Home জাতীয় ড্যাপের কারণে নির্মাণ শিল্প হুমকির মুখে

ড্যাপের কারণে নির্মাণ শিল্প হুমকির মুখে

47

ডেস্ক রিপোর্ট: ডিটেইল এরিয়া প্লান (ড্যাপ) গেজেট নিয়ে নির্মাণ শিল্পে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। প্রস্তাবিত ড্যাপের গেজেট হলে পূর্বে রাজউকের নির্মাণ বিধিমালা ও নতুন নির্মাণ বিধিমালা অনুযায়ী জমির মালিকদের মধ্যে স্থাপনা নির্মাণে দেখা দিবে বৈষম্য। পাশাপাশি কমবে জমির দাম। ড্যাপ বাস্তবায়ন হলে ফ্ল্যাটের দাম বেড়ে যাবে প্রায় ৫০ ভাগ। নির্মাণ শিল্প হুমকির মুখে পড়লে এর সাথে জড়িত লিংকেজ শিল্পও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

এর ফলে রাজধানীতে বাসা ভাড়া বাড়বে অস্বাভাবিক হারে। নগরবিদরা বলছেন, ড্যাপে যেভাবে ফার নির্ধারণ করা হয়েছে, এতে ভবিষ্যতে মূল শহর অর্থাৎ সিটি করপোরেশন এলাকার বেশিরভাগ মানুষ, ব্যয়ভার বহন না করতে পেরে থাকতে পারবে না। এ বিষয়ে রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট (প্রথম) কামাল মাহমুদ বলেন, যেভাবে ড্যাপের চিন্তা করা হচ্ছে তাতে আবাসন সেক্টরে ধস নামবে। যার কারণে ঢাকায় নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা বাসা ভাড়া দিয়ে থাকতে পারবে না। যার সরাসরি প্রভাব পড়বে অর্থনীতিতে। তাই ড্যাপ নিয়ে আমরা বেশ দুশ্চিন্তা ও অস্থিরতার মধ্যে আছি।

প্রস্তাবিত ড্যাপের তথ্য অনুযায়ী, রাজউকের ১৫২৮ বর্গকিলোমিটার এলাকায় জনঘনত্বকে বিবেচনা করে ফার (ফ্লোর এরিয়া রেশিয়ো) নির্ধারণ করা হয়েছে। এই পরিকল্পনায় ঢাকা কেন্দ্রীয় এলাকার (উত্তর ও দক্ষিণ সিটি) জন্য প্রতি একরে ২০০ জন, পুরান ঢাকায় প্রতি একরে ২৫০ জন; গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, সাভার, পূর্বাচল, ঝিলমিল নগর এলাকার জন্য প্রতি একরে ১৮০ জন, অন্যান্য নগর এলাকার জন্য প্রতি একরে ১৫০ জন (কৃষি এলাকা ছাড়া) ধরা হয়েছে। এর মাধ্যমে কোন এলাকায় কত আয়তনের ভবন নির্মাণ হবে তা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর এ প্রস্তাবে আপত্তি জানিয়েছে আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাব। সংগঠন নেতারা বলছেন, উপার্জনের জন্য, চিকিত্সার জন্য, উন্নত শিক্ষার জন্য বিচার সালিশের জন্য দেশের জনগণের ঢাকাই একমাত্র কেন্দ্রস্থল। এই সুব্যবস্থাগুলো যতক্ষণ পর্যন্ত অন্যত্র তৈরি করা না যাবে ততক্ষণ ঢাকা শহরে জনসংখ্যা কমানো বা ঢাকা শহরে অভিবাসনে বাধা প্রদান অলিক স্বপ্ন মাত্র। রিহ্যাব বলছে, সমগ্র রাজউক এলাকায় মোট স্থাপনা প্রায় ২১ লাখ। এর মধ্যে ৮ তলা অধিক উচ্চতার ভবন মাত্র ১৬ শতাংশ। আর এই আয়তন বা উচ্চতার ভবন লাগাম টানা শহরের জনঘনত্ব কমানোর হাতিয়ার রূপে ব্যবহার করা বাস্তব সম্মত না। শহরের নাগরিক সুবিধা না বাড়িয়ে ভবনের আয়তন কমিয়ে ঢাকা শহরের জনঘনত্ব কমানোর প্রচেষ্টা কেবল জনদুর্ভোগ বাড়াবে। বাংলাদেশের মত জনবহুল দেশে যেখানে জমির পরিমাণ অপ্রতুল সেখানে ভবনের উচ্চতা না কমিয়ে বরং তা বাড়ালে জনগণের আবাসন সমস্যার সমাধান হবে দ্রুত।

আবার পানির দাম ৪০ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব ঢাকা ওয়াসারআবার পানির দাম ৪০ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব ঢাকা ওয়াসার
তারা ড্যাপের গেজেট প্রকাশে আপত্তি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বরাবর আবেদন করেছেন। সংগঠনটি ওই চিঠিতে দাবি করেছে, ঢাকা ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ২০০৮ মোতাবেক নির্মাণযোগ্য ভবনে যে পরিমাণ ফার বা বর্গফুট পাওয়া যায় প্রস্তাবিত ড্যাপে তা অনেক কমে গেছে। তাদের দাবি, এখন ২০ ফুট রাস্তা সংলগ্ন পাঁচ কাঠা জমিতে গ্রাউন্ড ফ্লোরসহ আটতলার ভবনে মোট ১৩৫০০ বর্গফুট নির্মাণের অনুমতি পাওয়া যায়। প্রস্তাবিত ড্যাপের বিধিমালা অনুযায়ী ওই জায়গায় ৫ তলা ভবনে মোট ৯০০০ বর্গফুট ভবন নির্মাণের অনুমতি পাওয়া যাবে। ২০ ফুটের চেয়ে ছোট রাস্তার ক্ষেত্রে ভবনের উচ্চতা ৩ থেকে ৪ তলার বেশি হবে না। আয়তন অনেক কমে যাবে। এতে নির্মাণযোগ্য ফ্ল্যাট সংখ্যা কমে আসার কারণে ব্যয় অনেক বেড়ে যাবে। তখন ফ্ল্যাটের দাম নূন্যতম ৫০ শতাংশ বাড়বে। যা সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাবে। এর ফলে বিভিন্ন সেক্টরে ব্যাপকভাবে সমস্যা দেখা দিবে। এগুলো হলো:

২৬৯ টি লিংকেজ শিল্প পড়বে হুমকির মুখে

ব্যাপকভাবে ভবনের আয়তন হ্রাসের কারণে ফ্লাটের দাম বেড়ে যাওয়ায় ক্রেতা শূন্যতা দেখা দিবে। এতে নির্মাণ শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে। পাশাপাশি এ শিল্পের সাথে জড়িত সিরামিক, স্যানেটারি, টাইলস, ইলেকট্রিক কেবল ইন্ডাস্ট্রিজ, রড, সিমেন্ট, পাথর, বালি, পেইন্ট ইন্ডাস্ট্রিজসহ অন্যান্য ২৬৯ টি লিংকেজ শিল্প গভীর সংকটের মধ্যে পড়বে। যা প্রভাব ফেলবে অর্থনীতিতে।

জমির মালিকদের মধ্যে তৈরি হবে বৈষম্য , কমবে জমির দাম

ড্যাপের কারণে নির্মিতব্য ভবন সমূহের আয়তন বা উচ্চতা কমার কারণে নির্মিতব্য ফ্লাটের সংখ্যা/ আয়তন কমে যাবে। অন্যদিকে একই এলাকায় তার পাশের জমিতেই নির্মাণ বিধিমালা ২০০৮ অনুযায়ী ইতিমধ্যে নির্মাণ হয়ে গেছে অধিক সংখ্যক ফ্ল্যাটসহ ৮ থেকে ১০ তলা ভবন। যার ফলে বৈষম্য তৈরি হবে জমির মালিকদের মধ্যে। এছাড়া ড্যাপ বাস্তবায়ন হলে কমে আসবে জমির দাম। ফলে ড্যাপ এলাকায় যাদের জমি রয়েছে তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

বাড়ি ভাড়া বাড়বে অস্বাভাবিক হারে: নির্মাণযোগ্য ফ্লাট সংখ্যা কমে আসায় বাসা ভাড়া অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাবে। এতে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষ বাসা ভাড়া দিয়ে শহরে থাকতে পারবে না। বিভিন্ন স্থানে সাবলেট সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। যা নগরীতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ সৃষ্টি করবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে নগর পরিকল্পনাবিদ ইকবাল হাবিব বলেন, ড্যাপে যেভাবে ফার নির্ধারণ করা হয়েছে, এতে ভবিষ্যতে মূল শহর অর্থাৎ সিটি করপোরেশন এলাকায় বেশিরভাগ মানুষ, ব্যয়ভার বহন না করতে পেরে থাকতে পারবে না। তাদের মূল শহরের বাইরে চলে যেতে হবে। ড্যাপে এলাকাভিত্তিক যে ফার নির্ধারণ করা হয়েছে তা ত্রুটিপূর্ণ। আমরা এ নিয়ে আপত্তি জানিয়েছি। আশা করছি সরকার এটি বিবেচনা করবে।

এ বিষয়ে রিহ্যাব সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন কাজল বলেন, ড্যাপের কারণে জমির মালিকরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ড্যাপে ভবনের নির্মাণের বিষয়ে যেসব প্রস্তাব রাখা হয়েছে আমরা এ বিষয়ে আমাদের উদ্বেগের কথা সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানিয়েছি। আশা করছি আমাদের দাবির বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। এ বিষয়ে রাজউকের প্রকল্প পরিচালক (ড্যাপ) আশরাফুল ইসলাম বলেন, ড্যাপ বাস্তবায়ন হলে কোন পক্ষই ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। শহরের দুই কোটি মানুষের স্বার্থ চিন্তা করেই ড্যাপ বাস্তবায়ন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কোন শহরে নির্বিঘ্নে চলাচল করার জন্য ২৫ ভাগ রাস্তার দরকার হয়, বর্তমানে ঢাকায় ৬ ভাগ রাস্তা আছে। সবার বাসযোগ্য করার জন্যই এসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ড্যাপে যে নীতিমালা রয়েছে তা একটি ডাইনামিক প্রস্তাব।-ইত্তেফাক