Home রাজনীতি ঢাকার বাস ভাড়ার চেয়ে মেট্রোরেলের ভাড়া দ্বিগুণ: বিএনপি

ঢাকার বাস ভাড়ার চেয়ে মেট্রোরেলের ভাড়া দ্বিগুণ: বিএনপি

33

স্টাফ রিপোটার: ঢাকায় মেট্রোরেলে ভাড়া সর্বনিম্ন ২০ টাকা এবং উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ কিলোমিটারের দূরুত্ব ১০০ টাকা নির্ধারণের প্রতিবাদ জানিয়েছে বিএনপি। ঢাকা মেট্রোরেলের এই ভাড়া ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে দুই থেকে পাঁচ গুন বলে দাবি করেছে দলটি।

জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভার সিদ্ধান্ত জানাতে আজ মঙ্গলবার দুপুরে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান এই প্রতিবাদ জানান।

তিনি বলেন, ‘‘দলের স্থায়ী কমিটি মেট্রোরেল আইন ও বিধিমালা লঙ্ঘন করে মেট্রোরেলের ভাড়া সর্বনিম্ন ২০ টাকা এবং উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ কিলোমিটারের ভাড়া ১০০ টাকা নির্ধারণের প্রতিবাদ জানায়।’’

‘‘ঢাকায় মেট্রোরেলের এই ভাড়ার পরিমান শুধু দেশের বেসরকারি বাসভাড়ার দ্বিগুন নয়, ভারত ও পাকিস্তানের বিভিন্ন নগরীর মেট্রোরেলের ভাড়ার চেয়ে ২ থেকে ৫ গুন বেশি।ঢাকা মেট্রোরেলের সর্বনিম্ন ভাড়া দিল্লী, মুম্বাই, চেন্নাই ও লাহোরের ভাড়ার প্রায় দ্বিগুন এবং কলকাতার ৩ গুন। ঢাকার ২০ কিলো মিটারের ভাড়া কলকাতার ৪ গুন, নয়া দিল্লী, মুম্বাই ও চেন্নাইয়ের ৩ গুন এবং লাহোরের ভাড়ার চেয়ে সাড়ে ৫ গুন বেশি।”

নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘‘মেট্রোরেলের ও বিধিমালায় বলা হয়েছিলো যে, ঢাকা মহানগরের জনগণের যাতায়াত নির্ভিগ্ন করার জন্য, সহজসাধ্য করার জন্য, সুলভ করার জন্য জনগণের টাকায় এই প্রকল্প করা হচ্ছে। জনগণের টাকা ব্যয় করা হয়েছে এবং বার বার বাড়িয়ে অনেক বেশি ব্যয় করা হয়েছে।”

‘‘কিন্তু তার পরে দেখছি, আমরা ঢাকার বাসভাড়া যা তার চেয়ে প্রায় দ্বিগুন হয়েছে এই মেট্রোরেলের ভাড়া। আর বলা হচ্ছে যে, এটা আরামদায়ক হবে, এটা দ্রুত হবে এবং অন্যান্য দেশের সঙ্গে এটা তুলনীয় হবে এটার সুযোগ-সুবিধা ও ভাড়া।”

‘অতিরিক্ত টাকা কেনো দেবে জনগণ?’

নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘‘আমরা তুলনামূলক চিত্র আপনাদের সামনে উপস্থাপন করেছি যে, আমাদের দেশে বরঞ্চ মেট্রোরেলের ভাড়া কম হওয়া উচিত যদি এটা আন্ডার গ্রাউন্ড হতো এর এয়ারকন্ডিশনিং খরচ আরো বেশি হতো। কিন্তু আমাদের এটা(মেট্রোরেল) আন্ডার গ্রাউন্ড না।”

‘‘তারপরেও দেখা যাচ্ছে যে, কলকাতা, দিল্লী, মোম্বাই এবং লাহোর সব জায়গার চেয়ে আমাদের এখানে ভাড়ার পরিমান অনেক বেশি, কয়েকগুন বেশি। এই অতিরিক্ত টাকা জনগণের পকেট থেকে যাবে।”

তিনি বলেন, ‘‘যেহেতু তারা(সরকার) দুর্নীতি-অনাচার করে অধিক ব্যয় করেছে বলেই সম্ভবত এটা উসুল করার জন্য এটা করেছে। তাদের অপরাধের দায় জনগণ কেনো নেবে?জনগণ এই অতিরিক্ত ব্যয়ে আগ্রহী নয়।”

‘‘আমরা সেই জন্য মনে করি, জনগণের যেটা প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিলো তাদের যাতায়াত সহজ এবং সুলভ করা হবে সেটা যেন করা হয়।”

‘জনগণের দ্বারা নির্বাচিত এবং জনগণের কাছে দায়বদ্ধ গণতান্ত্রিক সরকার হলে ক্ষমতাসীন সরকার এমন গণবিরোধী সিদ্ধান্ত নিতে পারতো না বলেই গণবিরোধী সরকারের পতন ও গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা এত জরুরী হয়ে পড়েছে বলে মন্তব্য করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটি বলে জানান তিনি।

সোমবার রাতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক হয়।

‘ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রসঙ্গে’

নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘‘আমদানি সংকটের কারণে যখন দেশের দুইটি এলএনজি টার্মিনালের সরবারহ সক্ষমতা নেমেছে ৫০ শতাংশের নিচে তখন সরকারের আরো ২টি নতুন ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের পরিকল্পনার মাধ্যমে জ্বালানির মতো কৌশলগত পণ্য নিয়ে দুর্নীতির অপচেষ্টার তীব্র প্রতি জানিয়েছে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে। সভায় এমন গণবিরোধী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকার জোর দাবিও জানানো হয়।”

‘ড. ইনামুল হক নাজেহালের নিন্দা’

নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘‘গত ২৪ ডিসেম্বর শাহবাগে সরকারের দুর্নীতি-ভোটচুরি-গণবিরোধী কাজের বিরুদ্ধে প্রচারনা চালাতে গিয়ে বিশিষ্ট পানিবিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী বীরমুক্তিযোদ্ধা ড. ইনামুল হককে ক্ষমতাসীন দলের কর্মীরা শারীরিকভাবে নাজেহাল করেছে বলে যে খবর বেরিয়েছে আমরা তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এর সঙ্গে দায়ী যারা তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।”

‘‘একই সাথে আমরা টকশো উপস্থাপক জিল্লুর রহমান তাকে সরকার প্রতিপক্ষ মনে করে তার বাড়িতে যে পুলিশি অভিযান চালিয়েছে তারও নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

একই সঙ্গে গতরাতে দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট রবিউল ইসলামকে ঢাকায় তার বাসভবন থেকে বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেফতার, চুয়াডাঙ্গা বিএনপির সদস্য সচিব শরীফ উজ্জামানসহ ১৫ জন এবং পঞ্চগড়ে ২৩জন নেতা-কর্মীকে গ্রেফতারের ঘটনারও নিন্দা জানিয়ে তাদের গ্রেফতারকৃতদের মুক্তি দাবি করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু ও ভারপ্রাপ্ত দফতর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স উপস্থিত ছিলেন।