Home মতামত এরা মালই থেকে গেল, মানুষ হলো না

এরা মালই থেকে গেল, মানুষ হলো না

37

তাছলিমা নাসরিন: আমি মৃত্যুর কথা বললে এক পাল মূর্খ এসে ভিড় করে, যেন মৃত্যুটা তাদের সম্পত্তি, যেন আমি ভুল করে তাদের সম্পত্তিতে হাত দিয়েছি। তারা বেদম হেসে বলে, ‘দেখলে তো, ধর্মে বিশ্বাস না করেও তোমাকে মৃত্যু নিয়ে ভাবতে হচ্ছে। এবার তো বুঝলে যে আল্লাহ আছে?’
মৃত্যু হবে, এ নিয়ে দুঃখ হবে আমার। এ স্বাভাবিক। এর সঙ্গে ধর্মের বা ঈশ্বরের বা আল্লাহর সম্পর্ক তো এক বিন্দু নেই। একটি বাস্তবতা আরেকটি রূপকথা।
তারা বলতে চায়, মৃত্যুটা আল্লাহ দিচ্ছে, সুতরাং মৃত্যুকে স্বীকার করা মানে আল্লাহর অস্তিত্বকে স্বীকার করা। তারা এও বলে মৃত্যু হলেই নাকি বুঝবো হাশরের ময়দান কেমন, কেমন জাহান্নামের আগুন। এমন ভাবে তারা বলে যেন তাদের মৃত্যু হয়েছিল, তারা ময়দান দেখে এসেছে, জাহান্নামের আগুনেও কিছু পুড়ে এসেছে বা জান্নাতের হুরির বুকও দু’বার টিপে এসেছে। এমনই দ্বিধাহীন কণ্ঠস্বর তাদের।
পৃথিবীর আর কোনও রূপকথাকে মানুষ এত সত্যি বলে মনে করে কি? কোনও রকম প্রমাণ ছাড়া কোনও কিছুর অস্তিত্বকে মানুষ এমন গভীরভাবে বিশ্বাস করে কি? এসবের একটিই উত্তর, না।
মৃত্যু নিয়ে এই মূর্খদের কোনও দুঃখ নেই। কারণ মৃত্যুভয়ে যে পূণর্জন্মের গল্প ফাঁদা হয়েছিল এককালে, সেই গল্পের ফাঁদে পা দিয়ে তারা মনে করে সত্যি বুঝি তারা আবার জন্ম নেবে। জন্ম নিয়ে অনন্তকাল সুখ করবে।
আপন জনের মৃত্যুতেও এরা কষ্ট পায় না, কাঁদে না। বলে ”আল্লাহর মাল আল্লাহ নিয়েছে। আল্লাহ যা করে, মঙ্গলের জন্যই করে।”
এরা মালই থেকে গেল, মানুষ হলো না। আল্লাহ রসুলের গল্প এদের মূর্খ তো বানিয়েছেই, পাষাণও বানিয়েছে।-লেখক: একজন নারীবাদী।

*মতামত বিভাগে প্রকাশিত সকল লেখাই লেখকের নিজস্ব ব্যক্তিগত বক্তব্য বা মতামত।