Home জাতীয় নিত্যপণ্যের বাজার: ছয় চ্যালেঞ্জ দেখছে সরকার

নিত্যপণ্যের বাজার: ছয় চ্যালেঞ্জ দেখছে সরকার

42

ডেস্ক রিপোর্ট: মহামারি করোনার অভিঘাত মোকাবিলা করে উঠে দাঁড়াতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফাঁদে সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশও। যেসব পণ্য আমদানি করে চাহিদা মেটাতে হয়, সেসব পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে নানামুখী জটিলতা ও বিশ্বব্যাপী জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় আমদানিকৃত পণ্যের বাজারদামও অনেকটাই অনিয়ন্ত্রিত।
বাংলাদেশের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যেসব চ্যালেঞ্জ সুনির্দিষ্ট করেছে, সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে—নিত্যপণ্যের আমদানিনির্ভরতা এবং দেশে উত্পাদনযোগ্য আবাদি জমির পরিমাণ কম থাকা। আমদানিযোগ্য পণ্যের উল্লেখযোগ্য আসে ভারত থেকে। কিন্তু সে দেশে উত্পাদন কম হলে বা তাদের নিরাপদ মজুত না রেখে তারা পণ্য রপ্তানি করে না বা অনেক সময় বন্ধ করে দেয়। দূরবর্তী দেশ থেকে আমদানির খরচ ও সময় বেশি লাগে, ফলে সেসব পণ্য জরুরি প্রয়োজন মেটাতে পারে না। বিদ্যমান অবস্থায় নতুন উত্স্য থেকে পণ্য সংগ্রহ করা হলে আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। এদিকে পণ্য আমদানি করে তা প্রক্রিয়াজাতকরণের বিষয়টি নির্ধারিত কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের হাতে সীমাবদ্ধ রয়েছে। সরকার মনে করছে, এর ফলে ঐ প্রতিষ্ঠানগুলো আমদানিকৃত পণ্যের একচেটিয়া মূল্য নির্ধারণ করতে পারে। এর ফলে নিত্যপণ্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাবে—এমন আশঙ্কাও রয়েছে। এ বিষয়টি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে মনে করছে।

এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে যেসব পরিকল্পনা গ্রহণের কথা বলা হচ্ছে, সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে দেশীয় উত্পাদন বৃদ্ধি, দেশীয় উত্পাদনের ভিত্তিতে বছরের শুরুতেই আমদানি পরিকল্পনা প্রণয়ন, সয়াবিন তেল ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের আমদানি অব্যাহত রাখার জন্য নতুন নতুন উত্স খুঁজে বের করা ও সরাসরি আমদানির ব্যবস্থা করা, প্রতি মাসে টিসিবির মাধ্যমে পরিবারভিত্তিক ১ কোটি কার্ডধারীর মধ্যে সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য বিক্রি করা, চাল আমদানিতে অনুমোদন প্রক্রিয়া চলমান রাখার ব্যবস্থা রাখার কথাও বলা হয়েছে।

জানা যায়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এ সুপারিশের আলোকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার ইতিমধ্যে কম্বোডিয়া ও ভিয়েতনাম সফর করেছেন। গতকাল সোমবার তিনি ইত্তেফাককে বলেন, চাল-গমের কোনো অভাব হবে না। আপত্কালীন মজুতের তুলনায় এখনো দেশীয় মজুত অনেক বেশি আছে। আপত্কালীন মজুত সাড়ে ১০ লাখ মেট্রিক টন থাকার কথা, কিন্তু দেশে খাদ্যশস্য মজুতের পরিমাণ এখন ১৬ লাখ ১৪ হাজার মেট্রিক টন। তিনি জানান, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ার সঙ্গে দুটি পৃথক সমঝোতা স্মারক চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে। যখন যে পরিমাণ চাল ও গম প্রয়োজন দেখা দেবে, বাংলাদেশ তা আমদানি করতে পারবে।

এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, বিশ্বমন্দা পরিস্থিতিতে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও সমস্যার মধ্যে আছে। বিশেষ করে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সংকটটি প্রলম্বিত হচ্ছে। সরকারও বাস্তবতা বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে। পণ্য আমদানির জন্য বিকল্প বাজার খোঁজার কাজ অব্যাহত রয়েছে। তিনি আরো বলেন, সুষ্ঠু তদারকির মাধ্যমে বাজারকে কীভাবে ক্রেতার সক্ষমতার মধ্যে রাখা যায়, সে প্রচেষ্টা চলমান। সরকারের মূল লক্ষ্য হচ্ছে, যে কোনো পরিস্থিতিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখা। তবে যে কোনো সময় অভ্যন্তরীণ উত্পাদন বৃদ্ধির বিকল্প নেই।
ইত্তেফাক