Home সারাদেশ ঠাকুরগাঁওয়ে ইজারা ছাড়াই চলছে বালু উত্তোলন, প্রতিরোধের যেন কেউ নেই।

ঠাকুরগাঁওয়ে ইজারা ছাড়াই চলছে বালু উত্তোলন, প্রতিরোধের যেন কেউ নেই।

67

মহশীন আলী, রংপুর অফিস: ঠাকুরগাঁওয়ে বন্ধ হচ্ছে না নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন। কোথাও কোথাও ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু তোলায় ভেঙ্গে যাচ্ছে নদীর পাড়, নষ্ট হচ্ছে গ্রামীন রাস্তাঘাট। ইজারা ছাড়াই বছরের পর বছর আইন লঙ্ঘন করে বালু উত্তোলন করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীরা। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, তাদের প্রতিবাদ কোনো কাজে আসছেনা। বরং নানা ধরনের হুমকি-ধুমকির মুখে পড়তে হচ্ছে তাদের। আর এতে প্রশ্নবিদ্ধও হয়েছে প্রশাসনের ভূমিকা।

স্থানীয় পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নদীগুলো থেকে নিয়মিত অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। অবৈধভাবে বালু ব্যবসার একটি সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন কয়েকজন প্রভাবশালী। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় এরা কাউকে তোয়াক্কা না করে বালু ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণ লোক তো দুরের কথা প্রশাসনও অনেক সময় এদের বাধা দিতে হিমসিম খাচ্ছে।

প্রশাসনের তথ্য মতে- টাংগন, শুক, সেনুয়া, প্বাথরাজ, কুলিক, তীরনই, লাচ্ছি সহ জেলায় তেরটি নদী রয়েছে। যার কোনটিতেই বালু উত্তোলনের জন্য কাউকে কোন ইজারা দেওয়া হয়নি। স্থানীয় প্রভাবশালীরা ঘাট দখলে নিয়ে ঠাকুরগাঁও সদরের আকচা, নারগুন, সালন্দর প্রয়াগপুর, ভেদাইলসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের পাশ দিয়ে বয়ে চলা নদী থেকে ড্রেজারের মাধ্যমে বালু উত্তোলন করছে। প্রতি ট্রাক্টর বালু ঘাটেই বিক্রি করে দিচ্ছে দুই থেকে তিনশ টাকায়। স্থানীয়দের ভুল বুঝিয়ে প্রশাসনের দৃষ্টি সীমার ভেতরেই ইজারা নেওয়ার কথা বলে ব্যবসায়ীদের কাছে বালু বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে অবৈধ বালু উত্তোলনকারীরা।

নদী থেকে যত্রতত্র বালু উত্তোলনের ফলে ভাঙছে নদীর পাড়, গ্রামীন রাস্তাঘাট। এসবের বিরুদ্ধে কার্যত কোনো পদক্ষেপ নেই প্রশাসনের। তবে বৈধভাবে বালু উত্তোলনের ব্যবস্থার দাবিও করেন তারা।

অন্যদিকে বালু ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা প্রভাবশালী হওয়ায় স্থানীয় লোকজন তাদের বিরুদ্ধে কোথাও কোনো অভিযোগ দিতেও সাহস পাচ্ছেন না। এমন অবৈধ কার্যক্রম বন্ধে দ্রুত প্রদক্ষেপ নেয়ার দাবি তুলছেন স্থানীয়রা।

পরিচয় গোপন রাখার শর্তে আকচা ইউনিয়নের কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, প্রতিবাদ করে অতীতে অনেকেই হয়রানির শিকার হয়েছেন। এখন তাই কেউ আর সাহস করেন না। গণমাধ্যমে কথা বললেও প্রভাবশালী মহল চড়াও হয়।

অন্য আর একজন বলেন, কোনোভাবেই বন্ধ হচ্ছে না বালু উত্তোলন। এ বালু দিয়ে রাস্তাসহ বিভিন্ন স্থানে পুকুর ও জলাশয় ভরাট কাজসহ ব্যবসা করা হচ্ছে। কেউ কেউ ইটভাটাতেও নিয়ে যায়। নদীতে গভীর করে মাটি কাটা ও বালু উত্তোলনের ফলে প্রতি বছরই বর্ষা মৌসুমে খেসারত দিতে হয় নদী ধারের জমির মালিকদের। ক্ষতি হয় ফসলি জমির। অনেক গাছপালা যায় নদীগর্ভে।

অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কথা স্বীকার করে বিষয়টি প্রশাসনের নজরে আনার কথা জানান সদর উপজেলার নারগুন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সেরেকুল ইসলাম।

এ বিষয়ে নেকমরদ-রাতোর ইউনিয়নের তহশীলদার ভূপাল চন্দ্র রায় বলেন, এরকম অবৈধ বালু উত্তোলনের খবর তারা যখনই পেয়েছেন তখনই (এমনকি ছুটির দিন হলেও) তারা তাঁদের এসিল্যান্ড স্যারসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। তিনি এসব বন্ধে জনগণের সচেতনতা বাড়ানোর উপর গুরুত্ব দেন। এরপর যাতে প্রশাসন আরো দৃঢ় ভূমিকা রাখতে পারে সেক্ষেত্রে তিনি তাঁদের পরবর্তী মিটিংয়ে এ বিষয়ে আলোচনা রাখবেন বলে উল্লেখ করেন।

অভিযানের মাধ্যমে এসব অবৈধ বালু উত্তোলকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানান ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তাহের মোঃ সামসুজ্জামান।