Home কুটনৈতিক ও প্রবাস কপের বিজ্ঞান দিবস পালিত: অনানুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু হয়েছে পুরোদমে

কপের বিজ্ঞান দিবস পালিত: অনানুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু হয়েছে পুরোদমে

48

মিশর থেকে জিয়াউল হক মুক্তা: গতকাল ১০ নভেম্বর ২০২২ কপের বিজ্ঞান দিবস হিসেবে পালিত হয়েছে। এই উপলক্ষ্যে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে সম্পাদিত গুরুত্বপূর্ণ অনেক গবেষণা ও প্রতিবেদনের ফলাফল বের করে আনতে দিনব্যাপি বিভিন্ন প্যানেল আলোচনা ও অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে। এসব আলোচনা ও অনুষ্ঠানের তথ্যের ভিত্তিতে ‘জলবায়ু বিজ্ঞানের ১০টি নতুন অন্তঃদৃষ্টি ২০২২’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে। এই প্রতিবেদন সক্রিয় ব্যক্তি থেকে শুরু করে সভ্য সরকারগুলোকে তাদের কার্যক্রমকে গতি দিতে আলোড়িত করবে নিঃসন্দেহে।
 
এবারের কপ শুরুর আগেই জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচিবা ইউএনইপি বরাবরের মতো ‘বাৎসরিক নির্গমন ফারাক প্রতিবেদন ২০২২’ বা অ্যানুয়াল এমিশন গ্যাপ রিপোর্ট ২০২২ প্রকাশ করেছে। ‘জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অবদান’ হিসেবে প্যারিস চুক্তির সদস্য দেশগুলো নির্গমন কমানোর জন্য যে অঙ্গীকার দাখিল করেছে, সেগুলোকে পর্যালোচনা করে এই প্রতিবেদন বলছে যে গ্লাসগোয় অনুষ্ঠিত বিগত কপ-২৬ থেকে আজ পর্যন্ত যেসব এনডসি বা ন্যাশনালি ডিটারমাইন্ড কনট্রিবিউশন দাখিল করা হয়েছে, ২০৩০ সালের অনুমিত হ্রাসকৃত নির্গমনের এক শতাংশেরও কম। প্রতিবেদন বলছে, এমনকি গত কত থেকে আজ পর্যন্ত নির্গমন হ্রাসের অগ্রগতিও চরমভাবে অপর্যাপ্ত।
 
ক্রমবর্ধমান জলবায়ু দুর্যোগ এড়াতে ইউএনইপি-র এই প্রতিবেদন বিশ্ববিস্তৃত উচ্চমাত্রার দ্রুত ও পদ্ধতিগত রূপান্তর প্রত্যাশা করছে। প্রতিবেদন বলছে যে একুশ শতকের শেষ নাগাদ ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে বা প্রত্যাশিত ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি বায়ুমন্ডলের তাপমাত্রা বাড়তে না দেয়ার যে লক্ষ্য, তা অর্জন করতে বিদ্যমান চর্চার বিপরীতে গিয়ে অতিউচ্চ মাত্রায় নির্গমন হ্রাস করতে হবে। এজন্য বর্তমান নীতির পরিবর্তন প্রত্যাশা করছে এই প্রতিবেদন।
 
প্রতিবেদন বলছে যে নির্গমন হ্রাসে দেশগুলোর বিদ্যমান শর্তহীন প্রতিশ্রুতিগুলোর বাস্তবায়ন হলে এ শতকের শেষ নাগাদ তাপমাত্রা বাড়বে প্রাক শিল্পায়ন যুগের তাপমাত্রার চেয়ে ২.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর শর্তাধীন প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন হলে তা বাড়বে ২.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
 
এটা আরো বলছে যে আগামী আট বছর চরম নজিরবিহীন মাত্রায় গ্রিনহাউজ গ্যাসের নির্গমন কমাতে পারলেই কেবল প্যারিস চুক্তির লক্ষ্য অর্জিত হতে পারে। প্রতিবেদন অনুমান করছে যে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখতে হলে বিদ্যমান নীতির আওতায় প্রতিশ্রুত নির্গমন হ্রাসের তুলনায় যথাক্রমে আরো ৩০ শতাংশ ও ৪৫ শতাংশ কমাতে হবে।
 
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে ব্যাপক মাত্রায় নির্গমন হ্রাস করতে হলে অনতিবিলম্বে সকলকে পদ্ধতিগত রূপান্তরের পথে এগুতে হবে। শূন্যমাত্রায় নির্গমন হ্রাসের দিকে রূপান্তর করতে হলে বিদ্যুৎ সরবরাহ, শিল্পখাত, পরিবহন ও স্থাপনা নির্মাণে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় নির্গমন কমাতে হবে। খাদ্য ব্যবস্থার দ্রুত টেকসই সংস্কার করতে হবে। অর্থায়ন পদ্ধতি হলো সকল খাতে রূপান্তরের গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক, তাই এর পুনর্গঠন করতে হবে। পুনর্গঠনের জন্য অর্থবাজারকে আরো দক্ষ হতে হবে, কার্বনমূল্য চালু করতে হবে, আর্থিক আচরণের মৌলিক রূপান্তর করতে হবে, কম কার্বন নির্গমনকারী প্রযুক্তির বাজারজাত করতে হবে, কেন্দ্রীয় ব্যাংগুলোকে সক্রিয় হতে হবে, পারস্পরিক সহযোগিতার জন্য দেশগুলোর মধ্যে জলবায়ু ক্লাব গঠন করতে হবে এবং ন্যায্য রূপান্তরের অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠা করতে হবে। 
 
গতকাল দিনব্যাপি বিশ্বের অনেক সরকারি, আন্তঃসরকারি, বেসরকারি ও ব্যক্তিখাতের অনেক আলোচিত বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণা ও প্রতিবেদন থেকে সবার শিক্ষার সুযোগ সম্প্রসারিত হবে। কিন্তু একই সাথে এ অভিজ্ঞতা ভোলার নয় যে অতীতে বিজ্ঞানের নির্দেশনার অন্তত ৪০ বছর পরে বিশ্বের নীতি নির্ধারকগণ জলবাযু পরিবর্তনের বিষয়টিতে নজর দিয়েছিলেন এবং ইউএনএফসিসিসি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এখনও পর্যন্ত বিজ্ঞানের নির্দেশনাকে উপেক্ষা করেই পুঁজিবাদি-সমাজতান্ত্রিক সব দেশ চরম উগ্র জাতীয়তাবাদি রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সমস্যাটি বিবেচনা করছেন। ধ্বংসাত্মক উন্নয়ন যে গাছের ডালে বসে সে ডাল কাটার নামান্তর সেটা বিশ্বনেতৃত্ব বুঝলেও উগ্রজাতীয়তাবাদি অন্ধত্বের কারণে আশু কর্মসূচি প্রণয়নে তারা তা বিবেচনা করতে পারছেন না।
 
দিনটিকে বিজ্ঞান দিবস হিসেবে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হলেও তরুণদের উপরও বিশেষ মনযোগ দেয়া হয়েছে। এদিন প্রচুর পরিমাণে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু হয়েছে কপ, সিএমপি, সিএমএ, সাবস্টা, এসবিআই ও এসবি’র ধারায়। এসবের মূল নির্দেশনা হচ্ছে প্যারিস চুক্তির বাস্তবায়নের দিকে। অনানুষ্ঠানিক আলোচনাগুলোর পাশাপাশি মাত্র কয়েকটি কন্টাক্ট গ্রুপে আলোচনা শুরু হয়েছে। প্রথম সপ্তাহের উচ্চ পর্যায়ের সভার নির্দেশনা, অফিশিয়াল পার্শ্বসভা ও বিশেষ দিবসভিত্তিক আলোচনাগুলো যদি অনানুষ্ঠানিক সভাগুলোকে যথাযথ দিক নির্দিশনা দিতে পেরে থাকে, তাহলে হয়তো দ্বিতীয় সপ্তাহে অধিকতর সংখ্যায় কন্টাক্ট গ্রুপ গঠন হবে এবং এগুলোর সভা বৃদ্ধি পাবে, মন্ত্রিপর্যায়ের সভার অনুমোদন পাবে, ড্রাফটিং গ্রুপ হবে, টেক্সট হবে এবং চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে।  ।