Home স্বাস্থ্য ‘‘ডায়াবেটিস এন্ড রেটিনা: বিজ্রিং দ্যা গ্যাপ” সাইন্টিফিক সেমিনার অনুষ্ঠিত

‘‘ডায়াবেটিস এন্ড রেটিনা: বিজ্রিং দ্যা গ্যাপ” সাইন্টিফিক সেমিনার অনুষ্ঠিত

27

স্টাফ রিপোটার: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ডায়াবেটিস এবং রেটিনা বিষয়ক ‘‘ডায়াবেটিস এন্ড রেটিনা: বিজ্রিং দ্যা গ্যাপ” সাইন্টিফিক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোববার দুপুর সাড়ে ১২ টায় (১২ নভেম্বর ২০২৩ খ্রি.) বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কনভেনশন হলে বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটি এবং বাংলাদেশ ভেট্রিও-রেটিনা সোসাইটি যৌথভাবে এ সেমিনারের আয়োজন করে। এ সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। সেমিনারে বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের এন্ডোক্রাইনোলোজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শাহজাদা সেলিম ও বাংলাদেশ ভিট্রিও-রেটিনা সোসাইটির কার্যকরী সদস্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের চক্ষু বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ডা. নুজহাত চৌধুরী একটি করে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

সেমিনারে প্রধানের অতিথির বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নানা মুখী উদ্যোগের কারণে বাংলাদেশের মানুষের গড়ায়ু বৃদ্ধি পেয়েছে। বিভিন্ন কারণে ডায়াবেটিস জনিত নানান রোগে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। সুশৃঙ্খল জীবন যাপন ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণসহ নানান রোগ প্রতিরোধে বিরাট ভূমিকা রাখতে পারে। পৃথিবীতে যেসব কারণে মানুষ অন্ধত্ব হয়, ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি তার অন্যতম কারণ। ডায়াবেটিসে হার্ট, চোখ এবং কিডনির ওপর প্রভাব পড়ে সব থেকে বেশি। ডায়াবেটিসের প্রভাবে অন্ধত্ববরণও করতে পারেন, যাকে বলা হয় ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি। ডায়াবেটিস চোখের সব অংশের তুলনায় রেটিনায় বেশি ক্ষতি করে। চক্ষু চিকিৎসকরা অবশ্যই সকল রোগীদের প্রথমেই ফান্ডাস ফটোগ্রাফি পরীক্ষা করবেন। এর পরীক্ষার মাধ্যমেই রোগীর ডায়াবেটিস জনিত রোগ বিশেষত ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি, ম্যাকুলার অবক্ষয়, গ্লুকোমা এবং অকোলের রেটিনোপ্যাথি সম্পর্কে জানা যাবে।
তিনি আরও বলেন, ডায়াবেটিস জনিত রোগ প্রতিরোধে জন সচেতনার জন্য সকল চিকিৎসকদের এগিয়ে আসতে হবে। প্রাথমিকভাবে চিকিৎসকরা রোগীদের ডায়াবেটিস নিয়ে সচেতনতার জন্য প্রতিটি পচম্বারে, ব্যানারে, লিফলেট, দেয়াল পত্রিকা রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ রোগীরা বিশেষজ্ঞ সেবা নিতে আসলে প্রতিটি চিকৎসকের চেম্বারে আধাঘণ্টা থেকে শুরু করে দুই ঘণ্টা পর্যন্ত অপেক্ষা করে থাকেন। এসময় তারা ডায়াবেটিস সচেতনতামূলক এসব লিফলেট দেখে রোগীরা কার্যকরভাবে সচেতন হবেন।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. এসএম আশরাফুজ্জামান ও বাংলাদেশ ভিট্রিও-রেটিনা সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোঃ আবুল বাশার শেখ। সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ ভিট্রিও-রেটিনা সোসাইটির মহাসচিব বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের চক্ষু বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শাহ-নূর হাসান। সেমিনারে প্যানেল অব এক্সাপার্ট হিসেবে বাংলাদেশ এন্ড্রোক্রাইন সোসাইটির সভাপতি (নির্বাচিত) অধ্যাপক ডা. হাফিজুর রহমান, বারডেম হাসপাতালের এন্ডোক্রাইন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ ফিরোজ আমিন, বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটির সহ-সভাপতি সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফারিহা আফসানা, বাংলাদেশ ভিট্রিও-রেটিনা সোসাইটির উপদেষ্টা ডা. নিয়াজ আব্দুর রহমান, বাংলাদেশ চক্ষু বিজ্ঞান সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. দীপক কুমার নাগ, বাংলাদেশ ভিট্রিও-রেটিনা সোসাইটির ভাইস প্রেসিডেন্ট সহযোগী অধ্যাপক ডা.তারেক রেজা আলী মতামত তুলে ধরেন।এ সেমিনারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. ছয়েফ উদ্দিন আহমদ, চক্ষু বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আব্দুল ওয়াদুদ, কমিউনিটি অফথালমোলোজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. শওকত কবির প্রমুখসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ২৫০জন চক্ষু রোগ বিশেষজ্ঞ অংশগ্রহণ করেন।

সেমিনারে বলা হয়, ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি হলো রেটিনা অর্থাৎ চোখের ভেতরের পর্দাসদৃশ অত্যন্ত সংবেদনশীল অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া, যার মাধ্যমে আলো বৈদ্যুতিক সংকেতে রূপান্তরিত হয়ে মস্তিষ্কে প্রেরিত হয়। এই সংবেদনশীল পর্দা বা রেটিনা অনেক রক্তনালি দ্বারা বেষ্টিত অবস্থায় থাকে। ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি বৃদ্ধি বিশ্বব্যাপী উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে, বাংলাদেশও ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি গ্লোবাল হেলথ রিপোর্ট অনুযায়ী ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি (ডিআর), ডায়াবেটিসের একটি মাইক্রোভাসকুলার জটিলতাকে উদ্বেগের কারণ হিসেবে আলোকপাত করা হয়েছে। যা অবিলম্বে সমাধান না করলে দৃষ্টিশক্তির জন্য যথেষ্ট হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।

সেমিনারে বলা হয়, ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি, বিশ্বব্যাপী কর্মজীবী প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে বাড়ছে। এই ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি অন্ধত্বের প্রধান কারণ। তবে এটি প্রতিরোধযোগ্য। ২০২০ সাল পর্যন্ত ১০৩ মিলিয়ন লোক এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে। যা ২০৪৫ সালের মধ্যে ১৬১ মিলিয়নে উন্নীত হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এই উদ্বেগজনক বৃদ্ধি বিশ্বব্যাপী সক্রিয় পদক্ষেপ এবং সচেতনতা প্রচারের জরুরি প্রয়োজনের উপর জোর দেয় হয়। বাংলাদেশ ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথির ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধির সম্মুখীন হচ্ছে, যা স্থানীয় স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এই ক্রমবর্ধমান সমস্যা দ্বারা উত্থাপিত চ্যালেঞ্জগুলি কার্যকরভাবে মোকাবেলা করার জন্য স্বাস্থ্যসেবা অবকাঠামোকে দ্রুত আপডেট করতে হবে। সেমিনারে এই রোগটি দ্রুত সনাক্তকরণের উপর জোড় দেয়া হয়। ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথির প্রভাব কমানোর চাবিকাঠি প্রাথমিক সনাক্তকরণের মধ্যে নিহিত। ইতিবাচক ফলাফলের জন্য স্ক্রিনিং প্রোগ্রামের বাস্তবায়ন এবং চোখের যত্ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সময়মত স্ক্রিনিং ক্ষতির অগ্রগতি রোধ করতে পারে। ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য, স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী, নীতিনির্ধারক এবং সংশ্লিষ্ট সকলের মধ্যে সহযোগিতা অপরিহার্য। স্ক্রীনিং এবং চিকিৎসাকে অন্তর্ভুক্ত করে স্থানীয় প্রয়োগ করতে হবে। ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য সময়মত এবং কার্যকর চোখের যত্ন নিশ্চিত করার জন্য সম্মিলিত পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিতে হবে। এছাড়াও ডায়াবেটিক রোগের কারণ, লক্ষ্মণ ও প্রতিরোধে জনগণকে সচেতন করার জন্য সচেতন করতে হবে। এজন্য সকল বিভাগের চিকিৎসকদের এগিয়ে আসতে হবে। বিশ্বব্যাপী ৭৭.৩ শতাংশ ডায়বেটিক রেটিনপ্যাথি আক্রান্ত হয় টাইপ ১ ডাবেটিসে এবং ২৫.১ শতাংশ ডায়বেটিক রেটিনপ্যাথি আক্রান্ত হয় টাইপ ২ ডাবেটিসে। তাদের মধ্যে ২৫-৩০ শতাংশ দৃষ্টিহীন হয় ডায়বেটিক ম্যাকুলার এডেমায়। বর্তমানে বাংলাদেশ এ বিষয়ে একটি সারা দেশ ব্যাপি একটি জরিপ হয়। যার প্রধান ইনভেস্টিগেটর ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য ও প্রখ্যাত চক্ষু রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ এবং সহযোগী হিসেবে আছেন বাংলাদেশ ভিট্রিও রেটিনা সোসাইটির পাবলিকেশন সেক্রেটারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের চক্ষু বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক (ভিট্রিও রেটিনা) ডা. মোহাম্মদ আফজাল মাহফুজউল্লাহ ও এন্ডোক্রইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শাহাজাদা সেলিম। এই জরিপের প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ডায়বেটিক রেটিনপ্যাথি আক্রান্ত হবার হার ডায়বেটিক রেটিনপ্যাথি নেই -৭১ শতাংশ,নন প্রলিফারেটিভ ডায়বেটিক রেটিনপ্যাথি ১৮ শতাংশ ও প্রলিফারেটিভ ডায়বেটিক রেটিনপ্যাথি ১১ শতাংশ।
ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথির জটিলতা সূক্ষ্ম রক্তনালিগুলো রেটিনায় অক্সিজেন ও পুষ্টি পৌঁছাতে বাধা সৃষ্টি করে করে। ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত থাকলে ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথিতে এই রক্তনালিগুলো বিভিন্নভাবে প্রভাবিত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে। রক্তনালিতে ‘পেরিসাইট’ নামের একটি অংশ থাকে, যা ভঙ্গুর হয়ে যায় এবং এক পর্যায়ে রক্তনালির পেরিসাইট ভেঙে যায় এবং রক্তনালি থেকে রক্ত ও রক্তরস বের হয়ে যায়। এই রক্তরস বের হয়ে রক্তক্ষরণ তৈরি করে, যা ‘রেটিনাল হেমোরেজ’নামে পরিচিত। এই রক্তক্ষরণের আবার বিভিন্ন প্রকারভেদ আছে। প্রথম পর্যায়ে এই রক্তক্ষরণ রেটিনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। পরবর্তী পর্যায়ে এই রক্তক্ষরণ রেটিনার বাইরে চলে আসে, যা ‘প্রিরেটিনাল হেমোরেজ’ নামে পরিচিত এবং পরবর্তী ধাপে তা রেটিনার সম্মুখভাগে যে জেলি-ভিট্রিয়াস অংশে প্রবাহিত হয় এবং তা ভয়াবহ আকার ধারণ করে। এই পর্যায়টি ‘ভিট্রিয়াস হেমোরেজ বা ইন্ট্রাজেল হেমোরেজ’নামে পরিচিত। এই ধাপ চলমান থাকলে একসময় রক্ত, রক্তনালি, ভঙ্গুর রেটিনা ও জেলি একত্র হয়ে ট্র্যাকশন ফোর্স তৈরি করে, যা ভঙ্গুর রেটিনাকে সম্পূর্ণ ছিঁড়ে ফেলে। এই স্টেজটি অ্যাডভান্সড স্টেজ হিসেবে ধরা হয়।

ডায়াবেটিস ধরা পড়ার পর থেকে নিয়মিত প্রতিবছর একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞ বা রেটিনা বিশেষজ্ঞ দ্বারা চোখের রেটিনা পরীক্ষা প্রয়োজন। এ ছাড়াও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা, রক্তচাপ থাকলে তা নিয়ন্ত্রণে রাখা, রক্তের চর্বির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখা, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা, নিয়মিত হাঁটা ও ব্যায়াম, নিয়মিত ওষুধ সেবন, দুশ্চিন্তা ও বিষণ্নতা থেকে দূরে থাকা, ধূমপান ছেড়ে দেওয়া ইত্যাদি মেনে চলা উচিত।