আঃ রহিম সরদার, (বরিশাল) উজিরপুর: বরিশালের উজিরপুরে প্রকাশ্যে জমি সংক্রান্ত বিরোধে মুক্তিযোদ্ধাকে কুপিয়ে হত্যা এবং একই পরিবারের ৪জনকে কুপিয়ে ও টেটাবিদ্ধ করে গুরুতর আহত করেছে প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসীরা। ২৯ জুলাই বৃহস্পতিবার সকাল ৭টায় উপজেলার বামরাইল ইউনিয়নের কৃষকলীগের সভাপতি আটিপাড়া গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা দেলোয়ার হোসেন তালুকদার(৭০)কে প্রকাশ্য দিবালোকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করে একই এলাকার নুরুল ইসলাম সিপাই, আগজর আলী সিপাইসহ ২৫/৩০ জন সন্ত্রাসী। এ সময় নিহতের বড় ছেলে বিপ্লব তালুকদার (৩৫) টেটাবিদ্ধ হয়। তার স্ত্রী রোজিনা বেগমকে সম্পূর্ণ বিবস্ত্র করে হাতের কব্জি ও স্তন কেটে ফেলে। মেঝছেলে সোহাগ তালুকদার(৩২) কে মাথায় কুপিয়ে গুরুতর জখম ও ডান পা বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। ছোট ছেলে জুয়েল তালুকদার(৩০) এর মাথা ও পিঠে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। আহতদের স্থানীয়রা উদ্ধার করে উজিরপুর হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত ডাক্তার অবস্থা বেগতিক দেখে সকলকে বরিশাল শেবাচি হাসপাতালে প্রেরণ করে। এদিকে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে আহতদের নিয়ে উপস্থিত হলে সকাল সাড়ে ১০টায় কর্তব্যরত চিকিৎসক বীর মুক্তিযোদ্ধা দেলোয়ার তালুকদারকে মৃত ঘোষনা করেন। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১০ শতাংশ জমি নিয়ে প্রতিপক্ষ সিপাইদের সাথে দীর্ঘদিন বিরোধ চলে আসছিল। সেই বিরোধকে কেন্দ্র করেই এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় রফিকুল ইসলাম সরদার জানান, সকাল ৭টায় ট্রাক্টর চালানোর উদ্দেশ্যে বের হই। তখন নুরুল ইসলাম সিপাই, আজগর সিপাই, জলিল সিপাইসহ ২৫/৩০ জন লোক হাতে রামদা, দাও, টেটা ও সাঠিসোঠা নিয়ে ওই জমিতে যায়। তখন মুক্তিযোদ্ধা দেলোয়ার তালুকদার তাদেরকে বাধা দিলে তাকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে পানিতে ফেলে দেয়। পরে তার ছেলে ছেলেরা ও ছেলের বৌয়েরা আসলে তাদেরকে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে টেটাবিদ্ধ করে। স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা নুর মোহাম্মদ হাওলাদার জানান, ওই জমি দেলোয়ার তালুকদার দীর্ঘ ৩০ বছর ভোগ দখল করত। ওই জমি সিপাইরা পরিকল্পিত ভাবে অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে জবর দখল করতে আসলে বাধা দিলে এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রাশসনিক কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রণতি বিশ্বাস জানান, পারিবারিক দ্বন্ধে তিনি খুন হয়েছেন। তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নেয়া হবে। উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের ডেপুটি কমান্ডার হারুন অর রশিদ জানান, তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তার হত্যাকান্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই এবং হত্যাকারীদের বিচারের দাবীতে কঠোর কর্মসূচী দেওয়া হবে। তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন বরিশাল জেলা পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহজাহান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ডিএসবি ইকবাল হাসান, উজিরপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ আলী আর্শাদ, ওসি তদন্ত মমিন উদ্দিন। পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের জানান, বীর মুক্তিযোদ্ধা দেলোয়ার হোসেন তালুকদারের হত্যাকারী কোন ক্রমেই পার পাবেনা। আসামীদের গ্রেফতারের ঝটিকা অভিযান চলছে। উজিরপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ আলী আর্শাদ জানান, ঘটনাস্থলে তাৎক্ষণিক পুলিশ মোতায়েন করে আসামীদের গ্রেফতারে জোর চেষ্টা চলছে। নিহতের লাশ ময়না তদন্তের জন্য প্রেরণ করা হয়েছে। মামলা প্রক্রিয়াধীন। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পুলিশ, ডিবি, র্যাবের যৌথ অভিযান চলছে। তবে কাউকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়নি। ঘটনার সূত্রে আরো জানা যায়, বীর মুক্তিযোদ্ধা দেলোয়ার হোসেন তালুকদারের বাড়ির উত্তর পার্শ্বে ওই ১০ শতাংশ জমি ডিক্রিমূলে দীর্ঘ ৩০ বছর যাবৎ ভোগ দখল করে আসছে। কিন্তু কয়েক বছর যাবৎ একই এলকার মৃত মোতালেব মীরের ছেলে সিরাজ ও মিরাজ এবং লিটন মীর এই জমি তাদের জমি বলে দাবী করে আদালতে মামলা দায়ের করে। কিছুদিন পূর্বে একই এলাকার মৃত আদম আলী সিপাই এর ছেলে প্রাইভেটকার চালক নুরুল ইসলাম সিপাই, মৃত কেতাব আলীর ছেলে আজগর আলী সিপাই ও জলিল সিপাই ওই জমি তাদের কাছ থেকে ক্রয় করে ভোগ দখলের চেষ্টা চালায়। মুক্তিযোদ্ধা দেলোয়ার হোসেন তালুকদার ৪/৫দিন পূর্বে ওই জমিতে আমন ধানের বীজ রোপণ করে। একথা জানতে পেরে প্রতিপক্ষ নুরুল ইসলাম সিপাই গংরা পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে ২৫/৩০ জন অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ২৯ জুলাই বৃহস্পতিবার সকাল ৭টায় ও রোপণ করা বীজ উঠিয়ে পুনরায় বীজ রোপণ করতে শুরু করে। বিষয়টি টের পেয়ে মুক্তিযোদ্ধা দেলোয়ার হোসেন তালুকদার ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে ওই সন্ত্রাসীরা তাকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে পানির মধ্যে ফেলে দেয়। এ সময় প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নুরুল ইসলাম সিপাই, আজগর আলী সিপাই, জলিল সিপাই, সিরাজ মীর, মিরাজ মীর, করিম সিপাই, সবুজ সিপাই, আকবর সিপাই, শাহিন সিপাই, হাফিজুল, আজিজুল, কালাম, ইউনুস, হানিফ, ইউসুফসহ ২৫/৩০ জন। আহত’র ডাক চিৎকারে তার তিন ছেলে ও এক ছেলের স্ত্রী ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে তাদেরকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে, পিটিয়ে ও টেটাবিদ্ধ করে গুরুতর আহত করে।