Home জাতীয় নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় কৈশোরকালীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা জরুরি

নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় কৈশোরকালীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা জরুরি

39

জাতীয় এসআরএইচআর কনফারেন্সে ১৭ দফা ঘোষণা

স্টাফ রিপোটার: ১৭ দফার ঘোষণার মধ্য দিয়ে সিমাভি বাংলাদেশের কারিগরি সহায়তা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের আর্থিক সহায়তায় বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ (বিএনপিএস) আয়োজিত দুই দিনব্যাপী ‘জাতীয় এসআরএইচআর কনফারেন্স ও যুবসম্মেলন-২৩’ শেষ হয়েছে। ঘোষণায় নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় কৈশোরকালীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা জরুরি উল্লেখ করে এ বিষয়ে সরকার ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে এ সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণাপত্র পাঠ করেন বিএনপিএস’র প্রকল্প ব্যাবস্থাপক সঞ্জয় মজুমদার। এ সময় বক্তৃতা করেন এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালক শেখ মো. মনিরুজ্জামান, ঢাকাস্থ আলিয়ঁস ফ্রাঁসেস-এর পরিচালক ফ্রাঁসোয়া গ্রেসজিন, বিএনপিএস’র নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবীর এবং হিল ফ্লাওয়ার-এর নির্বাহী পরিচালক ডাঃ নিলো কুমার তঞ্চঙ্গা।
ঘোষণাপত্রে বলা হয়, সকল পর্যায়ের স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রে যুব ও কৈশোর বান্ধব স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হবে। প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ সকল স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাসিকবান্ধব টয়লেট স্থাপন নিশ্চিত ও মাসিকবান্ধব টয়লেটে প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরকারিভাবে সরবরাহ করতে হবে। মাসিকবান্ধব টয়লেট উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে। কৈশোর ও যুববান্ধব স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে মনোসামাজিক সেবার জন্য সেবাকেন্দ্রে বিশেষায়িত জনবল বা কাউন্সেলর নিয়োগ করতে হবে। প্রত্যন্ত এলাকাসমূহের বিদ্যালয়গুলোতে মেয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে স্যানিটারি প্যাড বিতরণের ব্যবস্থা করতে হবে। জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
আরো বলা হয়, দুর্গম এলাকার মধ্যে ও ভিন্ন ভিন্ন প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। দুর্গম এলাকায় স্যাটেলাইট ক্লিনিক ও মোবাইল মেডিকেল টিমের স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম নিয়মিতভাবে পরিচালনা করতে হবে। এজন্য বিশেষায়িত বাজেট বরাদ্ধ রাখতে হবে। দুর্গম এলাকায় শিশুদের টিকা কার্যক্রমের পাশাপাশি গর্ভবতী মায়েদের জন্য ও মোবাইল মেডিকেল টিমের মাধ্যমে সেবা পৌঁছে দিতে হবে। স্থানীয় পর্যায়ে পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগ করতে হবে। স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রসমূহে এলাকা ভিত্তিক সেবাগ্রহীতাদের সুবিধাজনক সময় বিবেচনা করে সপ্তাহের কোনো একদিন ছুটির দিনে সেবাদানের ব্যবস্থা করতে হবে। দুর্গম এলাকাসমূহে কমিউনিটি ক্লিনিকের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে। কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রেফারেল সিস্টেমে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রথাগত নেতাদের (কারবারি ও হেডম্যান) রেফার করার ক্ষমতা প্রদান করতে হবে।
ঘোষণাপত্রে বলা হয়, মাধ্যমিক পর্যায়ের পাঠ্যসূচিতে বয়ঃসন্ধিকাল, মাসিক, যৌন ও প্রজননস্বাস্থ্য এবং অধিকার বিষয়ক সঠিক ও উপযোগী তথ্যের ঘাটতি দূর করতে হবে। বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমে বয়ঃসন্ধিকাল, মাসিকস্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা, যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য এবং অধিকার বিষয়ে পাঠদান নিশ্চিত করতে হবে। মাসিকের সাথে হরমোন পরিবর্তন ও বিপাক প্রক্রিয়ার (মেটাবলিজম) সম্পর্ক এবং নারীর সার্বিক স্বাস্থ্যের ও মাসিকের অব্যবস্থাপনার প্রভাব বিষয়ে সকল বয়সের মানুষকে সচেতন করার ব্যবস্থা নেওয়া ও পাঠ্যসূচীতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তন ঝুকি মোকাবেলাসহ পরিবেশ সংরক্ষণে সরকারী-বেসরকারী সংস্থার সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
‘যুব ও কিশোর কিশোরীদের জন্য নিশ্চিত হোক যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য এবং অধিকার’- এই স্লোগানকে সামনে রেখে শনিবার এই সম্মেলনের উদ্বোধন করেন বিএনপিএস-এর চেয়ারপারসন শহীদজায়া শ্যামলী নাসরীন চৌধুরী। সম্মেলনে কৈশোর ও যুববান্ধব স্বাস্থ্যসেবা, পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্বাস্থ্যসেবা, স্কুলে কিশোরীদের মাসিককালীন স্বাস্থ্য ও পরিচ্ছন্নতা, নারীর প্রতি নিকটজনদের দ্বারা সহিংসতা ও পার্বত্য চট্টগ্রামে বাল্যবিবাহ বন্ধে উদ্যোগ এবং পানি ও জলবায়ু পরিবর্তন: পার্বত্য চট্টগ্রামের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক অধিবেশনে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষণা সংস্থা, সরকারি বিভিন্ন বিভাগ ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের কিশোরী ক্লাবের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন ও তাদের মতামত তুলে ধরেন।