Home রাজনীতি একতরফা নির্বাচনের তফসিল দেশবাসী মানবে না।

একতরফা নির্বাচনের তফসিল দেশবাসী মানবে না।

33

বাসদের ৪৩ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে নেতৃবৃন্দ

স্টাফ রিপোটার: বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ এর ৪৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী এবং সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের ১০৬তম বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে বাসদ সাধারণ সম্পাদক কমরেড বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে একতরফা নির্বাচনের তফসিল সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করবে না এবং আন্দোলনকারী দল ও দেশবাসী তা মানবে না।

আজ ১০ নভেম্বর ২০২৩ বিকাল সাড়ে ৩টায় ঢাকার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাসদ সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ। বক্তব্য রাখেন সহকারি সাধারণ সম্পাদক কমরেড রাজেকুজ্জামান রতন, সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য নিখিল দাস, সমাবেশ পরিচালনা করেন বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য জুলফিকার আলী।

সমাবেশে কমরেড বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলতে বলতেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী কাজ করছে। সংবিধান সংশোধন করে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টির পথ রুদ্ধ করা, অগণতান্ত্রিক সংশোধনী ও নিবর্তনমূলক কালো আইন প্রবর্তন, সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর গণতান্ত্রিক চরিত্র ধ্বংস করা, পাটকল, সুতাকল, চিনিকলসহ রাষ্ট্রীয় শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা, দেশি-বিদেশি লুটপাটকারীদের স্বার্থে আইন প্রণয়ন, মুক্তবাজার অর্থনীতির নামে মুক্তভাবে লুটপাট করা, বাজার সিন্ডিকেটের হাতে জনগণকে জিম্মি করে ফেলা, ভারতকে ট্রানজিট সুবিধাসহ বন্দর ব্যবহার করতে দেয়া, জাতীয় সম্পদসমূহ বিদেশিদের কাছে ইজারা দেয়া, মেগা প্রকল্পের নামে ব্যয়বহুল প্রকল্পের দুর্নীতির বোঝা জনগণের কাঁধে চাপানো, শিক্ষা চিকিৎসাকে বাণিজ্যিক ও ব্যয়বহুল করার ফলে স্বাধীনতার স্বপ্নসমূহ আজ ধুলিস্যাত হয়ে গেছে। দেশে মাথাপিছু আয়, প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি আর উন্নয়নের গল্প জনগণের কাছে এখন আষাঢ়ে গল্পের মত মনে হয়। জনগণ দেখছে দ্রব্যমূল্যের অসহনীয় মুল্য বৃদ্ধি, ব্যাংক লুট, টাকা পাচার, রিজার্ভ খালি হয়ে যাওয়া আর ব্রিজ- হাইওয়ে- টানেল-মেট্রোরেলের অস্বাভাবিক টোল এবং ভাড়ার চাপ। অল্প কিছু লুটপাটকারীদের জন্য বেহেশত বানিয়ে জনগণের জন্য দেশটাকে জাহান্নাম বানিয়ে ফেলেছে সরকার।

তিনি গার্মেন্টস শ্রমিকদের জন্য ঘোষিত মজুরিকে অগ্রহণযোগ্য আখ্যায়িত করে মজুরি পুনঃনির্ধারণ করে কমপক্ষে ২৩ হাজার টাকা নির্ধারণের দাবি জানান। চাল, ঢাল, আলু, ডিম, তেল, চিনিসহ খাদ্য পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির হোতাদের গ্রেফতারের দাবি জানান তিনি। কৃষি ও কৃষকের স্বার্থে কৃষি উপকরণের দাম কমানোসহ বিনা সুদে কৃষি ঋণের দাবি জানান।

তিনি ২০১৪, ২০১৮ সালের নির্বাচন থেকে শিক্ষা নিয়ে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন নয় বরং নিরপেক্ষ তদারকি সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করেন এবং নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কার করে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থা চালুর দাবি করেন।

আওয়ামী লীগ সরকারের দমন পীড়নের প্রতিবাদ করে তিনি বলেন, অর্থনৈতিক দুর্দশা এবং রাজনৈতিক সংকট নিরসনে সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের বিকল্প নেই। সকল রাজনৈতিক মহলের মত উপেক্ষা করে একতরফা নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা থেকে বিরত থাকার জন্য তিনি নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী পুঁজিবাদ আজ শোষণ, লুণ্ঠন চালিয়ে মানুষের জীবন ও প্রকৃতির ভারসাম্য ধ্বংস করছে। যুদ্ধ লাগিয়ে অস্ত্র ব্যবসা, খাদ্যপণ্যের ব্যবসা যেমন করছে তেমনি সাধারণ মানুষকে যুদ্ধের খোরাকে পরিণত করে চলেছে। প্যালেস্টাইনের উপর বর্বর ইসরায়েলি হামলার নিন্দা করে তিনি যুদ্ধ বন্ধ ও প্যালেস্টাইনের আবাসভুমি প্যালেস্টাইনবাসীর কাছে ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানান। শোষণ, লুণ্ঠন, যুদ্ধের বিপরীতে সমাজতন্ত্রই মানুষের মুক্তির পথ দেখাবে বলে তিনি সমাজতন্ত্রের আন্দোলনকে শক্তিশালী করার আহ্বান জানান।

কমরেড রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, শ্রমিক সংগঠনসমূহের দীর্ঘদিনের দাবি গণতান্ত্রিক শ্রম আইন প্রণয়ন। তা না করে সরকার অত্যাবশ্যক পরিষেবা বিল পাশ করে অর্জিত অধিকার হরণ করেছে। গার্মেন্টস শ্রমিকেরা বাঁচার মতো মজুরির দাবিতে আন্দোলন করায় তাদের গুলি করে হত্যা কর হচ্ছে।

তিনি শ্রম আইনের অগণতান্ত্রিক ধারাসমূহ বাতিল করে গণতান্ত্রিক শ্রম আইন প্রণয়ন এবং শ্রমিক স্বার্থ বিরোধী অত্যাবশ্যক পরিষেবা আইন বাতিলের দাবি জানান।

রতন শ্রমিকদের জাতীয় ন্যূনতম মজুরি ২০ হাজার টাকা ঘোষণ করে মালিকানা নির্বিশেষে আইন করে তা বাস্তবায়নের দাবি জানান। সমাবেশ শেষে একটি লাল পতাকা বিক্ষোভ মিছিল নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।