Home সারাদেশ টাঙ্গাইলে মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী ও সাংবাদিকের মার হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন

টাঙ্গাইলে মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী ও সাংবাদিকের মার হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন

26

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি: টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে চুরি করতে গিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কন্সটেবল মরহুম আবুল এর বৃদ্ধা স্ত্রী এবং দি বিসনেস ষ্টান্ডার্ড পত্রিকার এডিটরের মা সুলতানা সুরাইয়াকে খুনের ঘটনায় জড়িত দুই আসামীকে গ্রেফতার সহ লুণ্ঠিত মোবাইল ফোন উদ্ধার করেছে পিবিআই টাঙ্গাইল জেলা। গত ১৯ সেপ্টেম্বর রাতে আসামী মোঃ লাবু এবং আল আমিন আকন্দ (২২) কে গ্রেফতার করা হয়।
ডিসিষ্ট সুলতানা সুরাইয়া বীর মুক্তিযোদ্ধা অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কন্সটেবল মরহুম আবুল এর স্ত্রী। তার এক ছেলে জনাব আবু সায়েম আকন্দ, দি বিসনেস ষ্টান্ডার্ড পত্রিকার নিউজ এডিটর, এক মেয়ে ব্যাংকের প্রিন্সিপাল অফিসার, ও অপর মেয়ে প্রাইমারী স্কুলে শিক্ষকতা করেন। স্বামী মারা যাওয়ার পর তিনি একাই বাড়ীতে থাকতেন।

গত ১৫ সেপ্টেম্বর সকাল অনুমান ৮টায় টাঙ্গাইল জেলার ভূঞাপুর থানাধীন পশ্চিম ভূঞাপুর সাকিনস্থ সুলতানা সুরাইয়া (৬৫) তার নিজ বাড়ীতে গলাকাটা অবস্থায় নির্মম হত্যাকান্ডের শিকার হওয়ার সংবাদ পাওয়া যায়। উক্ত সংবাদ পেয়ে জনাব মোহাম্মদ সিরাজ আমীন, পুলিশ সুপার, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) টাঙ্গাইল জেলা মহোদয়ের নির্দেশে পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান আনসারী এর নেতৃত্বে একটি চৌকস টিম দ্রুততার সাথে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ছায়া তদন্ত শুরু করেন। পিবিআই টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে জানতে পারে যে, গত ইং ১৪ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৬টায় ডিসিস্টের বাড়ীর বারান্দার গ্রিলে তালা লাগানো আছে। এ অবস্থায় দেখতে পেয়ে প্রতিবেশীরা ডিসিস্ট সুলতানা সুরাইয়া (৬৫) কে অনেক ডাকাডাকি করলে দরজা না খুলায় তার ঘরে ফ্যান এবং লাইট জ্বালানো দেখে তাদের সন্দেহ হয়। পরবর্তীতে বাদীর ভাতিজা প্রান্ত গেইট টপকে ভিতরে গিয়ে ডিসিস্টের গলাকাটা রক্তাক্ত মৃতদেহ তার ঘরের মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখে। উক্ত ঘটনায় ডিসিস্ট এর ছেলে মোঃ আবু সায়েম আকন্দ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামী/আসামীদের বিরুদ্ধে ভূঞাপুর থানার মামলা নং-১০, তারিখ ১৫/০৯/২০২৩ ইং হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটি পিবিআই এর সিডিউলভূক্ত মামলা হওয়ায় গত ইং ১৭/০৯/২০২৩ তারিখ পিবিআই টাঙ্গাইল জেলা স্ব-উদ্যোগে মামলাটির তদন্তভার গ্রহন করে। পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ) মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান আনসারী, পিবিআই টাঙ্গাইল জেলা মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করে।

পিবিআই প্রধান অ্যাডিশনাল আইজিপি জনাব বনজ কুমার মজুমদার, বিপিএম (বার), পিপিএম মহোদয়ের এর নির্দেশনা ও তত্ত্বাবধানে এবং পুলিশ সুপার, পিবিআই, টাঙ্গাইল জেলার সার্বিক সহোযোগিতায় মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ) মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান আনসারী গোয়েন্দা তথ্য ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় গত ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ মামলার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে আসামী (১) মোঃ লাবু (২৯), পিতা-মোঃ শাহজাহান @ শাহ জামাল, সাং-কাঞ্চাবাড়ি, মধ্যপাড়া, চরপৌলী, থানা ও জেলা-টাঙ্গাইল (বর্তমান সাং-সয়দাবাদ পূনর্বাসন, থানা ও জেলা-সিরাজগঞ্জ) কে সিরাজগঞ্জ সদর থানা এলাকা থেকে গ্রেফতার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে ঘটনার সাথে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করে। তার দেওয়া তথ্যমতে তার বর্তমান ঠিকানার রুম হতে ডিসিষ্টের গলাকাটায় ব্যবহৃত ধারালো চাকু জব্দ করা সহ জড়িত অপর সহযোগী আসামী ২। আল আমিন আকন্দ (২২), পিতা-সিরাজ আকন্দ, সাং-পশ্চিম ভূঞাপুর, থানা-ভূঞাপুর, জেলা-টাঙ্গাইলকে যথাক্রমে সিরাজগঞ্জ সদর থানা ও টাঙ্গাইল জেলার ভূয়াপুর থানা এলাকা হতে গ্রেফতার করা হয়।

জিজ্ঞাসাবাদে আসামীদ্বয় জানায় যে, তারা মুলত চুরি করার জন্য ডিসিষ্টের বাড়ীতে প্রবেশ করে। আসামী আল আমীন ডিসিষ্টের পাশের বাড়ীর নাতি সম্পর্কে আত্মীয় হওয়ায় দাদীর কাছে টাকা আছে মর্মে জানতো এবং দাদী কোথায় টাকা রাখে তাও জানতো। সে মাঝে মাঝে দাদীর ছোটখাট কাজ কর্ম করে দিত, বিনিময়ে দাদী তাকে কিছু টাকা দিতেন। আসামী লাবুর শ্বশুড় নব্য মুসলিম হওয়ার পর ডিসিষ্টের ভাসুরের বাসায় ভাড়া থাকতেন। ঘটনার দিন তারা বাড়ীর গ্রীল বেয়ে টিনের বেড়ার ভেতর প্রবেশ করে লুকিয়ে থাকে, রাত আনুমানিক সাড়ে ১২ টায় ডিসিস্ট ওয়াশরুমে গেলে দরজা খোলা পেয়ে তারা ঘরে প্রবেশ করে। ডিসিষ্ট ওয়াশরুম থেকে ঘরে ঢুকলে, তাদেরকে চিনে ফেলে এবং চিৎকার চেচামেচি করে লোক জড়ো করার চেষ্টাকালে আসামীদ্বয় ধরা পড়া এড়াতে ডিসিষ্টের গলায় গামছা ও চিকন নাইলনের সুতলি পেঁচিয়ে ধারালো চাকু দিয়ে গলা কেটে নির্মমভাবে হত্যা করে। হত্যার পর তারা ডিসিস্টের ঘরে বিছানার নীচে একটি ব্যাগে থাকা সঞ্চিত নগদ ১২ হাজার টাকা ও দুইটি মোবাইল ফোন চুরি করে পালিয়ে যায়। আসামী আল আমীন ও ডিসিষ্টের বাড়ীর মাঝামাঝি গিয়ে তারা টাকা ও মোবাইল ভাগাভাগি করে, যে যার বাড়ীর দিকে চলে যায়।

এ বিষয়ে পুলিশ সুপার, পিবিআই, টাঙ্গাইল জেলা বলেন,”এ ধরনের নৃশংস হত্যাকান্ডের সংবাদ পেয়ে ঘটনার বিষয়ে ছায়া তদন্ত শুরু করি। মামলাটি পিবিআই এর সিডিউলভূক্ত হওয়ায় আমরা স্ব-উদ্যোগে মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করি। তথ্য প্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ঘটনার সাথে জড়িত আসামী ১। মোঃ লাবু এবং ২। আল আমিন আকন্দ (২২) দ্বয়কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হই। তাদেরকে বিজ্ঞ আদালতে সোর্পদ করা হয়েছে।”