Home রাজনীতি ঢাকায় নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য বিভ্রান্তিকর, মিথ্যা: রিজভী

ঢাকায় নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য বিভ্রান্তিকর, মিথ্যা: রিজভী

17

স্টাফ রিপোটার: বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, “ঢাকায় নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার মান্টিটস্কি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাশিয়ার ভূমিকা নিয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল—বিএনপির বক্তব্যকে ‘বিভ্রান্তিকর, মিথ্যা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন বলে আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। তিনি আরও দাবি করেন, নির্বাচনে বাংলাদেশের মানুষ সরকারকে নির্বাচিত করেছে এবং ৪১ দশমিক ৮ শতাংশ মানুষ ভোট দিয়েছে, যাদের অধিকাংশ ভোট দিয়েছে আওয়ামী লীগকে। শুক্রবার (০২ ফেব্রুয়ারী) গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে একথা বলেন তিনি।

তিনি বলেন, তাঁর এই অনাকাঙ্খিত, অনভিপ্রেত ও আওয়ামীসূলভ বক্তব্য বাংলাদেশের জনগণের গণতান্ত্রিক অনুভূতিতে আঘাত করেছে। আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক বলয়ের বাইরের সকল বাংলাদেশি নাগরিক আজ, নিজেদের অধিকার ও স্বাধীনতা হারিয়ে, নিজ দেশে পরাধীন। গত ১৫ বছর ধরে, গণবিদ্বেষী সরকার যে দুর্নীতি—দুঃশাসন ও দমন—দুর্বৃত্তায়ন চালিয়েছে, সমাজের প্রতিটি শ্রেণী ও পেশার মানুষ তাতে বৈষম্য, অবিচার ও নিপীড়ণের শিকার হয়েছেন।

রিজভী আরও বলেন, এটি স্পষ্টত প্রমাণিত, ৭ জানুয়ারি যে প্রহসনমূলক ডামি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তার উদ্দেশ্য জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা বা আকাঙ্খার প্রতিফলন ছিল না। বরং, নির্বাচনের নামে এটি ছিল জাতির সঙ্গে একটি সহিংস প্রতারণা, যার উদ্দেশ্য নিশিরাতের ভোটে অবৈধভাবে, অনৈতিকভাবে ও অসাংবিধানিকভাবে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের স্বার্থবাদী, কতৃর্ত্ববাদী অনুগত প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিদের সহায়তা ও সমর্থনে কুক্ষিগত ক্ষমতার মেয়াদ বৃদ্ধি করা।

বিএনপির এই নেতা বলেন, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের প্রহসনমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে, ভোট ডাকাতির অভিনব সব পন্থা অবলম্বন করে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যে কলঙ্কিত ইতিহাস তৈরি করে তারই ধারাবাহিকতায় ডামি প্রার্থী, ডামি দল, ডামি ভোটার ও ডামি পর্যবেক্ষকদের সমন্বয়ে ডামি নির্বাচনের নাটক মঞ্চস্থ হয়েছে ২০২৪ সালে ডামি নির্বাচন।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং এর অংশ হিসেবে, যে ভোট পড়েছে বলে ফুলিয়ে—ফাঁপিয়ে মিথ্যা ও বানোয়াট দাবি করেছে নির্বাচন কমিশন, তার বিপরীতে, সারা দেশের ভোটকেন্দ্রগুলো থেকে প্রাপ্ত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিও, তথা প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ী, সত্যিকার অর্থে শতকরা ৫ ভাগেরও কম ভোটার ভোটকেন্দ্রে গিয়েছেন। ভাগ—বাঁটোয়ারার এই কারসাজির নির্বাচনকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যানের মাধ্যমে, বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতার রক্ষাকবচ গণতন্ত্রের প্রতি আস্থাশীল জনগণ প্রমাণ করেছে, বিএনপি ও ৬২টি গণতন্ত্রমনা রাজনৈতিক দলের নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত সঠিক তথা গণআকাঙ্খার প্রতিফলন।

তিনি আরও বলেছেন, শীর্ষ নেতৃত্ব সহ প্রায় ২৫ হাজার বিরোধী দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের গ্রেফতারে তথাকথিত এই নির্বাচনের পূর্বনির্ধারিত ফলাফল ঘোষণার পর, জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনার হতাশা পোষণ করেন। সকল বাংলাদেশিদের ভবিষ্যত হুমকির মুখে মন্তব্য করে তিনি আহ্বান জানান, বাংলাদেশের বর্তমান গতিপথ পরিবর্তন করে, একটি সত্যিকারের অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরির। একই দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে, বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, বিশেষত সব বড় রাজনৈতিক দল অংশ না নেওয়ায়। সেই সঙ্গে, সকল নির্বাচনি অনিয়মের সময়োপযোগী ও পূর্ণাঙ্গ তদন্ত নিশ্চিত করার আহ্বানও জানায় তারা।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও রাশিয়ার মধ্যে দীর্ঘদিনের সৌহাদ্যর্পূর্ণ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ব্যবসা, বাণিজ্য, জ্ঞান ও অন্যান্য দ্বিপাক্ষিক স্বার্থের ভিত্তিতে। বিএনপি বিশ্বাস করে, দুই দেশের জনগণের মধ্যে বন্ধুত্বের সেতুবন্ধনেই দীর্ঘমেয়াদি কূটনৈতিক সাফল্য নিহিত। তাই বিএনপি রাশিয়াকে আহ্বান করছে, বাংলাদেশের জনগণের অভিপ্রায় ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়, তথা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, স্বাধীনতার সংকল্প ও মহান আত্মত্যাগের প্রতি উপযুক্ত সম্মান প্রদর্শনের জন্য।”