Home রাজনীতি জাতীয় পার্টি এলোমেলো হয়ে গেছে–রওশন এরশাদ

জাতীয় পার্টি এলোমেলো হয়ে গেছে–রওশন এরশাদ

68

রওশন এরশাদের ডাকে সাড়া দেননি জাপার শীর্ষনেতারা

স্টাফ রিপোটার: বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ বলেছেন, আজকে যারা এই সভায় উপস্থিত হয়েছেন তারাই পার্টির প্রকৃত নেতাকর্মী। আজ পল্লীবন্ধু এরশাদ নেই। উনি থাকলে পার্টি অন্যরকম হতো। উনি নেই, তাই জাতীয় পার্টি আজ এলোমেলো হয়ে গেছে। তিনি বলেন, যাদের দল থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে তাদেরকে ফিরিয়ে নিতে হবে। যারা চলে গেছে তাদেরকেও ফিরিয়ে আনতে হবে। নতুবা আমরা অনেক পিছিয়ে যাবো।

আজ শনিবার দুপুরে গুলশানের ওয়েস্টিন হোটেলে পার্টির বিভিন্নস্তরের নেতাকর্মীদের সাথে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। সভায় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদেরসহ শীর্ষনেতাদের দাওয়াত করা হলেও তারা কেউ আসেননি।

সভায় বক্তারা জাতীয় পার্টিতে স্বেচ্ছাচারিতা চলছে বলে অভিযোগ করে জাতীয় পার্টি নেতৃত্ব রওশন এরশাদকে নেয়ার জন্য আহবান জানান।

রওশন এরশাদ সভায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দীর্ঘ ছয়মাস আমি থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলাম। পার্টির কেউ খোঁজ নেয়নি আমার। আমি সবার খোজ নিয়েছি। অথচ যাদেরকে দল থেকে বের করে দেয়া হয়েছে তারাই আমার নিয়মিত খোজ রেখেছেন। মসজিদ, মাজারসহ বিভিন্ন উপাসনালয়ে দোয়া প্রার্থনা করেছে।

তিনি বলেন, অনেক ভালো ভালো নেতাকর্মী দলের বাইরে আছে, তাদেরকে আনতে হবে। নতুন প্রজন্মকে দলে আনতে হবে। কাজী জাফর, শাহ্ মোয়াজ্জেম, আনোয়ার হোসেন মঞ্জুসহ অনেক সিনিয়র নেতা পার্টি ছেড়ে চলে গেছে তাদের ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করতে হবে। দলকে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমকক্ষ বানাতে হবে। নতুবা রাজনীতির টিকে থাকতে পারবো না।

বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, পার্টি শক্তিশালী করার প্রয়োজনে যা যা করার দরকার তাই করবো। এরশাদ তিলে তিলে এই দলটা গড়েছেন। সকলকে নিয়েই কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, বিমানবন্দরে আমি আসার দিন এত মানুষ আমাকে যে অভ্যর্থনা জানিয়েছে তা দেখে আমার দু’চোখে জল এসে এসে গেছে।

প্রয়াত এরশাদকে স্মরণ করে রওশন এরশাদ বলেন, এরশাদ ওপারে ভালো আছেন। মৃত্যুর আগের রাতে তিনি আমাকে বলেছিলেন, আল্লাহর রসূল আমার পাশে এসে দাড়িয়ে থাকে। সকালে শুনি উনি ইন্তেকাল করেছেন। উনি জান্নাতবাসী হবেন। কারণ, তিনি ইসলামের খাদেম ছিলেন। ইসলামকে রাষ্ট্র ধর্ম করেছিলেন, পবিত্র শুক্রবার ছুটি ঘোষণা করেন। মসজিদ মন্দিরসহ সকল উপাসনালয়ের পানি ও বিদুৎ বিল মওকুফ করেছিলেন।

সভায় জাপার সাবেক এমপি নূরুল ইসলাম তালুকদার বলেন, পার্টির কর্মীরা আজ অসহায়, তাদের খোজ আজ কেউ নেয় না। আপনাকে (রওশন এরশাদ) দলের দায়িত্ব নিতে হবে। পার্টির লাখো কর্মী আপনার অপেক্ষায় আছে।

প্রফেসর দেলোয়ার হোসেন খান বলেন, আপনার নামের পাশে এরশাদ আছে। বাংলার মানুষ আপনাকে নেতৃত্ব দেখতে চায়। জাতীয় পার্টি আজ সংকটাপন্ন অবস্থায় আছে। যে লোক কোনদিন জেল খাটেনি, রাজপথে এরশাদ মুক্তি আন্দোলন করেনি তার কাছে এরশাদের জাতীয় পার্টি নিরাপদ নয়।

সাবেক এমপি জিয়াউল হক মৃধা বলেন, জাতীয় পার্টিতে শুধুই বিশৃঙ্খলা, দ্বিধাবিভক্তি। কেন্দ্রে শুধু পদ আমদানি হয়। মুরগির মত দলীয় পদ বিক্রি হচ্ছে।

সভায় জাপার সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য ও এরশাদ ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান কাজী মামুনুর রশীদ বলেন, আমাদের আজ খুব দুঃসময় চলছে। আপনি (রওশন) যখন অসুস্থ তখন আপনার রোগমুক্তি কামনায় দোয়া মাহফিল করলে আমাকে বাধা দেয়া হয়। প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়। আপনি যখন সংকটাপন্ন অবস্থায় থাইল্যান্ড যান, তারপরের দিন তারা কক্সবাজারে দলবেঁধে আমোদ ফুর্তি করেছে। কাজী মামুন রওশন এরশাদের জীবদ্দশায় সাদ এরশাদকে পার্টির চেয়ারম্যান করার দাবী জানান।

জাপার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন রাজু বলেন, আজকে যারা আপনার (রওশন) ডাকে সাড়া দেয়নি তারা জাতীয় পার্টি করে না। কাউন্সিলে কথা ছিল আপনার দলীয় পতাকা আপনি ব্যবহার করবেন। সকল সভায় সভাপতিত্ব করবেন আপনি। আপনার পরামর্শে দল পরিচালিত হবে। কোন কথা রাখা হয়নি।

সভায় উপস্থিত ছিলেন রওশন পুত্র রাহগীর আল মাহি (সাদ এরশাদ), রওশন এরশাদের রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসিহ, জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য হাবিবুর রহমান হবি, ক্বারী হাবিবুল্লাহ বেলালী, জাপার সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য এমএ সাত্তার, প্রফেসর দেলোয়ার হোসেন খান, কাজী মামুনুর রশীদ, জাফর ইকবাল সিদ্দিকী, ফখরুজ্জামান জাহাঙ্গীর, নরুল ইসলাম নুরু, ইকবাল হোসেন রাজু, মোস্তাকুর রহমান মোস্তাক, আশরাফ সিদ্দিকী প্রমুখ।