Home শিক্ষা ও ক্যাম্পাস তরুণ প্রজন্মকে বৈষম্য ও আধিপত্যবিরোধী সচেতন নাগরিক হতে হবে

তরুণ প্রজন্মকে বৈষম্য ও আধিপত্যবিরোধী সচেতন নাগরিক হতে হবে

30

সেমিনারে শিক্ষাবিদদের আহ্বান

বিশেষ প্রতিনিধি: তরুণ প্রজন্মকে বৈষম্য ও আধিপত্যবিরোধী সচেতন নাগরিক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষাবিদরা। তারা বলেছেন, সাম্প্রদায়িকতা, অসহিষ্ণুতা ও সহিংসতার বিরুদ্ধে জনসচেতনতা সৃষ্টি ও জনমত গড়ে তোলা খুবই জরুরি। যুবসমাজ এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
‘জেন্ডার সমতা ও সমনাগরিকত্ব প্রতিষ্ঠায় গণতান্ত্রিক ও ইহজাগতিক মূল্যবোধ’ বিষয়ক সেমিনারে অংশ নিয়ে তারা এ আহ্বান জানান। মঙ্গলবার জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয়ে লোকপ্রশাসন বিভাগ ও বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ (বিএনপিএস) আয়োজিত সেমিনারে সভাপতিত্বে করেন বিএনপিএস’র নির্বাহী পরিচালক বীর মুক্তিযোদ্ধা রোকেয়া কবীর। আলোচনায় অংশ নেন জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন কবির, লোকপ্রশাসন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শামিমা আখতার এবং গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রভাষক বর্ণনা ভৌমিক, জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের চেয়ারম্যান আসমা বিনতে ইকবাল। সেমিনারটির সঞ্চালনা করেন বিএনপিএস’র পরিচালক শাহনাজ বেগম সুমী।
সেমিনারে রোকেয়া কবীর বলেন, মুক্তিযুদ্ধকালে গঠিত মুজিবনগর সরকারের স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণার মূলনীতি ছিল সমতা, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার। সংবিধান রাষ্ট্রের সকল নাগরিকের সমান মর্যাদা দিয়েছে এবং ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, লিঙ্গ বা জন্মস্থানের কারণে রাষ্ট্র কারো প্রতি কোনো বৈষম্য করবে না বলে অঙ্গীকার করেছে। কিন্তুস্বাধীনতার অর্ধশত বছর পরেও ঐতিহ্যগতভাবে সম্প্রীতিপূর্ণ এই দেশটিতে ধর্মের ভিত্তিতে মানুষে-মানুষে বিভাজন সৃষ্টি করে বিদ্যমান পুরুষতান্ত্রিক বৈষম্যমূলক ব্যবস্থাকে আরো জোরদার করা হচ্ছে। ধর্মকে সুকৌশলে রাজনীতিতে ব্যবহার করা হচ্ছে। একইসঙ্গে নারীদের পিছিয়ে রাখার জন্য ধর্মকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এই উদ্বেগজনক পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সকলকে সচেষ্ট হতে হবে।
অধ্যাপক কামালউদ্দিন কবির বলেন, বৈষম্য ও অসমতা দুর করতে উপনিবেশিক সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসে আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে হবে। তাহলেই আমরা উপলব্ধি করতে পারবো, সমতা কেন জরুরি। এজন্য ইতিহাস পাঠ করতে হবে। নিজস্ব ইতিহাস পাঠের মধ্যদিয়ে জনগণকে সচেতন করতে হবে। তাহলে জেন্ডার সমতা নিশ্চিত করা সম্ভব।
শামিমা আখতার বলেন, নারীর অসমতার অনেকগুলো দিক থেকে বাংলাদেশ এগিয়েছে তবুও সমতা আসেনি। টেকসই উন্নয়নের জন্য নারী-পুরুষের সমতা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। সমতা নিশ্চিত করতে চাইলে সবার আগে আমাদের নিজেদের মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে। সংবিধানের আলোকে আইনে ফাঁকফোকর বের করতে হবে এবং সে অনুযায়ী আমাদের করণীয় নির্ধারণ করতে হবে।
বর্ণনা ভৌমিক বলেন, নারী-পুরুষ সমতার ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। গণমাধ্যম যদি নারীর প্রতি বৈষম্য ও নারীর সমানাধিকারের বিষয়টি সঠিকভাবে উপস্থাপন করে তাহলে তা সমাজের দৃষ্টিভঙ্গী পরিবর্তনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। এটি দীর্ঘমেয়াদে নারীর অধিকারের পক্ষে রাষ্ট্রীয় নীতিমালায় প্রণয়নে তা সহায়ক হবে। ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ নির্বিশেষে দেশের সকল নাগরিকের সমঅধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
আসমা বিনতে ইকবাল বলেন, প্রাচীনকাল থেকে সভ্যতার সৌধ নির্মাণে নারী-পুরুষ সমানতালে কাজ করলেও এখনো নারীরা তার প্রাপ্য সম্মান পায়নি। নারী-পুরুষের মধ্যকার বৈষম্যের কারণ হচ্ছে পরিবার। অধিকার নিশ্চিত করতে নারীকে নারী হিসেবে চিন্তা না করে, মানুষ হিসেবে চিন্তা করতে হবে।