Home সারাদেশ চরতী লোপাট হচ্ছে নদী ড্রেজিংয়ের বালু

চরতী লোপাট হচ্ছে নদী ড্রেজিংয়ের বালু

57

কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার

চট্টগ্রাম অফিস: চট্টগ্রাম জেলার সাতকানিয়া উপজেলার চরতী ইউনিয়নের বাংলা বাজারের উত্তর পার্শ্বের ব্রাক্ষণ ডেঙ্গা থেকে নদী ড্রেজিংয়ের বালু লোপাট হচ্ছে দিন দুপুরেই। এতে কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। এমনই অভিযোগ পাওয়া গেছে।

উক্ত নদী ড্রেজিংয়ের যে বালুর টাকার সরকারের রাজস্ব খাতে জমা হওয়ার কথা সেই রাজস্বের টাকা এখন বালুকেখো সমালোচিত চেয়ারম্যান রুহুল্লাহ চৌধুরী ও তাঁর বালুখেকো সিন্ডিকেটের পকেট ভর্তি হচ্ছে।

সরেজমিনে তদন্তে দেখা গেছে, সাতকানিয়া উপজেলার নলুয়া, আমিলাইশ, চরতী ইউনিয়নের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া সাঙ্গু নদীতে ড্রেজিং হওয়া বিশাল বালুর স্তপ। এই বালু শত শত ট্রাক ভর্তি করে বাঁশখালীর এস.আলম গ্রুপের প্রকল্পে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।

এই বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসন রাজস্ব অফিস যোগাযোগ করা হলে গণমাধ্যমকে জানানো হয় আমরা নদী ড্রেজিংয়ের বালু একটা সরকারী প্রক্রিয়ায় রেজুলেশনের মাধ্যমে বালু মহলের আওতায় আনা হয়। উক্ত জেলা প্রশাসন পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নিলাম দেন। নিলামে যিনি সর্বোচ্চ দর দিবেন তিনিই বালু বিক্রি করতে পারবে।

এই নদী ড্রেজিংয়ের বালু কাউকে লিজ বা নিলাম দেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখনো বালু মহলের আওতায় আনা হয়নি। নিলামতো অনেক দূরের কথা। পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তিও দেওয়া হয়নি নিলামও দেওয়া হয়নি।

এই বিষয়ে সাতকানিয়া উপজেলার নির্বাহী অফিসার ফাতেমা-তুজ-জোহরা সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমরা উপজেলা অফিস থেকে কাউকে সাঙ্গু নদী ড্রেজিংয়ের বালু নিলাম দিইনি।

সাঙ্গু নদীর বালু লোপাট হচ্ছে এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই বিষয়ে আমার জানা নেই। তবে কেউ অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেবে বলে জানান।

এই অভিযোগ কে দিবে?

কেউ যদি এই বালুখেকোদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেয় তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে নামে-বেনামে অনেক মামলা হবে বলে এলাকার সচেতন মহল মনে করেন। তাঁরা যেহেতু প্রভাবশালী তাই কেউ মুখ খুলতে চাই না।

ইতোমধ্যে সাতকানিয়া উপজেলার ১নং চরতী ইউনিয়নের খতিরহাট বাংলা বাজারের উত্তর পার্শ্বে নদী ড্রেজিং এর যে বালু স্তপ করে রাখা হয়েছিল তার ৯০ ভাগ বালুই লোপাট করে নিয়েছে বালু লোপাট করে নিয়েছে চরতী ইউনিয়নের দ্বীপ চরতী ১নং ওর্য়াডের আবদুল মতলবের পুত্র আবুল হোসেন। তিনি স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের অর্থ বিষয়ক সম্পাদক। তাঁর সাথে আছে তাঁরই ভাগিনা শিবির ক্যাডার সদ্য আওয়ামী তাঁতী লীগে যোগদানকারী চরতী ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের ব্রাক্ষণ ডেঙ্গার জিল্লু রহমান, পিতা- মাওলানা নুরুল কবির ও ৪নং ওয়ার্ডের তুলাতলী গ্রামের বজল আহমদ পিতা-অজ্ঞাতের নাম জানা যায়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুরদুরীর একলোক বলেন, কিছুক্ষণ চরতী দুরদুরী এলাকায় অবস্থান করলেই নিজের চোখেই দেখতে পাবেন বালু বোঝাই শত শত ট্রাক। দিন রাত বালু টেনেই চলছে। প্রতি ট্রাক বালুর দাম আড়াইশত টাকা। এখনো দেড়-দুই লাখ বালু হবে খতিরহাট বাংলা বাজারের উত্তর পার্শ্বে ব্রাক্ষণডেঙ্গা বালু স্তপে। প্রশাসন দেখেও না দেখার ভান করে আছে।

আর একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাবাজারের একলোক বলেন, আমাদের জমিতে জোর পূর্বক বালু জমা করে ফসলের ক্ষতি করেছে। চাষীদের যে খাজনা দেওয়ার কথা সেই খাজনাও দেয়নি। এক বছরের জন্য জমি খাজনা নিয়ে এখন আড়াই বছর চলছে। আর খাজনা দেওয়ার চিন্তাই নেই সরকারে। বালু লোপাটের খবর প্রতি নিয়ত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হচ্ছে, প্রশাসনের চোখে কি পড়ে না? কারণ সাতকানিয়া উপজেলা প্রশাসন চোখে কালো চশমা পড়ে আছে।

লোকমুখে প্রকাশ সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার সাংসদ আবু রেজা নদভীর শ্যালক ১নং চরতী ইউনিয়নের সদ্য নির্বাচিত চেয়ারম্যান রুহুল্লাহ চৌধুরীর নের্তৃত্বে এই বালু লোপাট হচ্ছে বলে জানা যায়। তিনি স্থানীয় সাংসদের শ্যালক হওয়াতে কেউ তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে চায়না। এমনকি সরকার কোটি কোটি টাকা রাজস্ব হারালেও সাতকানিয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা তাঁর বিরুদ্ধে কোন আইনগত ব্যবস্থা নিতে ভয় পায়।

কে এই রুহুল্লাহ চৌধুরী ?

১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় চট্টগ্রামের জল্লাদখানা খ্যাত ডালিম হোটেলের তত্বাবধায় কুখ্যাত রাজাকার মুমিনুল হক চৌধুরীর সন্তান রুহুল্লাহ চৌধুরী। তিনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সদস্যও নয় অথচ নৌকা থেকে নমিনেশন নিয়ে চরতী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে তিনি বেপোয়ারা হয়ে উঠেছেন।

প্রথমেই লোপাট করছেন সরকারী নদী ড্রেজিংয়ের বালু, যে বালু থেকে সরকার কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আয় করবে। যে প্রতিনিধি সরকারী রাজস্ব রক্ষা করবে সেই প্রতিনিধিই সরকারী রাজস্বই পকেটস্থ করতেছে তাঁর সিন্ডিকেট নিয়ে।

নদী ড্রেজিংয়ের বালু লোপাটের সাথে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের বালু মহল দেখবাল করার কর্মকর্তার আলী হোসেন ও আশ্রয়ণ প্রকল্পের দেখবাল করার কর্মকর্তা নাজিম উদ্দিনও জড়িত আছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

আমিলাইশ এলাকার একবৃদ্ধ নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এখন এমপি যার ক্ষমতা তাঁর। এখানে আওয়ামী লীগ নেই, আছে এমপি লীগ। এমপি’র শ্যালক তাঁর দলবল নিয়ে নলুয়া-আমিলাইশ ও চরতীর সব বালু খেয়ে ফেলবে, কারো করার কিছুই নেই। এমপি ভালো মানুষ কিন্তু তাঁর শ্যালকতো বালুখেকো, কি করবেন? লিখবেন কোন কাজ হবে না। বরং আরো রোষানলে পড়বেন।