Home রাজনীতি ঘরে বসে থাকলেও সরকারের পতন দেখছে বিএনপি!

ঘরে বসে থাকলেও সরকারের পতন দেখছে বিএনপি!

38

ডেস্ক রিপোর্ট: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি আর মাত্র ১৫ মাস বা এর কিছু কম-বেশি সময়। সংবিধানের হিসাবমতে, ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে কিংবা ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা। নির্বাচন কমিশনও (ইসি) সেই অনুযায়ী রোডম্যাপ ঠিক করে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। তবে রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক অঙ্গনসহ সর্বত্রই নির্বাচন নিয়ে যত না আলোচনা, তার চেয়ে বেশি আলোচনা ও পর্যালোচনা-বিশ্লেষণ চলছে ‘ষড়যন্ত্রতত্ত্ব’ নিয়ে। এই তত্ত্ব অজানা হলেও এ নিয়ে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের শেষ নেই।

সরকারবিরোধী বিভিন্ন দলের নেতাদের সাম্প্রতিক বিভিন্ন বক্তব্য-মন্তব্য নিয়েও আলোচনা-বিশ্লেষণ চলছে এসব মহলে। ‘রাস্তায় আন্দোলন না করে ঘরে বসে থাকলেও শেখ হাসিনা আর ক্ষমতায় আসতে পারবেন না’—বিএনপির কোনো কোনো নেতার এমন বক্তব্যের বিশ্লেষণ করে এর মর্মার্থ বোঝার চেষ্টা করছেন তারা। গত ২৩ এপ্রিল জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘বাংলাদেশ ইয়ুথ ফোরাম’ আয়োজিত আলোচনাসভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, ‘সরকারের চক্রান্তের উপাদানে যদি আমরা না পড়ি, তাহলে আমরা ঘরে বসে থাকলেও শেখ হাসিনা ক্ষমতায় যেতে পারবেন না এবং আগামী জাতীয় নির্বাচনও করতে পারবেন না।’

‘কী হবে’, ‘কী হচ্ছে’—এমন দুটি ছোট্ট বাক্যকে আলোচ্য বিষয় ধরে রাজনীতির অন্দরে চলছে বড় ও দীর্ঘ আলোচনা। আলোচকেরা সুনির্দিষ্ট তথ্য হাজির করতে না পারলেও বহু অসমর্থিত সূত্রের বরাতে চোখ কপালে ওঠার মতো নানা উপাত্ত, যুক্তি ও মত তুলে ধরছেন। শুধু কি রাজনৈতিক অন্দরেই এমন আলোচনা? না। হাট-বাজারে, পাড়া-মহল্লায়, অলিগলিতে ও বিভিন্ন অফিসে সাধারণ্যের আলোচনায় কান পাতলেও ঘুরেফিরে ষড়যন্ত্রতত্ত্বই মূল উপজীব্য বিষয় হিসেবে শোনা যায়। এসব মহলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্য নিয়েও বিশ্লেষণ চলে।

মির্জা ফখরুল আন্দোলনের সংজ্ঞা হিসেবে ‘হরতাল-অবরোধ’ মানতে নারাজ। গত ১৭ আগস্ট গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেছেন, ‘হরতাল-অবরোধই আন্দোলন নয়। মানুষকে আস্তে আস্তে তৈরি করে জনসম্পৃক্ত করে রাস্তায় নামানো হলো আন্দোলন। সেই কাজটাই আমরা করছি। আমরা কাছাকাছি চলে এসেছি সরকারের পতন ঘটানোর।’ গত ৩ সেপ্টেম্বর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক আলোচনাসভায় বিএনপির মহাসচিব বলেছেন, ‘আমরা এবার কোনোমতেই পরাজিত হব না। কারণ, এবার বিজয় লাভ করতে হবে, এর কোনো বিকল্প নেই।’

ষড়যন্ত্রের কথা বলছেন খোদ রাষ্ট্রের নির্বাহী প্রধান শেখ হাসিনাও। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল শীর্ষ নেতারা প্রায়ই বলছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একটি বুলেট তাড়া করছে। রাজনীতি ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, সরকারপ্রধান যখন প্রকাশ্যে প্রায়শই ষড়যন্ত্রের কথা বলেন, তখন সেটিকে হালকা ভাবার কোনো কারণ নেই। কেননা, সব সংস্থার দেওয়া তথ্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে থাকে। সংস্থার এবং নিজস্ব ম্যাকানিজমে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতেই প্রধানমন্ত্রী সাধারণত এ ধরনের কথা জনসমক্ষে নিয়ে আসেন।

গত ৩ আগস্ট গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির নবনির্বাচিত বোর্ড সদস্যরা সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এ সময় দেওয়া বক্তব্যে শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘২০১৪-এর নির্বাচনের আগে চক্রান্ত করেছে, ২০১৮-এর নির্বাচনের আগে করেছে, আবার এখন নির্বাচন যখন ঘনিয়ে আসছে, তখন শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে সরাতে হবে।’ সেদিন প্রধানমন্ত্রী এ-ও বলেছেন, ‘যেখানে রাসেলকে পর্যন্ত খুন করল, আর সেই পরিবার থেকে বেঁচে এসে সরকারে এলাম, সাফল্য এনে দিলাম, বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা এনে দিলাম, এটা অনেকেই পছন্দ করবে না। কাজেই তারা তত্পর আছে সারাক্ষণই। আমি জানি, তাদের তৎপরতা অনেক বেশি। তাদের খবরও আমি রাখি, আমার তো অচেনা কেউ নাই। তারা তাদের চক্রান্ত করেই যাচ্ছে।’

জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে গত ৩১ আগস্ট বাংলাদেশ কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে ছাত্রলীগ আয়োজিত আলোচনাসভায় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘বিদেশি সহযোগিতা নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এখনো ষড়যন্ত্র চলছে। এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।’ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম শাহাদতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে দেওয়া বাণীতেও প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘স্বাধীনতাবিরোধী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী ও গণতন্ত্রবিরোধী চক্র এখনো নানাভাবে চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে।’ এর আগে এ বছরের ৯ জানুয়ারি জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণেও প্রধানমন্ত্রী ষড়যন্ত্রের কথা বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী সেদিন বলেছেন, ‘বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা অনেকেরই সহ্য হচ্ছে না। এই অগ্রযাত্রা রুখে দিতে দেশ-বিদেশে বসে বাংলাদেশবিরোধী শক্তি, স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি নানা ষড়যন্ত্র করছে।’

২০১৬ সালের ৩১ অক্টোবর একটি অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘এখনো ষড়যন্ত্র চলছে। কখনো কখনো মনে হয়, একটা বুলেট আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনার পিছু তাড়া করছে।’ জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে গত ২৩ আগস্ট সচিবালয়ে বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা ও কর্মচারী ঐক্য পরিষদ আয়োজিত আলোচনাসভায় ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘এবার আমরা খুব সজাগ, কে কোথায় কী করছে আমরা জানি, বিদেশিদের দরবারে, কোথায় কোথায় বৈঠক হচ্ছে। ২১ আগস্ট ব্যর্থ হয়েছে। এখনো ষড়যন্ত্র আছে, আমরা জানি। নির্বাচন হলে শেখ হাসিনাকে পরাজিত করা সম্ভব নয়। সে কারণেই তাকে হত্যার চেষ্টা। এসব চক্রান্তে চোখ-কান আমাদের খোলা রাখতে হবে। এবার আমরা চোখ-কান খোলা রেখেছি।’

‘ষড়যন্ত্র চলছে’—আওয়ামী লীগের এই বক্তব্যের জবাবে বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব সম্প্রতি বলেছেন, ‘আমরা তো প্রকাশ্যেই বলছি, আপনাদের পতন ঘটাব, তাহলে এটা ষড়যন্ত্র হবে কেন?’

‘ষড়যন্ত্র’ নিয়ে কথা উঠেছে সংসদেও। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড নিয়ে গত ৩১ আগস্ট সংসদে আনা একটি সাধারণ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার চক্রান্ত হচ্ছে। এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে সরকারি দলের লোকজনও জড়িত। কী ধরনের ষড়যন্ত্র চলছে, তা আমি সংসদে বিস্তারিত বলতে পারছি না। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একান্তে কথা বলতে পারলে তাকে আমি বলতে পারতাম। ঐ ষড়যন্ত্রের সঙ্গে অর্থের বিনিময়ে আমাদের দলের লোকও জড়িত।’

আবুল কালাম আজাদের এই বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে পরদিন সংসদে পয়েন্ট অব অর্ডারে ফ্লোর নিয়ে বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ বলেছেন, ‘সরকারি দলের একজন সংসদ সদস্য সংসদে দাঁড়িয়ে এ বক্তব্য দিয়েছেন। আমি এ বিষয়ে স্পষ্ট জানতে চাই। এটি উড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই। আসলেই এ ধরনের চক্রান্ত হচ্ছে কি না, কারা এই চক্রান্তের সঙ্গে জড়িত, তা বের করতে গভীরভাবে তদন্ত করার দাবি জানাচ্ছি।’
ইত্তেফাক