Home সারাদেশ কালুরঘাট শিল্পাঞ্চলে পানির নিরাপত্তা নিশ্চিতে গোলটেবিল আলোচনা

কালুরঘাট শিল্পাঞ্চলে পানির নিরাপত্তা নিশ্চিতে গোলটেবিল আলোচনা

38

ডেস্ক রিপোর্ট: ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেড, ফরেন ইনভেস্টরস’ চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফআইসিসিআই) এবং ওয়াটারএইড বাংলাদেশ’এর যৌথ উদ্যোগে সম্প্রতি ‘এক্সেলারেটিং চেঞ্জ: ডিসেন্ট্রালাইজিং দ্য কনভারসেশন অন ওয়াটার স্টুয়ার্ডশিপ’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিশ্ব পানি দিবস উপলক্ষে ১৮ মার্চ রেডিসন ব্লু চট্টগ্রাম বে ভিউ’তে এই আয়োজন করা হয়।
দ্রুত ও অপরিকল্পিত শিল্পায়নের ফলে দেশে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর হ্রাস পাচ্ছে। এমনকি রাজধানীর বাইরের শহরগুলোতেও এই চিত্র ব্যতিক্রম নয়। বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামে গত ৪০ বছরে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ২০ মিটার কমে গিয়েছে। এই তীব্র পানি সংকটের কারণে চট্টগ্রামের কালুরঘাট শিল্প এলাকা নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে আলোচনা ও সংকট নিরসনে পরিবর্তনের পথ অনুসন্ধানে চলতি বছরের বিশ্ব পানি দিবসের মূল প্রতিপাদ্যের সাথে সামঞ্জস্য রেখে উল্লেখিত গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করা হয়। আলোচনায় সংকট সমাধানে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার আহ্বান জানানো হয়।
ওয়াটারএইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিন জাহান সহ অনুষ্ঠানের মূল আলোচকদের মধ্যে ছিলেন জাভেদ আখতার, ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা; এবং জাহাঙ্গীর সাদাত, পরিচালক, এফআইসিসিআই, এবং চেয়ারম্যান, কোরিয়ান এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন (কেইপিজেড)। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক এবং আইটিএন-বুয়েটের পরিচালক ড. তানভীর আহমেদ কালুরঘাট ভারী শিল্প এলাকার র‍্যাপিড সিচুয়েশন অ্যাসেসমেন্টের ফলাফল এবং প্রাসঙ্গিক সুপারিশ উপস্থাপন করেন। এছাড়াও আয়োজনে বিভিন্ন বিশিষ্ট শিল্প প্রতিনিধি, শিক্ষাবিদ এবং সেবা-ভিত্তিক সরকারি প্রতিষ্ঠানের সম্মানিত প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
মূল্যায়নে দেখা গেছে, চট্টগ্রামে শিল্প দূষণ – বিশেষত শিল্পবর্জ্যের ফলে পানি দূষণ – ক্রমশ বাড়ছে, যা ভূপৃষ্ঠের পানির উৎস সমূহের জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করছে। ড. তানভীর আহমেদ পরিবেশ অধিদপ্তরকে পানির উত্সগুলি পুরোপুরি ধ্বংসের মুখে পৌঁছানোর আগেই শিল্প প্রতিষ্ঠান সমূহের উপর সতর্কতা নির্দেশনা বাড়ানোর সুপারিশ করেন। তিনি আরো যোগ করেন যে, তথ্যনির্ভর সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট শিল্প এলাকার একটি বিস্তারিত নিরীক্ষণ আবশ্যক।
বক্তারা পানির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং গুণগত মান ধরে রাখতে কালুরঘাটের শিল্প প্রতিষ্ঠান সমূহের মধ্যে আরো উন্নত সমন্বয় এবং ব্যবসায় স্বার্থের উর্দ্ধে উঠে সামষ্ঠিক কল্যাণ বিবেচনার উপর জোর দেন। সেইসাথে, সংশ্লিষ্ট খাতের অংশীজনেরা পানি ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন কার্যকরী পন্থা ও কৌশল নিয়েও আলোচনা করেন।
ওয়াটারএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিন জাহান বলেন, “বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান সমূহ নিজেদের শিল্প কার্যক্রমে পানি ব্যবস্থাপনার কার্যকরী উদাহরণ সৃষ্টি করছে। আমাদের সকলকে এই উদাহরণগুলো থেকে শিক্ষা নিতে হবে। এটি প্রমাণ-নির্ভর অ্যাডভোকেসি করতে এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ৬ অর্জনে বেসরকারি খাতের অবদান স্বীকার করে সরকারের সাথে সংলাপের পথ তৈরিতে সহায়তা করবে। সেইসাথে, এ ধরণের শিল্প-অংশীদারিত্ব মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্পপ্রতিষ্ঠান সমূহের জন্য পানি ব্যবস্থাপনার টেকসই ও উন্নত কৌশল শেখারও সুযোগ তৈরি করবে”।
ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জাভেদ আখতার বলেন, “সমাজ, পরিবেশ ও অর্থনীতির ভারসাম্য রক্ষার জন্য পানি অপরিহার্য। বিশুদ্ধ পানি সুবিধা একটি মৌলিক মানবাধিকার। ৭শ’রও বেশি নদী নিয়ে গঠিত ব-দ্বীপ আমাদের বাংলাদেশ, যা জলবায়ু পরিবর্তন, দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং অদক্ষ পানি ব্যবস্থাপনা-সহ বিভিন্ন কারণে পানি বিপর্যয়ের সম্মুখীন হচ্ছে। বাংলাদেশের বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রাম বিভিন্ন শিল্পের প্রাণকেন্দ্র, যেগুলো পানির উপর বহুলাংশে নির্ভর করে। আমাদের পণ্যের উৎপাদন এবং ব্যবহারের জন্যও চাই পানির নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ। তাই, একটি সংলাপ এবং প্ল্যাটফর্ম চালুর জন্য চট্টগ্রাম ও কালুরঘাটের ভারী শিল্প এলাকাকে বেছে নিয়েছে ইউবিএল, এফআইসিসিআই এবং ওয়াটারএইড, যার মাধ্যমে আমাদের যৌথভাবে পরিকল্পনা এবং কাজ করা আরো সহজ হয়ে উঠবে। আমরা জানি যে, বহু অনিয়ন্ত্রিত শিল্প প্রতিষ্ঠান ভূগর্ভস্থ পানির মাত্রা হ্রাস এবং পানি দূষণের বিরূপ প্রভাব সম্পর্কে অবগত নয়। তাদের পানির প্রকৃত অর্থনৈতিক মূল্য সম্পর্কে সম্যক ধারণা নেই। এক্ষেত্রে আমাদের অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে এবং টেকসই ব্যবসায়িক অনুশীলন প্রচার ও নিশ্চিতের জন্য সম্মিলিতভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। পানি নিরাপত্তা রক্ষা প্রসঙ্গে আলোচনা আরম্ভের মাধ্যমে আমরা পানির ন্যায্য, পরিবেশগতভাবে টেকসই এবং অর্থনৈতিকভাবে উপকারী ব্যবহার নিশ্চিত করার ওপর জোর দিচ্ছি”।
জাহাঙ্গীর সাদাত, পরিচালক, এফআইসিসিআই, এবং চেয়ারম্যান, কোরিয়ান এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন (কেইপিজেড), বলেন, “যেহেতু বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার দিকে অগ্রসর হচ্ছে, সেহেতু পরিবেশগত নিরাপত্তা সহ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনায় রেখে শিল্প প্রতিষ্ঠান সমূহের সচেতন ও দায়িত্বশীল আচরণ নিশ্চিত করা জরুরী। এফআইসিসিআই’এর সদস্য প্রতিষ্ঠান এবং চট্টগ্রাম ভিত্তিক অন্যান্য স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান সমূহ পানি সম্পদ রক্ষার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। প্রতিষ্ঠান সমূহ তাদের কারখানা এবং সরবরাহ কার্যে উদ্ভাবনী পদক্ষেপ গ্রহণ করছে, যা এই শিল্পের জন্য সেরা অনুশীলন হিসাবে বিবেচনা করা যেতে পারে। আমি আশাবাদী, যে এই গোলটেবিল সংলাপ দেশের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান সমূহের জন্য টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থা নিশ্চিতের পথে একটি মাইলফলক হবে”।
গোলটেবিল আলোচনায় উদ্ধৃত পরামর্শ এবং মতামত টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিল্পখাতের অংশীজনদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করবে এবং তাদের মধ্যে সহযোগিতার সম্পর্ককে আরো জোরদার করবে বলে আশা করা যায়।