Home সারাদেশ উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে নদ নদীর পানি।। কলাপাড়ায় প্লাবিত হচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম

উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে নদ নদীর পানি।। কলাপাড়ায় প্লাবিত হচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম

34

কলাপাড়া(পটুয়াখালী)প্রতিনিধিঃ পূর্ণিমার প্রভাব ও বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের কারনে পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় পায়রা বন্দরসহ গোটা উপকূলজুড়ে বইছে অস্বাভাবিক জোয়ার। সাগর ও বিভিন্ন নদ নদীর পানি ৩ থেকে ৪ ফুট উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ভাঙ্গন কবলিত বেড়িবাঁধ থেকে রামনাবাদ নদীর পানি প্রবেশ করে উপজেলার লালুয়া, চম্পাপুর, ধানখালী ইউনিয়নের গ্রামে পর গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। দুই দফা জোয়ারের পনিতে ভাসছে গ্রামীন জনপদের বাড়িঘর,স্কুল মাদ্রাসা, পুকুর, ঘেরসহ ফসলী ক্ষেত। এসব এলাকার অধিকাংশ পরিবারের দুপুরের রান্নাও হয়নি। তবে এ বছর আমন আবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে কৃষকের।
সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার রাবনাবাদ নদী পাড়ের বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধ কোথাও কোথাও মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। জোয়ারের সময় প্রবল ঢেউয়ের ঝাপটা বেড়িবাঁধের উপর আছড়ে পড়ছে। উপজেলার ধানখালী ও চাম্পপুর ইউনিয়নের দেবপুর ও নিশানবাড়িয়া এলাকায় এমন দৃশ্য দেখা গেছে। মানুষ এখন বসবাসের অবস্থাও হারিয়ে ফেলছে। গবাদিপশু, হাঁস-মুরগি পালন বন্ধের উপক্রম হয়েছে। কৃষকরা বীজতলা করতে পারছে না। এমন কী সন্তানদের স্কুল মাদ্রাসায় যাওয়া পর্যন্ত বন্ধ হয়ে গেছে। অমাবস্যা-পূর্ণিমা আসলেই জোয়ারের পানিতে ভাসতে থাকে ওইসব গ্রামের মানুষ এমনটাই জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
এদিকে পায়রা বন্দর অধিগ্রহণ করায় পানি উন্নয়ন বোর্ড সেখানে নতুন করে বাঁধ নির্মাণ কিংবা পুরনো বেড়িবাঁধ মেরামত করছে না। তাই অনেক অসহায় দরিদ্র শ্রেণির মানুষ চরম ঝুঁকিতে ঠাঁই নিয়েছেন বেড়িবাঁধে উপর। তবে দেখা দিয়েছে গো-খাদ্য সংকট। চরম দুর্ভোগে দিন কাটচ্ছে ওইসব বান ভাসি মানুষ। এছাড়া সবচেয়ে বেশি বিপাকে পরেছে কৃষকরা।
লালুয়া ইউনিয়নের শহিদ হাওলাদার বলেন, জোয়ারের পানিতে সব তলাইয়া রইছে। চাষাবাদ তো দুরের কথা,ঘর বড়িতে থাকাই এখন দায় হয়েছে। একই দশার কথা বলেছেন অনেকে। একই ইউনিয়নের শেফালী বেগম বলেন, বাবারে জোয়ারের পানিতে মোগো ঘড়বাড়ি সব তলায়া রইছে। আইজও রানতে পরিনাই। হাঁস-মুরগী কয়ডা কোথায় গেছে কইতে পারিনা। নাতিডা খাওনের লইগ্যা কান্দাকাডি করে।
বানাতিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা সুরাইয়া নাছরিন শিল্পী সাংবাদিকদের জানান, জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হওয়ায় বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমে গিয়েছে। পানিতে বাচ্চারা তলিয়ে যাওয়ার অশংকায় অভিভাবকরা সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠাচ্ছে না।
উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য মো.সোবাহান বিশ্বাস বলেন, নাচনাপাড়া বঙ্গবন্ধু কলোনীর রিং বেড়িবাধ ওভারটেক হয়ে নদীর পানি কলোনীতে প্রবেশ করেছে। এর ফলে দুই দফা জোয়ারের পনিতে ওই কলোনীর ১৮২ পরিবার এখন পানি বন্ধি হয়ে পড়েছে। এমনকি তাদের উননেও হাড়ি ওঠেনি।
ধানখালী ইউনিয়নের গাজী রাইসুল ইসলাম রাজিব বলেন, ভাঙ্গা বেড়িবাঁধ দিয়ে প্রতিদিন দুই দফা জোয়ারের পানি প্রবেশ করে মানুষের ঘড়-বাড়ি, ফসলি ক্ষেত তলিয়ে গেছে। এতে মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে।
ধানখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রিয়াজ তালুকদার জানান, দেবপুরের বেড়িবাঁধ বিধ্বস্ত থাকায় তার ইউনিয়নে নিশানবাড়িয়া, পাচজুনিয়া, লোন্দা গ্রাম জোয়ারের পানিতে ভাসে। ভাটার সময় পানি কমে গেলেও ফের জোয়ারের সময় ডুবে থাকে। এ তিন গ্রামের কৃষকের চাষাবাদ তো দূরের কথা, তাদের দূর্ভোগের সীমা নাই।
লালুয়ার চেয়ারম্যান শওকত হোসেন তপন বিশ্বাস বলেন, রাবনাবাদপাড়ের দীর্ঘ ছয় কিলোমিটার বেড়িবাঁধ বিধ্বস্ত রয়েছে। মানুষের বাড়িঘর সম্পদ সব অস্বাভাবিক জোয়ারে প্লাবিত হচ্ছে বলে তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।