আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ছাত্রীদের পোশাক নির্ধারণ করে দিয়েছে তালিবান। ১৫ আগস্ট তারা আফগানিস্তান দখল করে নেয়ার পর পরই ধারণা করা হয়েছিলো, খড়গ নেমে আসবে নারীদের ওপর। কিন্তু মুখ বন্ধ করে রাখছেন না নারীরা, কথা বলছেন। রাস্তায়ও নামছেন। এবার অনলাইনে তালিবানের পোশাক-আইনের বিরুদ্ধে প্রচার শুরু করেছেন নারীরা। আর এই জোরালো আন্দোলনটির সূচনা করেছেন ইতিহাসের অধ্যাপক ড. বাহান জালালী। এই প্রতিবাদ কর্মসূচীতে নারীরা ব্যবহার করছেন

DoNotTouchMyClothes, #AfghanistanCulture এবং এ ধরনের আরো হ্যাশট্যাগ।

আফগান নারীরা যে পোশাক পরেন; ডিজাইন, হাত বা মেশিনের কারুকাজ ও রঙের বিন্যাসে অত্যন্ত আধুনিক ও আকর্ষণীয়। মাথায় কেউ হ্যাট পরেন, কেউ পর্দা মেনে মস্তক-বন্ধনী পরেন। প্রদেশ বা অঞ্চল ভেদে ডিজাইনে কিছু পার্থক্য থাকলেও আবহমান কাল ধরে এটাই আফগান নারীর বহুল ব্যবহৃত পোশাক গত ২০ বছর এই পোশাকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছেন আফগান তরুণীরা। কেউ কেউ সালোয়ারের বদলে জিন্স পরেন, সেটাও মানিয়ে গেছে সংস্কৃতির সাথে।

তালিবানের পক্ষে একটি ইউনির্ভার্সিটিতে মেয়েরা যে মিছিল-সমাবেশ করেছে, তা রীতিমতো বিস্ময়কর ঠেকেছে সবার কাছে। কারণ এরা সবাই আপাদমস্তক বোরখায় ঢাকা ছিলেন, যা আফগানিস্তানে প্রচলিত নয়। ভিডিওতে দেখা যায়, তালিবানের পতাকা হাতে ওই নারীরা বলছেন, আফগান মেয়েরা যে পোশাক পরে, তা অনৈসলামিক। আমরা শরীয়া আইনের বিরুদ্ধে যায়, এমন নারী স্বাধীনতা চাই না।

তালিবানি পোশাক-নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে অনলাইনে শুরু হওয়া প্রচারাভিযানে অংশ নিয়ে প্রফেসর ড. জালালী বলেন, আমি এই আন্দোলনে সামিল হওয়া জরুরি বলে মনে করেছি। কারণ আফগানিস্তানের জাতীয় পরিচয় ও সার্বভৌমত্ব আক্রমণের মুখে পড়েছে।

আফগান নারীদের ঐতিহ্যবাহী একটি পোশাক পরে সেই ছবি টুইটারে পোস্ট করেছেন আফগানিস্তানের আমেরিকান ইউনিভার্সিটির প্রাক্তন এই শিক্ষক। তিনি লিখেন, এটাই আফগান সংস্কৃতি। আমি আফগানিস্তানের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরেছি। সবাইকে তার ছবিটি শেয়ার করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, মানুষ আফগানিস্তানের প্রকৃত চেহারাটা দেখুক।

একদিন আগে আফগান নারীদের চিরায়ত পোশাক পরে টুইটারে ছবি পোস্ট করেন মানবাধিকার কর্মী স্পোজমাই মাসীদ| #FreeAfganistan হ্যাশট্যাগ দিয়ে তিনি লিখেন, আফগান নারীরা এমন বহুবর্ণা পোশাক পরে থাকেন। কালো বোরখা আফগান সংস্কৃতির অংশ নয়।

তিনি আরো লিখেন, হাজার বছর ধরে আমরা ইসলামী দেশ। আমাদের মা-নানী-দাদীরা আমাদের ঐতিহ্যবাহী রঙিন পোশাক পরেই পর্দা করেছেন। তাদের মাথা ঢাকার চাদর বা আরব সংস্কৃতির বোরখা প্রয়োজন হতো না।

সামাজিক গণমাধ্যমে যে সব মন্তব্য আসছে, তাতে বলা হচ্ছে, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল, যেখানে সমাজ খুব রক্ষণশীল, সেখানেও বোরখা বা নিকাবের চল নেই।

প্রাগে থাকেন আফগান নারী সাংবাদিক মালালী বশীর। তিনি চিত্রকর্মে ফুটিয়ে তুলেছেন আফগান নারীর ঐতিহ্যবাহী পোশাক। পোস্ট করেছেন টুইটারে।

বিখ্যাত নারীদের পাশাপাশি অসংখ্য সাধারণ আফগান নারী তালিবানের পোশাক-নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে অনলাইন আন্দোলনে যুক্ত হয়েছেন।-আমাদের সময়.কম