Home সাহিত্য ও বিনোদন জামালপুরের খ্যাতিমান চলচ্চিত্রকার আমজাদ হোসেনের প্রয়াণ দিবসে নেই কর্মসূচি

জামালপুরের খ্যাতিমান চলচ্চিত্রকার আমজাদ হোসেনের প্রয়াণ দিবসে নেই কর্মসূচি

20

সুমন আদিত্য,জামালপুর প্রতিনিধিঃ আমজাদ হোসেন। বাংলা চলচ্চিত্র,সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে এক উজ্জল নক্ষত্র। ২০১৮ সালের ১৪ ডিসেম্বর আজকের এই দিনে থাইল্যান্ডের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে না ফেরার দেশে চলে যান। মৃত্যুর পর তাকে নিয়ে প্রতি বছর ঢাকা এবং জামালপুরে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যদিয়ে তার প্রয়াণ দিবস পালন করা হয়। কিন্তু এবছর তাকে নিয়ে কোন কর্মসূচি চোখে পরেনি।

পরিবারসূত্রে জানা যায়,গত ২০২২ সালে জামালপুরের খ্যাতিমান পুরুষ চলচ্চিত্রকার আমজাদ হোসেনকে নিয়ে জামালপুরে গঠিত হয়েছিল “আমজাদ হোসেন চর্চাকেন্দ্র”। গতবছর এই দিনে জামালপুরের ৭৪ টি সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন তার কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানিয়ে ছিল। বিকেলে তাকে নিয়ে শিল্পকলা একাডেমিতে আলোচনা সভাও হয়েছিল। কিন্তু এবছর জামালপুর এবং ঢাকায় তার প্রয়াণ দিবসে কোন কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়নি। কারন হিসেবে পরিবার থেকে জানানো হয় এবছর আমজাদ হোসেনের বড় সন্তান অভিনেতা সাজ্জাদ হোসেন দোদুল অসুস্থ এবং চিকিৎসার জন্য আমেরিকাতে থাকায় কেউ উদ্যোগ নেয়নি। শুধু পরিবারের পক্ষ থেকে করব জিয়ারত,মিলাদ মাহফিল,কোরআন তেলওয়াত ও গরীব-দুঃখীদের মাঝে খাবার বিতরণের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল তার প্রয়াণ দিবস।

আমজাদ হোসেনের জন্ম ১৯৪২ সালের ১৪ আগস্ট বর্তমান জামালপুর জেলায়। ছোট বেলা থেকেই ছড়া লিখতেন এবং সাহিত্যের প্রতি অনুরাগী ছিলেন আমজাদ হোসেন। তার প্রথম কবিতা ছাপা হয়েছিল ভারতের দেশ পত্রিকায়। পঞ্চাশের দশকে ঢাকায় এসে সাহিত্য ও নাট্যচর্চার সঙ্গে জড়িত হন।

চলচ্চিত্র অঙ্গনে শুরুটা ছিল ১৯৬১ সালে মহিউদ্দিন পরিচালিত ‘তোমার আমার’ সিনেমাতে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে। এরপর তিনি অভিনয় করেন মুস্তাফিজ পরিচালিত ‘হারানো দিন’ চলচ্চিত্রে। তারপর সহকারী পরিচালক, কাহিনীকার, চিত্রনাট্যকার, সংলাপ রচয়িতা, গীতিকার, পরিচালক, প্রযোজকের পাশাপাশি লেখক আমজাদ হোসেন একদিন হয়ে উঠলেন শিল্প,সাহিত্য ও সংস্কৃতি অঙ্গনের বিশাল এক মহীরুহ।

আমজাদ হোসেনের লেখা নাটক ‘ধারাপাত’ নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন সালাহউদ্দিন। এতে আমজাদ হোসেন নায়ক হিসেবে অভিনয় করেন। এরপর তিনি জহির রায়হানের ইউনিটে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু করেন।

এভাবেই দীর্ঘদিন কাজ করতে করতে ১৯৬৭ সালে নিজেই চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। নাম ‘জুলেখা’। তার পরিচালিত ব্যাপক দর্শকপ্রিয় চলচ্চিত্র হচ্ছে ‘বাল্যবন্ধু’, ‘পিতাপুত্র’, ‘এই নিয়ে পৃথিবী’, ‘বাংলার মুখ’, ‘নয়নমনি’, ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, ‘সুন্দরী’, ‘কসাই’, ‘জন্ম থেকে জ্বলছি’, ‘দুই পয়সার আলতা’, ‘সখিনার যুদ্ধ’, ‘ভাত দে’, ‘হীরামতি’, ‘প্রাণের মানুষ’, ‘সুন্দরী বধূ’, ‘কাল সকালে’, ‘গোলাপী এখন ঢাকায়’ ‘গোলাপী এখন বিলেতে’ ইত্যাদি। এছাড়াও তার অসংখ্য উপন্যাস,গল্প,নাটক,মুক্তিযুদ্ধের গল্প আজ বাংলা সাহিত্যের অংশ হিসেবে আমরা গর্বের সাথে স্মরণ করি।

পেয়েছেন ‘একুশে পদক’। ছয়টি শাখায় মোট বারো বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। এক আয়োজনে একসাথে পাঁচটি পুরস্কারও পেয়েছেন এই চলচ্চিত্রকার। বাচসাস পুরস্কার পেয়েছেন ছয়বার। এছাড়া সাহিত্যের জন্য আমজাদ হোসেন বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, দুই বার অগ্রণী শিশু সাহিত্য পুরস্কারসহ একাধিক পুরস্কার পদক ও সম্মাননা পেয়েছেন।

আমজাদ হোসেনের দুই পুত্র সাজ্জাদ হোসেন দোদুল ও সোহেল আরমান। তারা দুজনই অভিনেতা,পরিচালক ও চিত্রনাট্যকার।