চট্টগ্রামে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যাপক উত্তোলন

ডেস্ক রিপোর্ট: চট্টগ্রামে ভূগর্ভস্থ পানির বেপরোয়া উত্তোলন চলছে। শিল্পকারখানায়, কৃষিতে সেচের কাজে, মিনারেল ওয়াটার হিসেবে বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি ও ব্যক্তি পর্যায়ে ব্যবহারের জন্য ভূগর্ভস্থ পানি ব্যাপকভাবে উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে পানির স্তর মাটির অনেক নিচে নেমে গেছে। চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন এলাকায় সুপেয় পানির জন্য মাটির ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০০ ফুট পর্যন্ত গভীরে যেতে হচ্ছে। পানির স্তর বেশি নিচে নেমে যাওয়ায় হাজারো শ্যালো নলকূপ অচল হয়ে গেছে। যখন প্রতি বছর সরকারিভাবে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় হাজার হাজার গভীর নলকূপ ব্যক্তি পর্যায়ে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন এলাকায় সুপেয় পানির সংকট বেড়েছে। জেলায় সরকারিভাবে সার্ভিস ওয়াটারের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় মানুষ নলকূপ বসানোর দিকে ঝুঁকে পড়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, ভূগর্ভস্থ পানির বেপরোয়া উত্তোলন রোধ করতে হবে। কারণ যে পরিমাণ পানি উত্তোলন হচ্ছে, সেই পরিমাণ পানি মাটির নিচে ঢুকছে না। এতে পানির স্তর দ্রুত নেমে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে চুয়েটের সাবেক ভিসি ও ইউএসটিসির উপাচার্য প্রফেসর ড. জাহাঙ্গীর আলম ইত্তেফাককে বলেন, উত্তোলনের সমপরিমাণ পানি মাটির নিচে যাচ্ছে না। বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় নালা, খাল দিয়ে তা সাগরে চলে যাচ্ছে। পুকুর, খাল ভরাট হয়ে যাচ্ছে। ভূগর্ভস্থ পানির বেপরোয়া উত্তোলন অব্যাহত থাকলে ভূমিধস ও ভূমিকম্পসহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ঝুঁকি বেড়ে যাবে। ফলে এখন থেকে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ এবং নদী ও সাগরের পানি পরিশোধন করে ব্যবহারের উপযোগী করার উদ্যোগ নিতে হবে।’

বর্তমানে চট্টগ্রাম মহানগরী এলাকায় সার্ভিস ওয়াটারের ব্যবস্থা রয়েছে। ওয়াসার পানি শোধনাগার প্রকল্পে নদীর পানি পরিশোধন করে সরবরাহ করা হচ্ছে। তার পরও নগরীতে ব্যক্তি পর্যায়ে হাজার হাজার গভীর নলকূপ বসিয়ে পানির চাহিদা মেটানো হচ্ছে। ওয়াসার উদ্যোগেও প্রায় ৬০টি গভীর নলকূপ চালু রয়েছে। কিন্তু উপজেলা পর্যায়ে এখনো সার্ভিস ওয়াটার সরবরাহব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। সরকারিভাবেও সার্ভিস ওয়াটার প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ সীমিত। দেখা যাচ্ছে, গ্রামে সুপেয় পানির সংকট ক্রমশ বাড়ছে। অনেক এলাকায় নারী-পুরুষ কয়েক কিলোমিটার দূর থেকে সুপেয় পানি সংগ্রহ করছেন। এতে সুপেয় পানি নিয়ে মানুষের মধ্যে দুর্ভোগ বেড়েছে।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ জানায়, গ্রামে হাজারো শ্যালো টিউবওয়েল অচল হয়ে পড়েছে। ৩০০-৪০০ ফুট গভীরে গিয়েও সুপেয় পানি মিলছে না। যে পানি পাওয়া যাচ্ছে, তাতে আর্সেনিক বেশি। পান করার উপযোগী নয়। অন্য কাজে তা ব্যবহার করা যাচ্ছে। বর্তমানে চট্টগ্রাম জেলার মধ্যে বাঁশখালী ও চন্দনাইশ উপজেলায় দুটি সার্ভিস ওয়াটার প্রকল্পের নির্মাণকাজ চলছে। এখানে নিকটস্থ নদী থেকে পানি নিয়ে পরিশোধনের মাধ্যমে গ্রাহক পর্যায়ে পাইপলাইনের মাধ্যমে সরবরাহ দেওয়া হবে। এছাড়া কয়েকটি উপজেলায় সরকারিভাবে পুকুর খননের উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। কিন্তু সরকারি খাসজমি না পাওয়ায় পুকুর খনন প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে না।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চট্টগ্রামে সবচেয়ে বেশি সুপেয় পানির সংকট দেখা দিয়েছে পটিয়া, কর্ণফুলী উপজেলা, সীতাকুণ্ড, মিরসরাই এলাকায়। এসব এলাকায় দেড় হাজার ফুট গভীরে গিয়েও সুপেয় পানি মিলছে না। এলাকাগুলোতে বিভিন্ন স্থানে হালকা থেকে ভারী শিল্পকারখানা রয়েছে। কারখানাগুলোতে নিজস্ব প্রয়োজনে গভীর নলকূপ বসিয়ে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করা হচ্ছে। একটি কারখানায় তিন-চারটি গভীর নলকূপও বসানো হয়েছে। এতে কারখানার আশপাশের বসতি এলাকায় বসানো নলকূপ অচল হয়ে পড়ছে। মানুষ অভিযোগ করেও প্রতিকার পাচ্ছে না। ফলে তাদের মিনারেল ওয়াটার অথবা দূর থেকে পানি সংগ্রহ করে খাওয়ার পানির চাহিদা মেটাতে হচ্ছে। সুপেয় পানির সংকটের মধ্যে বাণিজ্যিকভাবে পানি বিক্রি ক্রমশ বাড়ছে। বিএসটিআই বা সংশ্লিষ্ট সংস্থার লাইসেন্স ছাড়াই গভীর নলকূপ বসিয়ে পানি উত্তোলন করে মিনারেল ওয়াটার নামে বাসাবাড়িসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দেদার বিক্রি চলছে।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর চট্টগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ চন্দ্র দাস বলেন, উপজেলা পর্যায়ে সরকারিভাবে সার্ভিস ওয়াটার সরবরাহ বাড়ানো হবে। গভীর নলকূপ বরাদ্দের কার্যক্রম কমিয়ে আনা হবে। শিল্পকারখানা ও বোরো মৌসুমে ভূগর্ভস্থ পানি বেশি ব্যবহার হচ্ছে। এতে পানির স্তর দ্রুত নিচে নেমে যাচ্ছে। আমাদের বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের বিষয়েও গুরুত্ব দিতে হবে।
ইত্তেফাক