Home রাজনীতি নানা চ্যালেঞ্জে বিএনপি, চোখ আগামী নির্বাচনে

নানা চ্যালেঞ্জে বিএনপি, চোখ আগামী নির্বাচনে

34

ডেস্ক রিপোর্ট: নানা চ্যালেঞ্জের বেড়াজালে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হাতে গড়া বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি। প্রতিষ্ঠার ৪৩ বছরে সবচেয়ে বেশি সময় ক্ষমতার বাইরে আছে দলটি। সাংগঠনিক দুর্বলতার পাশাপাশি মামলা ও গ্রেফতারে নেতাকর্মীদের নাজেহাল অবস্থা। দলটির শীর্ষ দুই কান্ডারি-চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে সরাসরি পাশে পাচ্ছেন না নেতাকর্মীরা। সব মিলিয়ে কঠিন সংকটের মুখে দলটি। সংকট উত্তরণে নানা পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে দলটি। নীতিনির্ধারকরা জানান, সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানে বাধা অতিক্রম করাই তাদের মূল লক্ষ্য। তাই দলটির চোখ এখন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিকে। নির্বাচন কমিশন (ইসি) পুনর্গঠন নিয়ে বাড়তি মনোযোগ তাদের। পাশাপাশি দল পুনর্গঠন দ্রুত শেষ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আগামী নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ের প্রাথমিক কাজও আগেভাগে শুরু হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আজ উদ্যাপিত হচ্ছে বিএনপির ৪৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর দলটি প্রতিষ্ঠা হয়। রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও বিএনপির নেতাকর্মীরা মনে করেন, নেতাকর্মীদের মধ্যে আস্থা ও মনোবল ফিরিয়ে আনতে সঠিক ও বাস্তবমুখী পদক্ষেপ নিতে হবে। সুবিধাবাদীদের বাদ দিয়ে যোগ্য ও ত্যাগীদের সামনে এনে দল পুনর্গঠন করতে হবে। প্রতিষ্ঠার পর বিভিন্ন সময়ে বিপর্যয়ে পড়েছে এই দল।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন মনে করেন, বিএনপির সামনে চ্যালেঞ্জ হচ্ছে দুটি। এক. বর্তমান ভোটারবিহীন সরকারের হাত থেকে জনগণকে মুক্ত করা। দুই. দেশে একটি নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্দলীয় নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা এবং জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা। এসব দাবি আদায়ে আমরা সময়মতো কর্মসূচি দেব।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপিতে কোনো সংকট নেই। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের এবং স্থায়ী কমিটির সদস্যদের যৌথ নেতৃত্বে বিএনপি চলছে। খালেদা জিয়া প্রায় তিন বছর সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে পারছেন না। এত নির্যাতন-নিপীড়নের পরও বিএনপি থেকে কেউ অন্য দলে যোগ দিয়েছেন-এরকম ঘটনা ঘটেনি। অনেকে হয়তো পরিস্থিতির কারণে নীরব আছেন, আবার অনেকে সক্রিয় আছেন। যদি গণতান্ত্রিক পরিবেশ আসে, তখন বোঝা যাবে বিএনপির কী আছে। বিএনপি সাংগঠনিক ও রাজনৈতিকভাবে এখন অনেক শক্তিশালী।
দলটির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। আর নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যে বাধাগুলো আছে, তা জনগণের সামনে দৃশ্যমান। বাধাগুলো আমাদের অতিক্রম করতে হবে, মোকাবিলা করতে হবে। একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের পূর্বশর্তগুলো পূরণ করার জন্য আমাদের যা যা করা দরকার, তা-ই করতে হবে।
তিনি বলেন, নেতৃত্বের সংকট বলতে আমরা বিরোধী দলে আছি, মামলা-হামলার শিকার হচ্ছি। কিন্তু বিএনপির রাজনীতিতে সংকট নেই, নেতৃত্বেও নেই। দলের প্রতিষ্ঠালগ্নে ঘোষণাপত্র অনুযায়ী সমৃদ্ধি, উন্নয়ন ও শিল্পায়নের বাইরেও প্রতিশ্রুতি ছিল বহুদলীয় গণতন্ত্র এবং জাতীয় ঐক্য সুসংহত করা, ন্যায়ভিত্তিক সমাজব্যবস্থা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা। সে অনুযায়ী বিএনপি এগিয়ে যেতে চেষ্টা করছে। বাধা আসছে, তা অতিক্রম করছি। এখন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে আমরা আছি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, জনপ্রিয়তা থাকার পরও ভুল রাজনীতির কারণে এখনো ‘চোরাগলিতে’ আটকে আছে বিএনপি। দলের ভেতর বিভিন্ন ধরনের সংকট এবং করোনার ধাক্কায় আরও টালমাটাল দলটি। এ থেকে উত্তরণে দলটির সামনে রয়েছে নানামুখী চ্যালেঞ্জ। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে-গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা, দলের ৭ম কাউন্সিল, পুরোনো ও নতুন জোটের রাজনৈতিক নানা হিসাবনিকাশ, দল এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর অন্তর্দ্বন্দ্ব কাটিয়ে পুনর্গঠন, সরকারবিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলা। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সর্বপ্রথম নেতাকর্মীদের মধ্যে আস্থা ও মনোবল ফিরিয়ে আনতে হবে। সৎ, যোগ্য, ত্যাগী ও মেধাবী নেতাকর্মীদের খুঁজে নেতৃত্বের আসনে বসাতে হবে। দলমতনির্বিশেষে দেশের বিভিন্ন সেক্টরের জ্ঞানী ও গুণী ব্যক্তিদের পরামর্শ গ্রহণ এবং দলে টেনে গুরুত্বপূর্ণ কাজে লাগাতে হবে। একই সঙ্গে নিজেদের ভুলত্রুটি চিহ্নিত করে তা থেকে শিক্ষা নিতে হবে।

তাদের মতে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও জামায়াতে ইসলামীকে সঙ্গে নিয়ে পথ চলায় বিএনপির মধ্যে অস্বস্তি বিরাজ করছে। টানা তিন দফায় ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটি অনেকদিন থেকেই কোণঠাসা। বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে নিজেদের লক্ষ্য নির্ধারণ করে প্রয়োজনীয় কৌশল গ্রহণেও ব্যর্থ হচ্ছে দলটি।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী মনে করেন, টানা তিন দফায় ক্ষমতার বাইরে থাকায় স্বাভাবিকভাবে বিএনপিকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হচ্ছে। দলটির কাছে মানুষের প্রত্যাশা অনেক; কিন্তু তাদের নেতাকর্মীরা জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছে না। তারা খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন করতে ব্যর্থ হয়েছেন। সরকারের বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর আন্দোলনও করতে পারেনি। এর মূল কারণ বিএনপিতে নেতৃত্বের সংকট।
তিনি বলেন, বিদেশে বসে দল চালানো যায় না। বিএনপির সমর্থক আছে। তরুণ-যুবক নেতাদের অভাব নেই। তাদের থেকেও নেতৃত্বে আসতে পারে। পরিবারতন্ত্র থেকে বিএনপিকে বেরিয়ে আসতে হবে। মনে রাখতে হবে, বিএনপি কারও ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়। বিএনপি সারা দেশের সম্পদ, জনগণের সম্পদ। তাই জনগণের আস্থা অর্জনকারী বিশ্বাসযোগ্য নেতৃত্বের প্রয়োজন। এটি করা হলে বিএনপির ঘুরে দাঁড়াতে বেশি সময় লাগবে না।
এদিকে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে এক বাণীতে দলকে আরও শক্তিশালী ও গতিশীল করতে মনেপ্রাণে কাজ করার জন্য সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
কর্মসূচি : করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে দলের ৪৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে দুইদিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আজ ভোর ৬টায় কেন্দ্রসহ সারা দেশের কার্যালয়ে দলীয় পতাকা উত্তোলন, স্থায়ী কমিটির পক্ষে বেলা ১১টায় শেরেবাংলা নগরে দলের প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজার জিয়ারত ও পুষ্পস্তবক অর্পণ, সাড়ে ১১টায় মহানগর দক্ষিণ ও উত্তরের পক্ষে পুষ্পস্তবক অর্পণ, দুপুর ১২টায় নয়াপল্টনস্থ বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) সহযোগিতায় হেলথ ক্যাম্প এবং করোনা রোগীদের জন্য ওষুধ ও করোনা সামগ্রী বিতরণ। এছাড়া আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে বিএনপির উদ্যোগে আলোচনাসভা হবে।-যুগান্তর