Home রাজনীতি দেশ শ্রীলঙ্কার মত দেউলিয়া হতে পারে–জি এম কাদের

দেশ শ্রীলঙ্কার মত দেউলিয়া হতে পারে–জি এম কাদের

44

মাহাবুবুর রহমান : জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় উপনেতা জনবন্ধু গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি বলেছেন, সারা বিশ্বই এখন একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। কিছুদিন আগে হঠাৎ করে দেখা গেল শ্রীলঙ্কার মতো একটি দেশ যাদের শিক্ষিতের হার ৯৫ শতাংশ। যারা অনেক আগেই মধ্যম আয়ের দেশ হয়েছে। তাদের রিজার্ভ প্রচুর ছিল। লোক সংখ্যা অনেক কম। মাত্র দুই কোটি। কিন্তু এই সমৃদ্ধশালী দেশ হঠাৎ করে দেউলিয়া হয়ে গেল। যা নিয়ে আমি কালকেও সংসদে কথা বলেছি।

তিনি বলেন শ্রীলংকা নিয়ে আমাদের চিন্তার বিষয় আছে, আমি মনে করি যে বিষয়টি সরকার যেভাবে দেখছেন, আরো বেশি গভীরভাবে দেখা প্রয়োজন। ইউক্রেন যুদ্ধ ও বিভিন্ন কারণে বিশ্ব বাজারে বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। আমি যতোটুকু খবর পেয়েছি, গত অর্থবছরে প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলার বাংলাদেশকে আমদানি করতে হয়েছে। সেই হিসাবে আমাদের আয় সংখ্যা অনেক কম।

আমাদের আয় কখনোই ৬০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি হতো না। এই যে ৪০০ বিলিয়ন ডলার আমাদের বেশি খরচ হচ্ছে, এটা কিন্তু আমাদের রিজার্ভ থেকে আস্তে আস্তে চলে যাবে। সামনের দিকে আরো অনিশ্চিত ভবিষ্যত আসতে পারে।

তিনি বলেন, আমরা অনেক বড় ঋণের বোঝা ঘাড়ে নিয়েছি। মেগা প্রজেক্ট এর নামে বিভিন্ন সূত্র থেকে বিভিন্ন ধরনের ঋণ গ্রহণ করেছি। অনেক সময় অনেক বেশি সুদে ঋণ নিয়েছি আমরা। অর্থনীতিবীদের বরাত দিয়ে জিএম কাদের বলেন, গত অর্থবছর পর্যন্ত বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ছিল সাড়ে চার লক্ষ কোটি টাকার মতো। সব মিলিয়ে সাড়ে এগার লক্ষ কোটি টাকার মতো বর্তমান সরকারের এখন ঋণ রয়েছে। এই বছরও দেশি-বিদেশি এক লক্ষ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার জন্য একটা প্রাক্কলন করা হয়েছে। এই ঋণের বোঝা ঘাড়ে নিয়ে আমরা যদি সামনের দিকে অগ্রসর হতে থাকি এবং এই খরচগুলো যখন আমাদের করতে হবে তখন বাংলাদেশের দেউলিয়া হতে খুব বেশি সময় লাগবে না।

মেগা প্রজেক্ট করে, লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা ঋণ করে, সেই ঋণের টাকা দিয়ে পোলাও খাওয়া দরকার ছিল না। আমাদের দরকার নিজের পায়ে দাঁড়ানোর। যাতে আমরা সঠিকভাবে চলতে পারি।

মেগা প্রকল্প প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, একসাথে পাঁচটা দশটা প্রকল্প হাতে নেওয়ার দরকার ছিল না। আমরা আস্তে আস্তে একটা একটা করে করতে পারতাম। যাতে করে আমরা সহনীয় অবস্থায় থাকতে পারতাম। এখন যে অবস্থা দাঁড়িয়েছে, তাতে শ্রীলঙ্কার মতো দেউলিয়া হতে বাংলাদেশের একটি আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

নিজ বক্তব্যে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশের নিম্নবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষ চরম সংকটে পড়েছে বলে উল্লেখ করেন জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতা। তিনি বলেন, এমনিতেই জনজীবন দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে একটি খারাপ পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। আমি সরকারকে ভর্তুকি দিয়ে রেশনিং সিস্টেম চালুর কথা বলেছিলাম। যা অতীতে দীর্ঘদিন আমাদের দেশে প্রচলিত ছিল। প্রচলিত থাকা সেই সিস্টেমটি আমাদের দেশে আবার পুন:র্জীবিত করা উচিত। পাশের দেশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের অনেক জায়গায় এই সিস্টেমটি এখনও প্রচলিত আছে। পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ এর দেশ পরিচালনার সময় গ্রামে রেশনিং ব্যবস্থা চালু করেছিলেন। অতিদরিদ্র, দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত তিন ভাগে ভাগ করে সরকারকে রেশনিং ব্যবস্থা চালু করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। এইভাবে প্রতিটি মহল্লায় ডিলারের মাধ্যমে যদি আমরা খাদ্যদ্রব্য সহায়তা করতে না পারি, বাংলাদেশ যেমন দেউলিয়া হতে পারে আবার দেশের মানুষও দুর্ভিক্ষ অবস্থায় পড়তে পারে। তিনি সরকারকে এ বিষয়ে দৃষ্টি দেওয়ার জন্য আহ্বান জানান। ১ কোটি পরিবারকে খাদ্য দেয়ার মধ্য দিয়ে সরকারের দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করছেন বলে এ সময় উল্লেখ করেন তিনি।

আজ বিকেলে জাতীয় পার্টি মহানগর দক্ষিণ এর নব-নির্বাচিত কমিটির পরিচিতি সভা ও ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতাকালে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় উপনেতা জনবন্ধু গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি এ কথা বলেন।

জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ এর সভাপতি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত পরিচিতি অনুষ্ঠান ও ইফতার মাহফিল পরিচালনা করে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান এর উপদেষ্টা ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ এর সাধারণ সম্পাদক জহিরুল আলম রুবেল।

আরো বক্তৃতা করেন জাতীয় পার্টি মহাসচিব মোঃ মুজিবুল হক চুন্নু এমপি।

উপস্থিত ছিলেন- জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ আব্দুল মান্নান, এডভোকেট মোঃ রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, নাজমা আক্তার এমপি, আলমগীর সিকদার লোটন, জহিরুল ইসলাম জহির, মাননীয় চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মনিরুল ইসলাম মিলন, হেনা খান পন্নী, মমতাজ উদ্দিন, ভাইস-চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান খান, শেখ মোঃ আলমগীর হোসেন, তারেক এ আদেল, যুগ্ম মহাসচিব মোঃ জসিম উদ্দিন, মোঃ বেলাল হোসেন, সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য নির্মল দাস, মোঃ হেলাল উদ্দিন, হুমায়ূন খান, মাখন সরকার, সুলতান মাহমুদ, এম এ রাজ্জাক খান, মাসুদুর রহমান মাসুম, জহিরুল ইসলাম মিন্টু, আহাদ ইউ চৌধুরী শাহিন, গোলাম মোস্তফা, মিজানুর রহমান মিনু, খোরশেদ আলম খুশু, যুগ্ম সম্পাদকমন্ডলী আকতার দেওয়ান, এস এম সোবহান, সুজন দে, সেকান্দার আলী সেরনিয়াবাদ , আজহারুল ইসলাম সরকার, শারমিন পারভীন লিজা, মাহমুদ আলম, সমরেশ মন্ডল মানিক, মীর সামশুল আলম লিপ্টন, মোনাজাত পরিচালনা করেন মাওলানা গোলাম কিবরিয়া।