Home রাজনীতি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না: মির্জা ফখরুল

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না: মির্জা ফখরুল

26

স্টাফ রিপোটার: বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকারের মন্ত্রী বলেছে যে, চমৎকার বাজেট হয়েছে। অথচ আজকে নিয়ন্ত্রিত মিডিয়া বলছে যে, সাধারণ মানুষের মাঝে স্বস্তি নেই। নিত্যপণ্যের দামের যে ঊর্ধ্বগতি, চলমান যে সঙ্কট সেখান থেকে বেরিয়ে আসার কোনো রুপরেখা বাজেটে নেই। টাকা কোত্থেকে আসবে? কিভাবে আসবে সেটাও বলা নেই। এটাই হলো এই সরকারের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য।

তিনি বলেন, যারা ভিক্ষুক তাদেরকেও নাকি দুই হাজার টাকা আয়কর করে দিতে হবে। এভাবে মানুষকে নি:স্ব করে দিয়ে ক্ষমতাসীনরা মেগা প্রজেক্টের মাধ্যমে নিজেদের উন্নয়ন করবে। আজকে চাল-ডাল-তেল-লবন ও পেয়াজের দাম এমনভাবে বেড়েছে যে কঠিন অবস্থা। গরিব মানুষ বলছে সামনে কোরবানি আমারও তো সাধ হয় যে, গরুর গোশত রান্না করবো। কিন্তু আদা কিনবে কোত্থেকে? সুতরাং এই সরকারকে ক্ষমতা থেকে হটাতে হবে। সেজন্য নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া দেশে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না।

সরকারকে বলবো- অনেক হয়েছে আপনারা সরে যান। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিয়ে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন। না হলে দেশের মানুষ জানে কিভাবে বিদায় করতে হয়।

শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রয়াত জিয়াউর রহমানের ৪২তম শাহাদাৎবার্ষিকী উপলক্ষ্যে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ (বিএসপিপি)। অনুষ্ঠানের জিয়াউর রহমানসহ তার পরিবার এবং দেশবাসীর জন্য বিশেষ দোয়া করা হয়।

জিয়াউর রহমান প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ৪ বছরে তিনি দেশে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছিলেন। তিনি জাতিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন। আজকে আমি স্বাধীনতা যুদ্ধের সবাইকে শ্রদ্ধা জানাতে চাই। কাউকে খাটো করতে চাইনা। কিন্তু আজকে যেই ব্যক্তির স্বাধীনতার ঘোষণার মাধ্যমে দেশ স্বাধীন হলো সেই ব্যক্তিকে খলনায়ক বানানোর চেষ্টা করা হয়। এজন্য খুবই কষ্ট লাগে। যত কিছুই করুক কিছুই আসে যায় না। শহীদ জিয়াউর রহমানকে জনগণের হৃদয় থেকে মুছে দেওয়া যাবে না।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, শহীদ জিয়ার যে সম্মোহনী শক্তি ছিল তা নতুন প্রজন্মের অনেকেই জানে না। তিনি ছিলেন ক্ষণজন্মা ও বিপ্লবী। তিনি সমাজকে বদলে দিতে চেয়েছিলেন। বেঁচে থাকলে অনেক আগেই বাংলাদেশকে উঁচু স্থানে নিয়ে যেতেন। যেমনটি সাবেক মার্কিন কূটনীতিক উইলিয়াম বি মাইলাম বলেছেন, ‘জিয়াউর রহমান ১৯৮১ সালে মারা না গিয়ে যদি ১৯৭৫ সালে মারা যেতেন তাহলে বাংলাদেশের ভাগ্যে কী ঘটতো আমি জানিনা’। এটা লাইবেরিয়ার মতো একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হতো।

মির্জা ফখরুল বলেন, জিয়াউর রহমান আবারও ১৯৭৫ সালের নভেম্বরে দেশের ক্রান্তিকাল তথা ঘোর সঙ্কটে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি সিপাহীদেরকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। তিনি স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন ঐক্যবদ্ধভাবে বাংলাদেশকে নতুনভাবে বিনির্মাণ করতে হবে। তিনি মুক্তবাজার অর্থনীতির বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। সেজন্যই তিনি গ্রামে-গঞ্জে, নদীতে-খালে ছুটে বেরিয়েছেন। প্রত্যেক জেলায় জেলায় ঘুরেছেন। তিনি সংশ্লিষ্ট এলাকার সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপ করে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ নিতেন। এই হলেন জিয়াউর রহমান। গোটা বিশ^ তাকে এমার্জিং লিডার হিসেবে পরিচিতি দিয়েছিলো। জিয়াউর রহমান সম্পর্কে অল্পসময়ে বলে শেষ করা যাবে না। আজকে যেই জিয়াউর রহমান বাংলাদেশকে তৈরি করেছিলেন। সেই জিয়াউর রহমানের নাম দেশের মানুষের মনে-মগজে গাঁথা থাকবে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ক্ষমতাসীনরা সবসময় বাংলাদেশের মানুষের বিরুদ্ধে ও বিপক্ষে কাজ করেছে। দেশের কিছুই অবশিষ্ট নেই। সবকিছুই তারা ধ্বংস করেছে। গণতান্ত্রিক ও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ ফিরিয়ে আনতে হবে। সেজন্য আমাদেরকে লড়াই-সংগ্রাম করতে হচ্ছে। আগামীতেও লড়াই হবে। পেশাজীবীসহ সবাইকে আমি যার যার অবস্থান থেকে সোচ্চার হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানাবো। দেশ ও জাতিকে রক্ষা করতে হলে এর বিকল্প নেই।

বিএসপিপির আহ্বায়ক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেনের সভাপতিত্বে ও সদস্যসচিব কাদের গণি চৌধুরীর পরিচালনায় আরও বক্তব্য দেন বক্তব্য দেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. সিরাজউদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক ড. তাজমেরি এসএ ইসলাম, অধ্যাপক ডা. আব্দুল কুদ্দুস, ডা. একেএম আজিজুল হক, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের সাবেক প্রোভিসি অধ্যাপক ড. আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, আইনের অধ্যাপক ড. বোরহান উদ্দিন খান, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম রিজু, ডা. রফিকুল ইসলাম, ঢাবি সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক লুৎফর রহমান, কৃষিবিদ গোলাম হাফিজ কেনেডি, শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোটের অধ্যক্ষ সেলিম ভুইয়া, জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. শামসুল আলম সেলিম, অধ্যাপক ড. নূরুল ইসলাম, অধ্যাপক ড. মো. নজরুল ইসলাম এবং উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের খান মোহাম্মদ মনোয়ারুল ইসলাম (শিমুল) প্রমুখ।