মার চরে অসময়ে ব্যাপক ভাঙন, বহু মানুষ সর্বস্বান্ত

পদ্মার চরে অসময়ে ব্যাপক ভাঙন, বহু মানুষ সর্বস্বান্ত

23

ডেস্ক রিপোর্ট: রাজশাহীর বাঘা উপজেলার পদ্মার চরাঞ্চলে নদীভাঙন আগ্রাসি রূপ ধারণ করছে। অসময়ে পদ্মার তীব্র ভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছে চরাঞ্চলের বহু মানুষ। ঠিকানা হারানো মানুষগুলো ঘরবাড়ি হারিয়ে ছুটছে আশ্রয়ের সন্ধানে। এলাকায় বসতি স্থাপনের জায়গা না পেয়ে কেউ কেউ পার্শ্ববর্তী উপজেলায় চলে গেছে। আবার কেউ এলাকায় বসতি স্থাপনের জায়গা খুঁজছে।
জানা গেছে, ভাঙনকবলিত এলাকার বহু মানুষ সহায় সম্বল হারিয়ে একেবারে নিঃস্ব হয়ে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছে। কৃষক, জেলে এবং পেশাজীবী মানুষেরা পেশা ও পৈতৃক ভিটেমাটি হারিয়ে হচ্ছেন সর্বস্বান্ত। স্থানীয়রা জানিয়েছে, এক সপ্তাহের ভাঙনে গৃহহারা হয়েছে ৩১টি পরিবার। ইতিমধ্যে শত শত বিঘা ফসলি জমি পদ্মার গর্ভে বিলীন হয়েছে। উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে ২১টি বৈদ্যুতিক খুঁটি।
স্থানীয়রা আরো জানান, গত তিন দশকে ভাঙনের কবলে পড়ে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে হাজার হাজার বিঘা ফসলি জমি, বসতভিটা, রাস্তা-ঘাট, হাট-বাজার, একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ পাঁচটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদ ও কবরস্থান। গত এক সপ্তাহে হঠাত্ করে পদ্মার চরে ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে।
বাঘা উপজেলার চকরাজাপুর ইউনিয়নের তিন নম্বর কালীদাসখালী চরে এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় ৩১টি পরিবার গৃহহারা হয়ে পড়েছে। বাড়িঘর, গাছপালা, নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। তারা ইতিমধ্যেই অন্যত্র চলে গেছেন। ভাঙনের ঝুঁকিতে আছে প্রায় ৪৫টি পরিবার। ভাঙনের ভয়ে তারা বাড়িঘর সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন।

চকরাজাপুর ইউনিয়নের পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের চরকালিদাখালী চরের ইউপি সদস্য শহিদুল ইসলাম জানান, এ ওয়ার্ডে মোট ভোটার সংখ্যা এক হাজার ২৬২ জন। পরিবার ছিল চার শতাধিক। এরমধ্যে নদী ভাঙনের কারণে ইতিমধ্যে দুই শতাধিক পরিবার বিভিন্ন স্থানে চলে গেছে।
অসময়ে নদীভাঙনে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন কালিদাসখালী গ্রামের আসফার বেগমের পরিবার। তিনি জানান, এক সপ্তাহ আগেও সব ঠিক ছিল। ভাঙনের আগে আমার স্বামী কাজের সন্ধানে ঢাকায় যান। এখন অসময়ের ভাঙনের ফল ছেলেমেয়ে নিয়ে বড্ড বিপদে পড়েছেন। এলাকায় বসতি স্থাপনের জন্য জায়গা খুঁজছেন। কিন্তু পাচ্ছেন না। সরিয়ে আনা বাড়ির টিনের চালা তুলে আপাতত বসবাস করছেন।

কালিদাসখালীর বাসিন্দা সুব্রত রায় জানান, তার ৩০ বিঘা জমি ছিল। সব জমি পদ্মা গ্রাস করেছে। বর্তমানে বাড়ি করার মতো জমিও নেই। সাত কাঠা জমি বছরে ৫ হাজার ২০০ টাকায় ভাড়ায় ঘর তুলে বসবাস করছেন। সেই বাড়িও বর্তমানে ভাঙনের মুখে পড়েছে। জমি অন্যত্র ভাড়াও পাচ্ছেন না। চার সদস্যের পরিবার নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছেন। স্থানীয় মুদির দোকানি সিরাজুল ইসলাম জানান, পদ্মার ভাঙনের মুখে রয়েছেন তিনি। এবার নিয়ে দুবার দোকান ভাঙনের কারণে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আবারও ভাঙনের মুখে পড়েছেন। আবারও দোকান সরিয়ে নেওয়ার কাজ করছেন।

চকরাজাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ডি এম মনোয়ার হোসেন বাবলু দেওয়ান জানান, এক সপ্তাহ আগে অসময়ে নদীভাঙন শুরু হয়েছে। এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। বাঘা সাব জোন পল্লীবিদ্যুত্ অফিসের ডিজিএম সুধীর কুমার বলেন, এক সপ্তাহে ২১টি বৈদ্যুতিক খুঁটি উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে। তবে যারা অন্য স্থানে বাড়ি করছেন তাদের সংযোগ দেওয়া হচ্ছে।

বাঘা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শারমিন আখতার জানান, অসময়ে পদ্মার ভাঙনের ফলে অনেক পরিবার গৃহহারা হয়ে পড়েছেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
ইত্তেফাক