Home জাতীয় নিয়োগ জালিয়াতিঃ ভোলায় সাত মাদ্রাসার সুপার ও সভাপতিকে কারণ দর্শানোর নোটিশ

নিয়োগ জালিয়াতিঃ ভোলায় সাত মাদ্রাসার সুপার ও সভাপতিকে কারণ দর্শানোর নোটিশ

55

ভোলা প্রতিনিধি: ভোলার চরফ্যাশন ও লালমোহন উপজেলার সাতটি দাখিল মাদ্রাসায় জালিয়াতির মাধ্যমে সহকারী গ্রন্থাগারিক/ক্যাটালগার, নিরাপত্তাকর্মী, আয়া নিয়োগ দিয়ে এমপিওভূক্তির আবেদন করায় প্রতিষ্ঠানগুলোর সুপার ও সভাপতিকে কারন দর্শানোর নোটিশ করা হয়েছে। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানগুলোর এমপিও স্থায়ীভাবে বাতিল, ম্যানেজিং কমিটি ভেঙ্গে দেওয়ার সুপারিশ এবং সভাপতি ও সুপারের বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনে মামলা দায়ের কেন করা হবে না তার ব্যাখ্যাসহ কারণ জানতে চেয়েছে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতর।
প্রতিষ্ঠানগুলো হলো; চরফ্যাশন উপজেলার আসলামিয়া হামেলা খাতুন বালিকা দাখিল মাদ্রাসা, দক্ষিণ ফ্যাশন সামসুল উলুম দাখিল মাদ্রাসা, উত্তর চরমানিকা লতিফিয়া দাখিল মাদ্রাসা, আমিনাবাদ হাকিমিয়া দাখিল মাদ্রাসা, দক্ষিণ আছলামপুর মোবারক আলী দাখিল মাদ্রাসা, আছলামপুর মোহাম্মদিয়া দাখিল মাদ্রাসা, লালমোহন উপজেলার কুন্ডের হাওলা রশিদিয়া দাখিল মাদ্রাসা।
গত ২৬ জুলাই মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতরের সহকারী পরিচালক জান্নাতুন নাহারের স্বাক্ষরিত অধিদফতরের অফিস আদেশে ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার উত্তর চরমানিকা লতিফিয়া দাখিল মাদ্রাসা, আমিনাবাদ হাকিমিয়া দাখিল মাদ্রাসা, দক্ষিণ আছলামপুর মোবারক আলী দাখিল মাদ্রাসা, আছলামপুর মোহাম্মদিয়া দাখিল মাদ্রাসা, লালমোহন উপজেলার কুন্ডের হাওলা রশিদিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার ও সভাপতিকে আগামী ৫ আগস্টের মধ্যে সন্তোষজনক ব্যাখ্যা অধিদফতরে দাখিল করার নির্দেশ দিয়েছেন। এর আগে গত ১৯ জুলাই স্বাক্ষরিত অধিদফতরের অফিস আদেশে চরফ্যাশন উপজেলার আসলামিয়া হামেলা খাতুন বালিকা দাখিল মাদ্রাসা, দক্ষিণ ফ্যাশন সামসুল উলুম দাখিল মাদ্রাসার সুপার ও সভাপতিকে আগামী ২৯ জুলাইর মধ্যে সন্তোষজনক ব্যাখ্যা অধিদফতরে দাখিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আলাদা আলাদা আদেশে জানা গেছে, ভোলা জেলার চরফ্যাশন উপজেলার আসলামিয়া হামেলা খাতুন বালিকা দাখিল মাদ্রাসায় জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে মহাপরিচালকের প্রতিনিধি মনোনয়ন করে সহকারী গ্রন্থাগারিক/ক্যাটালগা ও নিরাপত্তাকর্মী পদে অবৈধভাবে নিয়োগ এবং বেআইনিভাবে চলতি জুলাই মাসে তাদের এমপিওভূক্তির অনলাইন আবেদন সাবমিট করা হয়।
করোনার ছুটিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের সময় ২০২০ সালের ২৬ আগস্ট ৫ সদস্য বিশিষ্ট নিয়োগ নির্বাচনী বোর্ডে গ্রন্থাগারিক ও নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ করা হয়। ওই নির্বাচনী বোর্ড ডিজির প্রতিনিধি হিসেবে দেখানো হয় ঢাকার সরকারি মাদ্রাসা-ই-আলিয়ার আরবী বিভাগের প্রভাষক মো. রেজাউল করিমকে দেখানো হয়। অথচ মহাপরিচালকের মনোনীত প্রতিনিধি হিসেবে তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়নি। তিনি নিয়োগ কাযর্ক্রমে অংশ নেননি এবং তাকে নিয়োগ কাযর্ক্রমে আহবান করা হয়নি।
চরফ্যাশন উপজেলার দক্ষিণ ফ্যাশন সামসুল উলুম দাখিল মাদ্রাসায় জাল- জালিয়াতির মাধ্যমে মহাপরিচালকের প্রতিনিধি মনোনয়ন করে সহকারী গ্রন্থাগারিক/ক্যাটালগার, নিরাপত্তাকর্মী ও আয়া পদে অবৈধভাবে নিয়োগ এবং বেআইনিভাবে চলতি জুলাই মাসে তাদের এমপিওভূক্তির অনলাইন আবেদন সাবমিট করা হয়।
করোনার ছুটিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের সময় ২০২০ সালের ২১ আগস্ট ৫ সদস্য বিশিষ্ট নিয়োগ নির্বাচনী বোর্ডে এ মাদ্রাসায় সহকারী গ্রন্থাগারিক, নিরাপত্তাকর্মী ও আয়া নিয়োগ করা হয়। ওই নির্বাচনী বোর্ড ডিজির প্রতিনিধি হিসেবে দেখানো হয় ঢাকার সরকারি মাদ্রাসা-ই-আলিয়ার আরবী ও ইসলামী শিক্ষা বিভাগের প্রভাষক মো. রেজাউল করিম খন্দকারকে দেখানো হয়। অথচ মহাপরিচালক (ডিজির) মনোনীত প্রতিনিধি হিসেবে তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়নি এবং ডিজির প্রতিনিধি হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেননি।
চরফ্যাশন উপজেলার উত্তর চরমানিকা লতিফিয়া দাখিল মাদ্রাসায় জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে মহাপরিচালকের প্রতিনিধি মনোনয়ন করে সহকারী গ্রন্থাগারিক/ক্যাটালগার, নিরাপত্তা কর্মী ও আয়া পদে অবৈধভাবে নিয়োগ এবং বেআইনিভাবে চলতি জুলাই মাসে তাদের এমপিওভূক্তির অনলাইন আবেদন সাবমিট করা হয়।
করোনার ছুটিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের সময় ২০২০ সালের ২৭ আগস্ট ৫ সদস্য বিশিষ্ট নিয়োগ নির্বাচনী বোর্ডে গ্রন্থাগারিক, নিরাপত্তাকর্মী ও আয়া নিয়োগ করা হয়। ওই নির্বাচনী বোর্ড ডিজির প্রতিনিধি হিসেবে দেখানো হয় ঢাকার সরকারি মাদ্রাসা-ই আলিয়া’র ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপককে দেখানো হয়। কিন্তু মহাপরিচালকের মনোনীত প্রতিনিধি ছিলেন মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতরের পরিদর্শক সহযোগী অধ্যাপক শহীদ লতিফ। শুধু তাই নয় ডিজির প্রতিনিধি যাকে দেখানো হয়েছে তাকেও নিয়োগ নির্বাচনী বোর্ডে ডাকা হয়নি। একই ধরনের অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া যায় অন্য মাদ্রাসা চারটিতেও।
প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ভোলার চরফ্যাসন উপজেলার আমিনাবাদ হাকিমিয়া দাখিল মাদ্রাসায় ২০২০ সালের ৩০ আগস্ট একই জালিয়াতি করে সহকারী গ্রন্থাগারিক নিয়োগ দিয়ে চলতি জুলাই মাসে অনলাইনে এমপিওভূক্তির আবেদন সাবমিট করা হয়।
দক্ষিণ আছলামপুর মোবারক আলী দাখিল মাদ্রাসায় ২০২০ সালের ২৮ আগস্ট সহকারী গ্রন্থাগারিক নিয়োগ দিয়ে চলতি জুলাই মাসে অনলাইনে এমপিওভূক্তির আবেদন সাবমিট করা হয়। লালমোহন উপজেলার কুন্ডের হাওলা রশিদিয়া দাখিল মাদ্রাসায় ২০২০ সালের ২৮ ডিসেম্বর সহকারী গ্রন্থাগারিক নিয়োগ দিয়ে চলতি জুলাই মাসে অনলাইনে এমপিও আবেদন সাবমিট করা হয়।
চরফ্যাশন উপজেলার দক্ষিণ আছলামপুর মোবারক আলী দাখিল মাদ্রাসায় ২০২০ সালের ২৮ আগস্ট সহকারী গ্রন্থাগারিক নিয়োগ দিয়ে চলতি জুলাই মাসে অনলাইনে এমপিও আবেদন সাবমিট করা হয়।
আদেশ সূত্রে জানা গেছে, করোনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের মধ্যে জালিয়াতি করে নিয়োগ এবং অনলাইনে এমপিওভূক্তি আবেদন প্রতিষ্ঠানের পক্ষে প্রতিষ্ঠান প্রধানরা সাবমিট করেন।
স্থানীয় সূত্র গুলো জানায়, শুধু এই সাত প্রতিষ্ঠানই নয় একই ভাবে ভোলার চরফ্যাশন ও লালমোহনে প্রায় শতাধিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ সম্পনś করেছেন।
জাল-জালিয়াতির অভিযোগ প্রসংগে চরফ্যাশন উপজেলার আসলামিয়া হামেলা খাতুন বালিকা দাখিল মাদ্রাসার সুপার মোঃ মনিরুজ্জামান নিয়োগ বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না দাবী করে বলেন-এ নিয়োগ গায়েবী ভাবে হয়েছে। এবিষয়ে তদন্তপূর্ক দায়ীদের বিরুদ্ধ আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
দক্ষিণ ফ্যাশন সামসুল উলুম দাখিল মাদ্রাসার সুপার মোঃ মিজানুর রহমান কিভাবে নিয়োগ হয়েছে তিনি জানেন না দাবী করে বলেন-এ বিয়য়ে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
উত্তর চরমানিকা লতিফিয়া দাখিল মাদ্রাসার মো. ছালেহ উদ্দিন বলেন-জালিয়াতি চক্র মাদ্রাসার আইডি হ্যাক করে এটি করেছে। এ বিষয়ে থানায় জিডি করা হবে।
আছলামপুর মোহাম্মদিয়া দাখিল মাদ্রাসা সুপার হেলাল উদ্দিন তিনি এ বিষয় কিছু জানেন না বলে জানান। আমিনাবাদ হাকিমিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার নুরুল ইসলাম এ বিষয়ে কোন জবাব দিতে না পেরে বলেন- এবিষয়ে পরে জানাবো।
দক্ষিণ আছলামপুর মোবারক আলী দাখিল মাদ্রাসার সুপার ফারুকুল ইসলাম বলেন-মোবাইলে সব কথা বলা যাবে না সাক্ষাতে বলবো।
লালমোহন উপজেলার কুন্ডের হাওলা রশিদিয়া দাখিল মাদ্রাসা সুপার মো. বশির উল্লাহর ফোন বন্ধ পাওয়ায় তার বক্তব্য নেয়া যায়নি।
চরফ্যাশন মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. মহিউদ্দিন জাল-জাতিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগের কারণে এসব প্রতিষ্ঠানের প্রধান ও সভাপতিকে কাছ ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে বলে সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন- এ নিয়োগ গুলো আমার যোগদানের আগে হয়েছে। এখানে আরো অনেক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ রয়েছে। অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠান গুলো জবাব দাখিল করুক। জবাব সন্তোষজনক না হলে দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।