Home রাজনীতি জেপি’র আয়োজনে মানিক মিয়ার মৃত‍্যুবার্ষিকীর আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

জেপি’র আয়োজনে মানিক মিয়ার মৃত‍্যুবার্ষিকীর আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

39

জাকির হোসেন আজাদী: ১ জুন বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয় পার্টি-জেপি আয়োজনে দৈনিক ইত্তেফাকের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক বাংলাদেশের সাংবাদিকতা জগতের উজ্জল নক্ষত্র তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার ৫৩তম মৃত্যুবার্ষিকীর আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় বক্তারা বলেন , “মানিক মিয়া ছিলেন নির্ভীক সাংবাদিকতার পথিকৃত। তাঁর লেখনী লক্ষ্যহীন ছিল না, তার সাংবাদিকতার মূল লক্ষ্যই ছিল দেশ ও মানুষের মুক্তি। সত্য বলতে গিয়ে জুলুমের শিকার হয়েও
লক্ষ্যে তিনি অটল ছিলেন। কিন্তু এখনকার সাংবাদিকতা উদ্দেশ্যহীন। এভাবে সাংবাদিকতা চললে মানিক মিয়ার স্মৃতি থাকবে না ।”

আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিক বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘আমাদের সাংবাদিকেরা বর্তমানে একটা ভয়ের মধ্যে বাস করছেন। ভয়ের মধ্যে কেন বাস করছেন তারাও জানেন, আমরাও জানি। ভয় আগেও ছিল। এখন কেন জানি মনে হচ্ছে, সীমা ছাড়িয়ে গেছে। একটা ভয়ের পরিবেশ তৈরি হয়েছে, এটার অনেকগুলো কারণও আছে । তবু
সাংবাদিকেরা লড়াই করে যাচ্ছেন। প্রথমে তারা লড়াই করেছেন ১৯৬২ সালে। ষাটের দশকের কালাকানুনের বিরুদ্ধে লড়াই করে বিজয়ী হয়েছেন সাংবাদিকেরা। নব্বইয়ের দশকের অভ্যুত্থানের পরে এ দেশের সাংবাদিকতা জগতে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছিল । একটা স্বাধীন সাংবাদিকতার পথ খুঁজে পেয়েছিলাম। আমরা সেটাকে ব্যবহার করেছি না অপব্যবহার করেছি, সাংবাদিকেরা ভালো বলতে পারবেন।’

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কথা উল্লেখ করে মেনন বলেন, ‘আইনমন্ত্রী বলেছেন, ডিজিটাল আইনে এখন আর সাংবাদিকদের গ্রেফতার করা হবে না। সাংবাদিককে সংবাদের জন্য গ্রেফতার না করে অন্য ঘটনায় ডিজিটাল আইনে গ্রেফতার করা হলে তখন কী হবে? এই আইন নিয়ে আমরা কতটা সোচ্চার হয়েছি, তা-ও দেখার প্রয়োজন আছে। এখন আবার এসেছে গণমাধ্যমকর্মী আইন। এসব আইন নিয়ে সংবাদপত্র ও
সাংবাদিকদের যে ধরনের ভূমিকা আশা করেছিলাম, তা কিন্তু পাইনি। খুবই দুর্ভাগ্যজনকভাবে ঘটনাগুলো ঘটছে । এভাবে যদি সাংবাদিকতা জগৎ চলে, তাহলে মানিক মিয়া থাকবেন না, তার স্মৃতিও থাকবে না ।’

আলোচনাসভায় সভাপতিত্বকারী জাতীয় পার্টি-জেপির সাধারণ সম্পাদক সাবেক শিক্ষা মন্ত্রী শেখ শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু ও মানিক মিয়ার সম্পর্ক ছিল রাজনৈতিক-সামাজিক সম্পর্কের ঊর্ধ্বে। তারা ছিলেন ভাই-ভাই । মানিক মিয়া জুলুম-নির্যাতনের বিরুদ্ধে আমৃত্যু লড়াই করে গেছেন । নিজেও জুলুমের শিকার হয়েছেন। এতে রাজনৈতিক সমর্থন দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু । আজ দেখি উদ্দেশ্যহীন মিডিয়া । মানিক মিয়ার মিডিয়া কিন্তু উদ্দেশ্যহীন ছিল না। তিনি সত্য বলতে গিয়ে নানা হয়রানির শিকার হয়েছেন, তবু উদ্দেশ্যে অটল ছিলেন।’

আলোচনাসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ও সাংবাদিক নেতা ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, লেখনী দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে সবার সামনে এনেছিলেন মানিক মিয়া । তাকে শুধু সাংবাদিক হিসেবেই শ্রদ্ধা জানাই তা নয়, বরং স্বাধীনতার অন্যতম সহযোগী হিসেবে তাকে শ্রদ্ধা জানাই। তার লেখনীর মাধ্যমে স্বাধীনতার প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছিল ।

সাংবাদিক নেতা মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, ‘সাংবাদিকদের রাজনৈতিক দর্শন থাকতেই পারে । এখন দেখার বিষয় হলো, আমরা সেটিকে পেশার মধ্যে মিলিয়ে ফেলছি কি না। দুঃখজনক হলো, আমাদের রাজনীতিতেও যেমন ধস নেমেছে, সাংবাদিকতায়ও তেমনি ধস নেমেছে। মাঝেমধ্যে প্রেসক্লাবের সামনে কর্মসূচিতে দেখি যতজন বক্তা ততজন শ্রোতা । বর্তমানের রাজনীতি বুদ্ধিবৃত্তির জায়গা থেকে দূরে সরে গেছে। এখন রাজনীতিবিদেরা যা করেন, সেটিকেই নিজেরা সঠিক মনে করেন, কারো সঙ্গে আলোচনারও প্রয়োজন মনে করেন না।’

জেপির প্রেসিডিয়াম সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা সাদেক সিদ্দিকী বলেন, এ দেশে স্বাধীনতা ওসাংবাদিকতা যতদিন থাকবে, ততদিন মানিক মিয়ার স্মৃতি অম্লান থাকবে, নির্ভীক সাংবাদিকতার প্রতীক হিসেবে মানিক মিয়ার নাম উচ্চারিত হবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে। বঙ্গবন্ধু ও মানিক মিয়ার দর্শনকে ধারণ করে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির ঐক্য আরো সুদৃঢ়
করার ওপর জোর দেন তিনি।

জেপির প্রেসিডিয়াম সদস্য এজাজ আহমেদ মুক্তা বলেন,যতদিন সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতা থাকবে, ততদিন মানিক মিয়া প্রেরণা হয়ে কাজ করবেন।
আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, সাংবাদিকতার প্রবাদপুরুষ বললে যে নামটি আসে, তিনি হলেন তফাজ্জল হোসেন মামিক মিয়া । স্বাধীনতার যে আন্দোলন, সেখানে জনমত গঠন করেছিলেন তিনি। রাজনৈতিক নেতা না হয়েও তিনি জেল খেটেছেন। বঙ্গবন্ধু অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে মানিক মিয়ার সঙ্গে পরামর্শ করতেন।

জেপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খলিলুর রহমান খলিল বলেন, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণে মানিক মিয়া কাজ করে গেছেন। তিনি ছিলেন এ দেশের সংবাদপত্র জগতের উজ্জ্বল নক্ষত্র । সাহসী সাংবাদিকতার জন্য নতুন প্রজন্মকে বেশি করে মানিক মিয়া ও তার লেখনী সম্পর্কে জানতে হবে।

জেপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও জাতীয় যুব সংহতির কেন্দ্রীয় সভাপতি অ্যাডভোকেট এনামুল ইসলাম রুবেল বলেন, ক্ষুরধার লেখনীর মাধ্যমে এ দেশের মানুষকে স্বাধীনতাকামী করে তুলেছিলেন মানিক মিয়া। তিনি ছিলেন আধুনিক সংবাদপত্রের রূপকার ও বাঙালি জাতীয়তাবাদ আন্দোলনের প্রবক্তা।

আলোচনায় আরও অংশ নেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন, জেপি নেতা মোহাম্মদ হোসেন রেণু, আবুল খায়ের সিদ্দিকী, আমিনুল ইসলাম তপন প্রমুখ।