Home জাতীয় দৌলতপুরে হত্যা মামলার আসামী পীরের জামিন পেতে ভক্ত কাঠগড়ায় : রিমান্ড শেষে...

দৌলতপুরে হত্যা মামলার আসামী পীরের জামিন পেতে ভক্ত কাঠগড়ায় : রিমান্ড শেষে কারাগারে

64

দৌলতপুর (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি : কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে আলোচিত একটি হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত প্রধান আসামি কথিত ভন্ড পীর সৈয়দ তাছের আহমেদের (৬০) বদলে তারই এক ভক্ত বদলি আসামী হিসেবে আদালতে আত্মসমর্পনের অভিযোগ উঠে। গত ১৭ অক্টোবর কুষ্টিয়া জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম সেলিনা খাতুনের আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করলে আদালত জামিন না মঞ্জুর করে তাকে জেল হাজতে প্রেরণের আদেশ দেন। এসময় আদালতে উপস্থিত হত্যা মামলার বাদী ও স্বাক্ষীর পক্ষ থেকে অভিযোগ উঠে যিনি আসামী সৈয়দ তাছের আহমেদ সেজে আদালতে আত্মসমর্পন করেছেন তিনি প্রকৃত তাছের নন, তিনি ভুয়া তাছের। প্রকৃত তাছের আহমেদ এখনও পলাতক রয়েছেন। যিনি আত্মসমর্পন করেছেন তিনি দৌলতপুর উপজেলার ফিলিপনগর গ্রামের করীম আলীর ছেলে নাজিম উদ্দিন ফকির (৬৫)। সে ভন্ড তাছের পীরের ভক্ত।
হত্যা মামলার বাদী নিহত রাশেদের পিতা সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুর রাজ্জাক ও মামলার সাক্ষী রেজাউল ইসলামের করা অভিযোগের সত্যতা যাচায়ের জন্য কারাগারে থাকা ভুয়া তাছের পীরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গত ২৫ অক্টোবর আদালতে রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দৌলতপুর থানার পরিদর্শক (ওসি তদন্ত) শফিকুল ইসলাম। আদালত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করায় কারাগার থেকে ভুয়া তাছের পীরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজতে নেন দৌলতপুর থানা পুলিশ।
রিমান্ডে ৩ দিনের জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ হেফাজতে থাকা ওই ব্যক্তি নিজেকে নাজিম উদ্দিন ফকির (৬৫) এবং সে দৌলতপুর উপজেলার ফিলিপনগর গ্রামের করীম আলী ছেলে বলে জানিয়েছেন এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন দৌলতপুর থানার পরিদর্শক (ওসি) নাসির উদ্দিন।
তিনি আরো বলেন, রিমান্ডে দেয়া জবানবন্দীর সত্যতা যাচাইয়ে শুক্রবার সকালে ওই এলাকা পরিদর্শন করে নাজিম উদ্দিন ফরিরের পরিবারের সাথে কথা বলে নিশ্চিত হয়েছি, গত ১৭ অক্টোবর সকালে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে একটি হত্যা মামলায় সৈয়দ তাছের আহমেদের বদলে যিনি তাছের আহমেদ সেজে আত্মসমর্পন করেন তিনি তাছের আহমেদ নন, তিনি হলেন নাজিম উদ্দিন ফকির। নাজিম উদ্দিন ফকির দীর্ঘদিন ধরেই তাছের আহমেদের ভক্ত হিসেবে তার দরবারে যাতায়াত ছিলো। সেইসূত্রে প্রকৃত আসামী দৌলতপুর উপজেলার হোগলবাড়িয়া ইউনিয়নের কল্যানপুর চরদিয়াড় গ্রামের মৃত আজের উদ্দিন মালিথার ছেলে সৈয়দ তাছের আহমেদের অনুরোধে ও পরামর্শে এবং আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে নজিম উদ্দিন ফকিরকে সৈয়দ তাছের আহমেদ সাজিয়েছিলেন বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছেন। এছাড়াও রিমান্ড শেষে বৃহষ্পতিবার বিকেলে নাজিম উদ্দিন ফকিরকে আদালতে হাজির করা হলে আদালতে ঘটনার সত্যতা স্বীকারোক্তি দিয়ে জবানবন্দী দিয়েছেন।
আদালত সূত্রের বরাত দিয়ে কুষ্টিয়া কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক ইমরান হোসেন জনান, গত ৬ জুন সকালে উপজেলার কল্যাণপুর চরদিয়াড় গ্রামের কথিত ভন্ড পীর সৈয়দ তাছের আহমেদের দরবারে মোবাইল চুরির অভিযোগে উপজেলার রিফাইতপুর ইউনিয়নের হরিনগাছী গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে রাশেদুল ইসলাম রাশেদ (২৮) কে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় নিহতের পিতা বাদি হয়ে উপজেলার কল্যাণপুর চরদিয়াড় গ্রামের মৃত আজের উদ্দিন মালিথার ছেলে সৈয়দ তাছের আহমেদকে প্রধান আসামী করে ৬ জনের নাম উলেøখসহ ১০-১২ জনের নামে দৌলতপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। হত্যা মামলায় এজাহার নামীয় ৫ আসামীকে পুলিশ গ্রেফতার করে আদালতে সৌপর্দ করতে সÿম হলেও প্রধান আসামী কথিত ভন্ড পীর সৈয়দ তাছের আহমেদ পলাতক থেকে ধরাছোয়ার বাইরে রয়ে যান।
কুষ্টিয়া জেলা জজ আদালতের প্রধান কৌশুলী (পিপি) অনুপ কুমার নন্দী বলেন, আদালতে প্রকৃত আসামীর বদলে অন্যকোন ব্যক্তি ভুয়া আসামী হয়ে আত্মসর্মন করেছেন এমন কথা জেনেছি। ঘটনাটর প্রকৃত তথ্য উদ্ঘাটনে ইতোমধ্যে মামলা সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী কর্মকর্তাকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। একই সাথে বিজ্ঞ আদালত প্রকৃত তাছের আহমেদ এবং ভুয়া তাছের আহমেদ (নাজিম উদ্দিন ফকির) এর জাতীয় পরিচিতি নম্বর ধরে রিপোর্ট প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন। তদন্তে এমন জালিয়াতির প্রমান পাওয়া গেলে অবশ্যই এই ন্যাক্কারজনক বে-আইনী অপরাধ সংঘটনে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।