Home সারাদেশ দৌলতপুরে পদ্মার চরাঞ্চলের ত্রাস উজ্জল সরদারের কাছে জিম্মি সাধারণ মানুষ

দৌলতপুরে পদ্মার চরাঞ্চলের ত্রাস উজ্জল সরদারের কাছে জিম্মি সাধারণ মানুষ

56

জোড়া খুনে নেতৃত্বসহ নানা অপকর্মে জড়িত থাকার অভিযোগ

দৌলতপুর (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি : কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের পদ্মার চরাঞ্চলের ত্রাস উজ্জল সরদারের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ। উজ্জল সরদারের নেতৃত্বে তার ক্যাডাররা বুধবার (১৪ জুন) বিকেলে দু’জন নিরীহ গ্রামবাসীকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করেছে। স্থানীয় সংসদ সদস্যের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে থেকে এলাকায় সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে এক সময়ের বিএনপি’র ক্যাডার ও বাহিনী প্রধান লালচাদের সামরিক শাখার সেকেন্ড ইন কমান্ড উজ্জল সরদার।
সরজমিনে এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, দৌলতপুর উপজেলার পদ্মা নদীর তীর ঘেঁষা মরিচা ইউনিয়ন। বুধবার বিকেলে ওই ইউনিয়নের শান্ত গ্রাম হাটখোলাপাড়ায় উজ্জল সরদারের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীদের হাতে প্রাণ হারিয়েছেন শরিফুল ওরফে ভ্যালস মালিথা ও বজলু মালিথা নামে দুই নিরীহ গ্রামবাসী। এলাকাবাসী ও নিহতের পরিবারের অভিযোগ তুচ্ছ ঘটনাকে পুঁজি করে উজ্জল সরদারের নেতৃত্বে তার ক্যাডাররা এ হামলা চালায়।
এলাকাবাসীর অভিযোগ উজ্জল সরদার বিগত বিএনপি সরকারের সময় ওই দলের একজন চিহ্নিত ক্যাডার ও স্থানীয় সন্ত্রাসী গোষ্ঠি লালচাঁদ বাহিনীর সামরিক শাখার সেকেন্ড ইন কমান্ড ছিলেন। বিএনপি সরকার পরিবর্তন হলে তিনি দেশের বাইরে চলে যান। বছর পাঁচেক আগে এলাকায় ফিরে কুষ্টিয়া-১ দৌলতপুর আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য সরওয়ার জাহান বাদশার সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলেন। এরই সুবাদে উজ্জল সরদার এলাকার বালুঘাট দখল করে অবৈধভাবে পদ্মা নদী থেকে বালু উত্তোলন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৩ কোটি টাকার ঠিকাদারি কাজ বাগিয়ে নেন। পাশাপাশি তিনি এলাকায় নতুন করে সন্ত্রাসী বাহিনীও গড়ে তুলে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে চলেছেন বলে ভীতসন্ত্রস্থ এলাকাবাসীরা গণমাধ্যম কর্মীদের জানিয়েছেন। তবে নির্মম এ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের গ্রেফতার করে এলাকার শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহিদুর রহমান।
জোড়া খুনের ঘটনার পর থেকে উজ্জল সরদার পলাতক রয়েছেন। তবে উজ্জল সরদারের স্ত্রী মাসেদা খাতুনের দাবি ঘটনার সাথে উজ্জল জড়িত না এবং ঘটনার সময় সে ছিলও না।
এদিকে স্থানীয় সংসদ সদস্য সরওয়ার জাহান বাদশার দাবি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নির্বাচনকে সামনে রেখে তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। এছাড়া উজ্জল সরদার জোড়া খুনের সঙ্গে জড়িত না বলেও দাবি করেন তিনি। একই সঙ্গে হত্যাতান্ডের সাথে জড়িতদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার দাবিও জানান তিনি।
জোড়া খুনের ঘটনার পর এলাকার শান্তি ফিরাতে উজ্জল সরদারকে দ্রæত গ্রেফতার ও তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী সোচ্চার হয়ে উঠেছে।
গত মঙ্গলবার (১৩ জুন) বিকেলে গরুতে জমির পাটক্ষেত খাওয়া নিয়ে স্থানীয় এমপি’র ক্যাডার লালচাঁদ বাহিনীর সেকেন্ডে ইন কমান্ড উজ্জল সরদার ও বজলু মালিথার মধ্যে বাক বিতন্ডা হয়। এরই জের ধরে বুধবার বিকেল ৫টার দিকে মরিচা ইউনিয়নের হাটখোলাপাড়া জামে মসজিদের সামনে দু’পক্ষের মধ্যে আবারও বাক বিতন্ডার একপর্যায়ে উজ্জল সরদারের নেতৃত্বে ৪০-৫০জন আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে বজলু মালিথা পক্ষের লোকজনের ওপর হামলা করে। এসময় উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে। ঘন্টাব্যাপী চলা সংঘর্ষে গুলিবর্ষণ, ইটপাটকেল নিক্ষেপ, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও ধারাল অস্ত্র দিয়ে একে অপরকে আঘাত করার ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে বজলু মালিথা গ্রæপের বজলু মালিথা ও শরিফুল মালিথা ঘটনাস্থলেই নিহত হোন। সংঘর্ষের ঘটনায় উভয়পক্ষের অন্তত ১০জন আহত হয়। আহতরা চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এদিকে জোড়া খুনের ঘটনায় শুক্রবার রাতে নিহত বজলু মালিথার ছেলে নাহিদ হোসেন বাদী হয়ে উজ্জল সরদারকে আসামী করে ৩২ জনের নামে দৌলতপুর থানায় জোড়া খুনের মামলা দায়ের করেছেন যার নং ৫৩, তারিখ ১৬ জন ২০২৩। এছাড়াও এ মামলায় অজ্ঞাত আসামি রয়েছে আরো ২২-২৫জন। এ মামলার এজারহার নামীয় ৬জন আসামিকে গ্রেফতারও করেছে পুলিশ। হত্যা মামলার অন্যতম প্রধান আসামি উজ্জল সরদারকে গ্রেফতারেও পুলিশ তৎপর রয়েছে। হত্যাকান্ড ঘটানোর পর থেকে সে পলাতক রয়েছে।
জোড়া খুনের বিষয়ে দৌলতপুর থানার ওসি মজিবুর রহমান জানান, ডবল মার্ডারের ঘটনায় নিহত বজলু মালিথার ছেলে নাহিদ হাসান বাদী হয়ে উজ্জল সরদারকে প্রধান আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন। মামলার এজাহার নামীয় ৬জন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বর্তমানে এলাকার পরিবেশ শান্ত রয়েছে। উজ্জল সরদারসহ মামলার অন্যান্য আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চলমান রয়েছে।