Home রাজনীতি ‘দুর্নীতি-লুটপাট-মূল্যবৃদ্ধির যাঁতাকলে দুঃসহ হয়ে উঠেছে জীবন’: বাম জোট

‘দুর্নীতি-লুটপাট-মূল্যবৃদ্ধির যাঁতাকলে দুঃসহ হয়ে উঠেছে জীবন’: বাম জোট

20

স্টাফ রিপোটার: বাম গণতান্ত্রিক জোটের সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বাম জোটের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেছেন, সরকার একদলীয় ব্যবস্থা কায়েম করে দেশে কর্তৃত্ববাদী ফ্যাসিবাদী শাসন ব্যবস্থা আরও পাকাপোক্ত করতে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে। সরকারের আচরণ, পুলিশ প্রশাসনকে ব্যবহার করা আর নির্বাচনী পরিস্থিতিতে দেখা যায়, দেশের গণতন্ত্রহীনতায় নির্বাচন ব্যবস্থা আজ ভঙ্গুর, সুষ্ঠু নির্বাচন নির্বাসনে চলে গেছে। বর্তমান ও অতীতের ক্ষমতাসীনদের শুধুমাত্র ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতি, রাজনীতিকে ব্যবসায় পরিণত করা, মুক্তবাজারের লুটপাটের অর্থনীতির ধারায় চলমান বাজারি রাজনীতি এই সংকটকে আরো গভীর করে তুলেছে। এরা রাজনীতিকেও রাজনীতিবিদদের কাছ থেকে নির্বাসনে পাঠিয়েছে। দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতির ফলে লুণ্ঠণকারীরা আজ এসব দলের চালকের আসনে বসে আছে। রাজনীতির এই বৃত্ত ভাঙা না হলে অপরাজনীতি দূর করার পথ পরিষ্কার হবে না। এ অবস্থার পরিবর্তন ছাড়া জনগণের ন্যূনতম ভোটাধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করা যাবে না। বাংলাদেশের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ রক্ষায় ফ্যাসিবাদী সরকারকে হটিয়ে শোষণমূলক পুঁজিবাদী রাষ্ট্র ব্যবস্থার পরিবর্তন করেই মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনার বাংলাদেশ তথা সাম্যের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এই লক্ষ্যে সকল নীতিনিষ্ঠ বাম প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল, ব্যক্তি, সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি সমাবেশ গড়ে তুলতে হবে। শোষণমূলক ব্যবস্থা টিকিয়ে রেখে এবং শাসকগোষ্ঠীর কোন অংশের প্রতি নির্ভর করে অবস্থার পরিবর্তন করা যাবে না।
আজ (১৮ জানুয়ারি) বৃহস্পতিবার, সকাল ১১.৩০টায় পুরানা পল্টনস্থ মুক্তিভবনের মৈত্রী মিলনায়তনে বাম গণতান্ত্রিক জোটের সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাম জোটের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন সিপিবি’র সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)’র সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সম্পাদকম-লীর সদস্য আব্দুস সাত্তার, বাসদ (মার্কসবাদ)’র সমন্বয়ক মাসুদ রানা, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টির নির্বাহী সভাপতি আব্দুল আলী।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, সরকারের ইচ্ছা অনিচ্ছার উপরে নির্ভর করেছে গত জাতীয় নির্বাচনে হারা জেতা। এর জন্য ছাপ্পা ভোট, প্রশাসনিক কারসাজিসহ নানামুখী কারসাজি করা হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় সরকারি দলের প্রার্থী ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীদের নিজস্ব ভোট কেন্দ্রে কিছু মানুষ ভোট দিতে গেছে। এছাড়া অন্যান্য সেন্টারে দুই/তিন, পাঁচ, দশজন মানুষ ভোট দিতে গেছে। ভোট কেন্দ্রে মানুষ ছিল না। সময় সময়ে যেসব জটলা দেখা গেছে তা ছিল ভোটার না এমন জমা করে রাখা লোকদের লোক দেখানো সমাবেশ। এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সরকার শুধু বিরোধী রাজনৈতিক দল নয়, সরকারি দল আওয়ামী লীগ তাদের সমর্থক বা সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোকেও নিশ্চিহ্ন করার কাজটি সম্পন্ন করেছে। যা একদলীয় শাসনের দিকে যাত্রারই ইঙ্গিত বহন করে।
সংবাদ সম্মেলনে চলমান রাজনৈতিক সংকট দূর করতে একদলীয়, অগ্রহণযোগ্য, জনসমর্থনহীন প্রহসনের নির্বাচনে ঘোষিত সংসদ ভেঙে দিয়ে,অবিলম্বে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন, সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি প্রবর্তনসহ নির্বাচন ব্যবস্থার আমূল সংস্কারের দাবি জানানো হয়।
এছাড়া, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ, সিন্ডিকেট ভাঙ্গা, রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে বিকল্প বাজার ব্যবস্থা চালু এবং গ্রাম-শহরে রেশনিং ব্যবস্থা, ন্যায্যমূল্যে দোকান চালু, শ্রমিক কর্মচারীদের জন্য বাঁচার মতো জাতীয় ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ, কৃষি ফসলের ন্যায্য মূল্যসহ উৎপাদক ক্রেতা সমবায় গড়ে তোলা, প্রহসনের নির্বাচনের প্রার্থীদের হলফনামায় যে সম্পদ দেখানো হয়েছে তার প্রকৃত উৎস খুঁজে বের করা এবং এই সম্পদের বাইরে আরও সম্পদ আছে কিনা তা তদন্ত করে ওই তথ্য জনগণের কাছে তুলে ধরা, প্রকৃত হিসাব দিতে না পারা সম্পদ বাজেয়াপ্ত করাসহ অনৈতিকভাবে সম্পদ আহরণের সাথে জড়িতদের শাস্তি, লুটপাট দুর্নীতি বন্ধ, খেলাপী ঋণ উদ্ধার, পাচারকৃত টাকা ফেরত আনতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ ও এর সাথে জড়িতদের শাস্তি, শাসক বুর্জোয়া দলসমূহের নতজানু নীতির ফলে সাম্রাজ্যবাদী আধিপত্যবাদী শক্তির দেশের জাতীয় সম্পদ লুণ্ঠন ও ভূ-রাজনীতিতে বাংলাদেশকে তাদের স্বার্থে ব্যবহারের যে সুযোগ খুঁজছে সে বিষয়ে এবং দেশের রাজনৈতিক সংকটে বিরাজনীতিকরণের সব ধরনের অশুভ তৎপরতা সম্পর্কে দেশবাসীকে সতর্ক থাকা, সব ধরনের নিপীড়ন বন্ধ, গ্রেফতারকৃত সকল রাজবন্দীদের নিঃশর্ত মুক্তি এবং কালো আইন বাতিলেরও দাবি জানানো হয়।
এসব দাবিতে আগামী ২৭ জানুয়ারি ২০২৪ দেশব্যাপী বিক্ষোভ সমাবেশ, ২৮ জানুয়ারি থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশব্যাপী সভা-সমাবেশ, মতবিনিময় সভা এবং এসময় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, শ্রমিকদের জাতীয় ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণসহ জনজীবনের সংকট দূর, সম্পদ লুটপাটকারীদের শাস্তির দাবিতে দুদক, এনবিআর-এর সামনে অবস্থান, বিক্ষোভসহ নানা কর্মসূচি গ্রহণের কথা জানানো হয়।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, বিভিন্ন সময়ে দেশে দেশে কর্তৃত্ববাদী স্বৈরতান্ত্রিক ফ্যাসিবাদী সরকার নানা কায়দায় ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রেখেছে। কোনো কোনো দেশে দুই-তিন দশকও দীর্ঘ হয়েছে এমন দুঃশাসন। কিন্তু জনগণ জেগে ওঠার পর সেই শাসকরা আর টিকে থাকতে পারেনি। অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক- সব দিক থেকেই শোষিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। দুর্নীতি, লুটপাট, মূল্যবৃদ্ধির যাতাকলে দুঃসহ হয়ে উঠেছে জীবন। সার্বিক পরিস্থিতিতে মানুষ ভেতরে ভেতরে ফুঁসছে। নীতিনিষ্ঠ রাজনৈতিক সংগ্রামে আশার আলো দেখাতে পারলেই জনগণ জেগে উঠবে। গণজাগরণের সেই সম্ভাবনাকে রাজপথে বাস্তব রূপ দিতে বাম গণতান্ত্রিক জোট তার দায়িত্ব এবং অগ্রণী ভূমিকা পালন করে যাবে।
সংবাদ সম্মেলনে শাসক বুর্জোয়াশ্রেণির উভয় রাজনৈতিক বলয়ের গণবিরোধী ক্ষমতা কেন্দ্রিক রাজনীতি থেকে গণতন্ত্র ও রাজনীতিকে পুনরুদ্ধার এবং বাম গণতান্ত্রিক বিকল্প শক্তি সমাবেশ গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়।