Home সারাদেশ এশিয়ার সর্ববৃহৎ সূর্যপুরী আম গাছ দেখতে মানুষের ভিড়

এশিয়ার সর্ববৃহৎ সূর্যপুরী আম গাছ দেখতে মানুষের ভিড়

62

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি: চলতি মৌসুমে তিনশ থেকে সাড়ে তিনশ মন আম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এশিয়া মহাদেশের বৃহৎ সূর্যপুরী আম গাছে। দূর থেকে বটগাছের মতো দেখতে বিশালাকারের এই আমগাছের অবস্থান ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার আমজানখোর ইউনিয়নের হরিণমারী সীমান্তের মন্ডুমালা গ্রামে। প্রায় দুই বিঘা জমিজুড়ে ডালপালা ছড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে শত বছর বয়সী আমগাছটি। দেশ-বিদেশের পর্যটকরা এক নজরে গাছটিকে দেখার জন্য প্রতিনিয়ত মন্ডুমালা গ্রামে ভিড় করছেন।

অসংখ্য ইতিহাসের নীরব সাক্ষী প্রাক ঐতিহাসিক যুগের প্রাচীন এই সূর্যপুরী আমগাছ। উত্তরের শান্ত জনপদের এ গাছটির ডালপালার দৈর্ঘ্য প্রায় ৯০ ফিট। আমগাছের আসল বয়স কত তার সঠিক উত্তর কেউ দিতে পারছে না। তবে এলাকার প্রবীণদের দাবি, গাছটির বয়স ২২০ বছরের কম নয়।

ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, আমের একটি জাতের নাম সূর্যপুরী। ঠাকুরগাঁওয়ের মানুষের প্রিয় এক আমের চাহিদা পুরো দেশজুড়ে। সুস্বাদু, সুগন্ধী, রসালো আর ছোট আঁটি সূর্যপুরীর বৈশিষ্ট্য। গাছটির উচ্চতা প্রায় ৮৫ ফুট, পরিধি প্রায় ৩৫ ফুট। মূল গাছের তিন দিকে অক্টোপাসের মতো মাটি আঁকড়ে ধরেছে ১৯টি মোটা ডাল।

দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে নিজ চোখে আম গাছটি দেখার জন্য প্রতিদিন ছুটে আসছেন দর্শনার্থীরা। গাছকে দেখেই ডালের উপরে ওঠে বিভিন্ন অঙ্গ-ভঙ্গিতে ছবি তুলছেন তারা। শিশু থেকে শুরু করে বয়োবৃদ্ধ দর্শনার্থীরাও গাছের ডালের উপরে উঠে ছবি তুলে মনের স্বাদ মেটানোর চেষ্টা করছেন।

জানা গেছে, ওই এলাকার বাসিন্দা সাইদুর মোল্লা ও নূর ইসলাম পূর্ব পুরুষের লাগানো এই গাছটির মালিকানা তারা পৈত্রিক সূত্রে পেয়েছেন। প্রাচীন আম গাছটির দর্শন বাবদ ২০ টাকা নেওয়া হয়। প্রতি বছরের মতো এবার সাইদুর রহমান নামে একজন গাছের আমগুলো ৫০ হাজার টাকা দিয়ে লিজ নিয়েছেন এক বছরের জন্য।

দর্শনার্থীরা বলেন, দুই বিঘা জমিজুড়ে একটি আমগাছ রয়েছে তা বহুদিন ধরে শুনেছি। কিন্তু বাস্তবে তা চোখে দেখা হয়নি। এখন সরাসরি দেখতে পেরে মুগ্ধ হলাম। তবে কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা উচিত বলে আমি মনে করি। রংপুর থেকে আসা শাহাজাহান বলেন, আম গাছ যে এত বড় হতে পারে সেটি চিন্তার বাইরে। অনেকে গাছটি দেখে মনে করবে এটি একটি কৃত্রিম গাছ। আসলে তা নয়, এটা একটি প্রাকৃতিক গাছ অনেকেই আসে গাছটিতে দেখতে তেমনি আমিও পরিবারকে নিয়ে এসেছি।

আম গাছের মালিক সাইদুর মোল্লা জানান, অন্যান্য বছরের মতো এবারও আমের ভালো ফলন এসেছে। যদি কোনো প্রাকৃতিক দূর্যোগ না হয় তাহলে ৩০০ থেকে ৩৫০ মন আম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ গাছকে দেখতে বিভিন্ন জায়গা থেকে দর্শনার্থীরা আসে। কিছুটা সরকারি সহযোগিতা পেয়েছি। আরও সহযোগিতা পেলে একটি ভালো পরিবেশের ব্যবস্থা করা যাবে।

আরেক মালিক নূর ইসলাম বলেন, বয়সের ভারে ডালপালা নুয়ে পড়লেও গাছটির শীর্ষভাগে আছে সবুজের সমারোহ এখনও পুরো গাছজুড়ে আম ধরে। এবারও গাছটিতে প্রচুর মুকুল ধরেছে। গত বছর এই গাছ থেকে প্রায় এক লাখ টাকার আম বিক্রি করা হয়েছিল। এবারও প্রচুর মুকুল ধরেছে। আশা করি, এবার লক্ষাধিক টাকার আম বিক্রি হবে।

এ বিষয়ে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা চেয়ারম্যান আলী আসলাম বলেন, বিভিন্ন জায়গা থেকে দর্শনার্থীরা আসছেন আম গাছটি দেখতে। গাছটিকে ঘিরে পর্যটন গড়ে উঠেছে। যাওয়ার রাস্তা সরু হওয়ায় বড় করার প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন থেকে বিভিন্ন ফান্ড থেকে গেস্ট হাউজ, মসজিদসহ অন্যান্য ব্যবস্থা করা হয়েছে। আরেকটি প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি এই জায়গাকে ঘিরে একটি পার্কের ব্যবস্থা করার জন্য।

এ ব্যাপারে ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ঠাকুরগাঁওয়ে এই আম গাছটি এশিয়া মহাদেশের মধ্যে সবচেয়ে বড় সূর্যপুরী আম গাছ। গাছটি রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য আমরা সার্বক্ষণিকভাবে তদারকি করি।