Home সারাদেশ ঢাকা-৫ আসনে পরিচ্ছন্ন ইমেজের তরুণ নেতৃত্বে আস্থা আ. লীগের

ঢাকা-৫ আসনে পরিচ্ছন্ন ইমেজের তরুণ নেতৃত্বে আস্থা আ. লীগের

92

স্টাফ রিপোটার: রাজধানীর অন্যতম প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত ঢাকা ৫-আসনে বিকল্প খুঁজছে আওয়ামী লীগ।
প্রয়াত চারবারের এমপি হাবিবুর রহমান মোল্লার মৃত্যুর পর উপনির্বাচনে ১০ শতাংশ ভোট পেয়ে এমপি নির্বাচিত হন কাজী মনিরুল ইসলাম মনু। তিনি গত তিন বছরে দলীয় নেতা-কর্মীদের কাছে টানতে পারেননি। উল্টো বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের নানাভাবে নির্যাতন -নিপীড়ন চালিয়েছেন। তাই এবার
আসনটিতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব পেতে পারেন নতুন কেউ। বিরোধী রাজনৈতিক দলের আন্দোলন-সংগ্রাম মোকাবিলায় তরুণদের কাছে জনপ্রিয়, পরীক্ষিত ছাত্রলীগ নেতা এবং সাংগঠনিক সক্ষমতার প্রমাণ আছে এমন কাউকে দলীয় সমর্থন দিতে পারে আওয়ামী লীগ। দলীয় সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।
ঢাকা-৫ জাতীয় সংসদের ১৭৮ নম্বর আসন। যাত্রাবাড়ী, ডেমরা ও কদমতলী থানার কিছু অংশ নিয়ে আসনটি গঠিত। ঢাকার প্রবেশমুখে হওয়ায় আসনটি নিয়ে দলের আগ্রহ তুলনামূলক বেশি। ফলে পরীক্ষিত, পরিষ্কার ভাবমূর্তির কাউকে এই আসনে দেয়া হতে পারে নৌকার দায়িত্ব।
১৪টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত ঢাকা-৫ আসনে ৪ লাখ ৭১ হাজার ১২৯ জন ভোটারের মধ্যে ২ লাখ ৪১ হাজার ৪৬৪ জন পুরুষ এবং ২ লাখ ২৯ হাজার ৬৬৫ জন নারী। এখানে ২০০৮ সাল থেকে টানা তিনবার নির্বাচিত হয়ে সংসদ সদস্য ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান মোল্লা। ২০২০ সালে তার মৃত্যুর পর আসনটিতে উপ-নির্বাচনে জয়ী হয়ে সংসদ সদস্য হন যাত্রাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি কাজী মনিরুল ইসলাম মনু।
তবে এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন স্থানের মতো এখানেও সংসদ সদস্যের সঙ্গে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দূরত্ব রয়েছে। বিভিন্ন সময় নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের কারণে তিনি সমালোচিত হয়েছেন। স্থানীয় নেতাকর্মীরা এমন একজন নৌকার কাণ্ডারি চাইছেন, যিনি দলীয় নেতাকর্মীদের আগলে রেখে জনগণের জন্য নিজেকে উজাড় করে দেবেন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে উল্লেখিত আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চান এমন নেতাদের মধ্যে রয়েছেন, ঢাকা দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি, ছাত্রলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি কামরুল হাসান রিপন, প্রয়াত হাবিবুর রহমান মোল্লার বড় ছেলে মশিউর রহমান মোল্লা সজল, যাত্রাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হারুন-আর-রশিদ মুন্না।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-৫ নির্বাচনী এলাকায় মনোনয়ন দেয়ার ক্ষেত্রে ফ্রেশ নেতৃত্ব চাইছে কেন্দ্র। যে কারণে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য এখন মনোনয়ন বোর্ডের নেতাদের টেবিলে। এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার মনোনয়ন বোর্ডের প্রথম সভায় রংপুরের ৩৩টি ও রাজশাহীর ৩৯টি আসনের মনোনয়ন চূড়ান্ত হয়েছে। শুক্রবারও আরো দুটি বিভাগের মনোনয়ন চূড়ান্ত করেছে আওয়ামী লীগ। আগামীকাল রোববার ঢাকা বিভাগের মনোনয়নও চূড়ান্ত হবে। এদিন সকাল ১০ টায় দলীয়প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে সকল মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ডেকেছেন। এদিন তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন শেখ হাসিনা।
তবে ঢাকা-৫ আসনের সেক্ষেত্রে স্থান বিবেচনায় ঢাকার এই আসনটিকে আলাদা গুরুত্ব দিচ্ছে দলের হাই কমান্ড।
প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, চারটি বিভাগে মনোনয়ন চূড়ান্ত করেছি। শনিবার না হলেও রোববারের মধ্যে ৩০০ আসনের প্রার্থীতা ঘোষণা করতে পারব। নতুন এসেছে, কিছু বাদও পড়েছে। উইনেবল (সম্ভাব্য জয়ী) প্রার্থী আমরা বাদ দেইনি।
তবে এলাকার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মনোনয়ন পাওয়ার দৌড়ে যেসব নেতা আলোচিত, তাদের প্রায় সবাই নেতিবাচক কর্মকাণ্ডে কখনো না কখনো শিরোনাম হয়েছেন। চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, সরকারি-বেসরকারি ভুসম্পত্তি, রাস্তা-জলাশয় দখল, স্কুল কলেজের অর্থ লোপাট, টেন্ডারবাজি, পরিবহন চাঁদাবাজি, এমনকি নদী দখলের মতো নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ আছে অনেকের বিরুদ্ধে। এসব দিক বিবেচনায় স্থানীয় নেতাকর্মীদের কাছে কামরুল হাসান রিপন অনেকটাই এগিয়ে আছেন বলে জানা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় ছাত্রলীগের দায়িত্বে রয়েছেন একজন বলেন, এলাকার তরুণদের কাছে কামরুল ভাইয়ের ক্লিন ইমেজ রয়েছে। যোগ্য সংগঠক, সাবেক তুখোড় ছাত্রলীগের নেতা তিনি। এক এগারোতে তিনি দলের জন্য সাহসী ভূমিকা রেখেছেন। ওই সময়ে আওয়ামী লীগের সভাপতি যখন গ্রেপ্তার হয়ে পুরোনো ঢাকার আদালতে যান, তখন কামরুল হাসান রিপন ভাইয়ের নেতৃত্বে আমরা এই গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ জানিয়েছি। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তার নেতৃত্বেই রাজপথে ছিল।
এরই মধ্যে ঢাকা-৫ আসনে দলীয় মনোনয়ন ফরম কিনে জমা দিয়েছেন সাবেক এই ছাত্রলীগ নেতা। মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে প্রত্যাশার কথা জানিয়ে কামরুল হাসান রিপন বলেন, এই এলাকায় আমি ছোটবেলা থেকে বেড়ে উঠেছি। এলাকার সংকট সম্ভাবনার কথা জানি। মনোনয়ন পেলে এই এলাকার উন্নয়নে নিজেকে সপে দিতে পারলে ধন্য হবো।
করোনাকালে এলাকার মানুষের জন্য জীবনের মায়া ত্যাগ করে ছুটে যাওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, প্রায় ত্রিশ হাজার মানুষকে নিজের হাতে খাদ্য সহায়তা তুলে দিয়েছি। স্বাস্থ্য সামগ্রী দিয়েছি। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নির্দেশে মানুষের পাশে থেকেছি, ভবিষ্যতেও থাকবো ইনশাল্লাহ।
মনোনয়ন পেলে এলাকার মানুষ আমাকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করবে সেই আত্মবিশ্বাস আমার রয়েছে। বলেন সাবেক এই ছাত্রলীগ নেতা।
দলের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া জানান, গত চার দিনে তিনশ আসনের বিপরীতে ৩ হাজার ৩৬২টি মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে। যার মূল্য ১৬ কোটি ৮১ লাখ টাকা। এর মধ্যে ঢাকায় ৭৩০টি, চট্রগ্রামে ৬৫৯টি, রাজশাহীতে ৪০৯টি, খুলনায় ৪১৬টি, রংপুরে ৩০২টি, ময়মনসিংহে ২৯৫টি, সিলেটে ১৭২টি, বরিশালে ২৫৮টি ফরম বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়া অনলাইনে ১২১টি ফরম বিক্রি হয়েছে।