Home মতামত তালেবানের আগমন ও ইলিশ মাছ

তালেবানের আগমন ও ইলিশ মাছ

50

আল আজম খান:
দুদিন আগের কথা। তখন ঝুপঝুপ বৃষ্টি।
আমার এক বন্ধু জানালো তার বাসায় ইলিশ পোলাও রান্না হয়েছে। দুপুরে তার বাসায় খেতে হবে। বন্ধুটির বাসার সামনে এসে রিকশাওয়ালাকে ব্রেক কষতে বল্লাম। পাশের দোকান থেকে ২ টা সেভেন আপ নিলাম।
ড্রইং রুমে সোফার ওপরে রাখা মুঠোফোনে রবি ঠাকুরের গান বাজছে। ‘বরিষ ধরা মাঝে শান্তির বারি….’। খেতে বসে নানান কথায় কথায় তালেবান প্রসঙ্গ এলো। বন্ধুটি বললো, তালেবানতো ধেয়ে আসছে। বললাম…. তো…?
সে বললো, সেখানকার মানুষজনের মত আমিও শঙ্কিত। বললাম, হোয়াই ই্যূ এফরেইড…. তুমি কেন ভয় পাচ্ছো? সে বললো, ভয় তো… আছেই। আমি বল্লাম আরেক টুকরো মাছ দাও। লেজটা দাও। হরিণের মাংস আছে সেখানে। জানো, সবাইকে খাইয়ে দাইয়ে আমার মা লেজটা ভাগে পেতেন। মায়ের দেখাদেখি আমিও লেজ খেতে শিখেছি। বন্ধুটি বললো, সে গল্প তুমি এর আগেও করেছো। এক কথা কতবার বলবে।
আমি তাকে বল্লাম, যাহোক, তোমার ভয়ের কিছু নেই। ওরা বাংলা মুল্লুকে আসবেনা। আর তাছাড়া তালেবানরা তো আমাদের দেশে আছেই। ওইযে শুনোনি, ওরা শ্লোগান দেয়, ‘আমরা সবাই তালেবান, বাংলা হবে আফগান’। তালেবানদের অনুসারীরা তো এখানে আছেই। তারা এখন সব জেহাদের জন্য সে দেশে চলে যাচ্ছে।
বন্ধুটি ভয়ার্ত কন্ঠে বললো, এই তালেবান ওই তালেবান এক হয়ে একদিন দেশটার বারোটা বাজাবে। তখন দেশের নাম পাল্টে ফেলবে। জাতীয় সংগীত পাল্টে ফেলবে। আমি হাসি দিতেই সে আরও সিরিয়াস হয়ে বললো, স্কুল কলেজ বন্ধ করে দিবে। পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান হতে দেবেনা। শহীদ মিনার ভেঙে চুরমার করবে। কৃষ্ণচূড়া, মাধবীলতা, রজনীগন্ধা, জুঁই, চামেলির নামও পাল্টে ফেলবে। দেখছোনা রামধনু কেমন রংধনু হয়ে গেছে….!
আমি বললাম, ভালই হবে…. টিভি, রেডিও, ফেইসবুক থাকবেনা। স্বামীর সেবা করবে। স্বামীর পায়ের নিচে বেহেশত। বন্ধুটি রাগত স্বরে বললো, স্বামীর নয়…. কথাটা হবে…মায়ের পায়ের নিচে বেহেশত। আর স্বামীর চরণ দুখানা দোজখে থাকলে…আমি সেখানে থাকবো কোন দুঃখে…! পরক্ষণেই বললো, তামাশা করছো? তামাশাই একদিন ফলে যাবে। মা-বোন দলে দলে টেইলারিং…. মানে দর্জির কাছে দৌঁড়ঝাপ দিবে।
আমি হতবাক হয়ে বললাম, দর্জির কাছে কেন!
সে বললো, কেন আবার… চোখের ওপর ফুটোওয়ালা ঢাউস একটা ছালার বস্তার মতো বোরকা পড়তে সবাই বাধ্য হবে। মনে নেই, জিয়ার আমলে ঘাড়ে-পিঠে-পেটে আলকাতরা লাগিয়ে দেয়া হয়েছিল। সেরকমটিও হতে পারে।
একনাগাড়ে কথাগুলো বলে তিন সেকেন্ড থামলো। এরপর তার চোখজোড়া ঈগলের মত বড় বড় করে আমার দিকে তাকাল। বললো, ওরা তোমার সাধের ইলিশ মাছের নামটাও বদলে দেবে। ওই যে… বদলে দাও বদলে ফেল… ওরাই তখন এমন শ্লোগানে উন্মাদনায় থাকবে। আর আমরা তখন আফগানিস্তানের সাধারণ মানুষের মত মরবো….!
ইলিশ মাছের একটি কাঁটা কখন যে আমার গলায় আটকেছে, কালো ঢাউস বিড়ালটি ডাইনিং টেবিলের এক কোনে বসে আছে। সেটির নজর ইলিশ পোলাওয়ের পেয়ালার দিকে। আমি ভাবছি…. তালেবানের আগমন ঘটলে ইলিশ মাছের নাম ওরা কি রাখতে পারে…..?-লেখক: একজন সমাজকর্মী।