Home রাজনীতি টিপু হত্যায় অস্ত্রের জোগানদাতা কে?

টিপু হত্যায় অস্ত্রের জোগানদাতা কে?

56

ডেস্ক রিপোর্ট: রাজধানীর মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপু খুনে ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্রের জোগানদাতা কে—সে বিষয়টি গোয়েন্দারা তদন্ত করছে। হত্যার মোটিভ নিশ্চিত হওয়ার জন্য হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মোটরসাইকেল চালক, মোটরসাইকেল ও অস্ত্র সরবরাহকারীকে শনাক্ত ও গ্রেফতার গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

তবে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত মাসুম ওরফে আকাশ এই হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে অনেক তথ্যই দিয়েছে। সেসব তথ্য মিলিয়ে হত্যার প্রকৃত উদ্দেশ্য সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারেননি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। পরে গতকাল সোমবার আদালতের মাধ্যমে মাসুমকে সাত দিনের রিমান্ডে নিয়ে নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। তবে এখন পর্যন্ত হত্যার মোটিভ কিংবা নির্দেশদাতাদের সম্পর্কে নিশ্চিত কোনো তথ্য পাননি।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, টিপু হত্যায় ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্রের জোগানদাতা হিসাবে এখন পর্যন্ত মতিঝিল এজিবি কলোনির পলাশ ওরফে কাইল্লা পলাশের নাম উঠে এসেছে। ঘটনার দিন ২৫ মার্চ সন্ধ্যায় খুনিদের অস্ত্র জোগান দেওয়ার পর রাত পৌনে ১২টা পর্যন্ত পলাশ দুই সহযোগীসহ বাংলামোটর এলাকার একটি বারে অবস্থান করছিলেন। তার সঙ্গে থাকা ঐ সহযোগীরাও টিপু খুনের পরিকল্পনায় যুক্ত থাকতে পারে। গ্রেফতার মাসুম প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে কয়েক জনের নাম বলেছে। এর মধ্যে পরিকল্পনাকারী ও অস্ত্রের জোগানদাতাও রয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, টিপুকে হত্যার জন্য মাস্টার প্ল্যান তৈরি করে পরিকল্পনাকারীরা। এজন্য আদালা আলাদা গ্রুপ দায়িত্ব পালন করে। একটি গ্রুপের দায়িত্ব ছিল অস্ত্র ও বাইক সরবরাহ করা। অপর একটি গ্রুপ ব্যাকআপ হিসেবে কাজ করে। এই কিলিং মিশন সম্পন্ন করতে ১১ জনকে মাঠে নামানো হয়। এই ১১ জনই পূর্বে শীর্ষ সন্ত্রাসী দুবাইয়ে আত্মগোপন করা জিসান আহমেদ মন্টি ওরফে জিসানের গ্রুপে ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী হিসেবে কাজ করত। যখন যে ভাড়ায় ঠিক করে, তাদের হয়ে এরা কাজ করে দেয়। যুবলীগের গ্রেফতার হওয়া ল্যাংড়া খালেদ এর পেছনে কলকাঠি নেড়েছে বলে একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
গোয়েন্দা সূত্রমতে, এ ঘটনায় ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র এখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। ধারণা করা হচ্ছে, হত্যার পর খুনি তা জোগানদাতার কাছে পৌঁছে দেয়। এরপর তা হাত বদল হয়ে গেছে। এ কারণে অস্ত্রের সন্ধানে নেমেছে গোয়েন্দারা। তবে অস্ত্র কোথায় এবং কার কাছে থাকতে পারে সে সম্পর্কে একটি ধারণা পেয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তারা।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের আরেক জন কর্মকর্তা বলেন, নিখুঁত পরিকল্পনায় এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। কাটআউট পদ্ধতিতে অন্তত চারটি স্তরের লোকজন জড়িত। প্রথম স্তরে রয়েছেন শুটার মাসুম ও অজ্ঞাত মোটরসাইকেল চালক। দ্বিতীয় স্তরে আছেন অস্ত্র ও মোটরসাইকেল সরবরাহকারী। তৃতীয় স্তরে রয়েছেন সমন্বয়কারী। আর সর্বশেষ চতুর্থ স্তরে বসে আছেন মূল পরিকল্পনাকারী বা মাস্টারমাইন্ড।

ডিবির এই কর্মকর্তা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, যেহেতু কাটআউট সিস্টেমে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে, কাজেই পরবর্তী ধাপগুলোতে যারা রয়েছেন, তাদের জীবনহানির শঙ্কা নিয়েও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ের গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের সতর্ক হয়ে দায়িত্ব পালনের নির্দেশনা দিয়েছেন। যাতে পরবর্তী ধাপের অপরাধীরা মূল পরিকল্পনাকারীর মাধ্যমে আক্রান্ত না হতে পারেন।

উল্লেখ্য, ২৫ মার্চ মতিঝিল এজিবি কলোনি থেকে বাসায় যাওয়ার পথে রাত সোয়া ১০টার দিকে শাজাহানপুরের মানামা ভবনস্থ বাটার দোকানের সামনে মাইক্রোবাসে গুলি করলে জাহিদুল ইসলাম টিপু (৫৪) ও পাশের রিকশাযাত্রী সামিয়া আফনান প্রীতি (২০) নিহত হন।-ইত্তেফাক