Home সাহিত্য ও বিনোদন আমি নিজে যে দর্শনে বিশ্বাস করি, আমি কেন সেটা আমার সিনেমায় বলতে...

আমি নিজে যে দর্শনে বিশ্বাস করি, আমি কেন সেটা আমার সিনেমায় বলতে পারব না? — সুমন

25

ডেস্ক রিপোর্ট: সাম্প্রতিককালে দেশের চলচ্চিত্র অঙ্গনে চলমান সেন্সরশীপ ইস্যু প্রসঙ্গে ‘চলচ্চিত্রশিল্পে রাষ্ট্রীয় সেন্সরশিপ: প্রয়োজনীয়তা ও পর্যালোচনা’ শীর্ষক অনলাইন আলোচনার (ওয়েবিনার) আয়োজন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদ। আয়োজনটি সঞ্চালনা করেন চলচ্চিত্র সমালোচক ও গবেষক মাহমুদুল হোসেন। এতে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চলচ্চিত্র নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, অমিতাভ রেজা চৌধুরী, মেজবাউর রহমান সুমন, ও নাসিরউদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু। আলোচনায় আরও উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিক নূর সাফা জুলহাস।

বর্তমানে দেশের সর্বাধিক আলোচিত চলচ্চিত্র ‘হাওয়া’-এর পরিচালক মেজবাউর রহমান সুমন তার চলচ্চিত্র মুক্তি-পরবর্তী নানা প্রতিবন্ধকতা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে বলেন, “আমরা নিজেরাই এখন বিশ্বাস করে বসে আছি যে ‘আমরা সিনেমায় হয়তো এই কথাটা বলতে পারবো না।’ কিন্তু আমরা কবিতায় বলতে পারছি, গানে বলতে পারছি, সাহিত্যে বলতে পারছি। তখন তো আর সেন্সর থাকছেনা।”
তিনি আরও বলেন, “আমি নিজে যে দর্শনে বিশ্বাস করি, আমি কেন সেটা আমার সিনেমায় বলতে পারব না? যদি এতগুলো বাঁধা থাকে, তখন ছবিতে আমার কথা বলা, আমার দর্শন বা এক্সপ্রেশন প্রকাশ করা অনেক কঠিন হয়ে যায়।”

দেশের চলচ্চিত্রে সেন্সরের দ্বিমুখী আচরণ নিয়ে জনপ্রিয় নির্মাতা অমিতাভ রেজা বলেন, “এখন আমরা খুবই একটা হিপোক্রিটিক সিচুয়েশনে আছি। আমরা দুনিয়ার সমস্ত ছবি দেখি, সমস্ত মোশন পিকচার দেখি বিভিন্নভাবে। কিন্তু বাংলা ভাষার ঘটনা দেখানোর ক্ষেত্রে আমাদের অদ্ভুত সংকীর্ণতা কাজ করে। এই রুচি বা এই আচরণ আমরা কীভাবে পরিবর্তন করব সেজন্য রাষ্ট্রের সাথে, সেন্সর সার্টিফিকেশন কমিটির সাথে আমাদের সিরিয়াস ডিসকাশনের করতে হবে।”

সাংবাদিক ও সংস্কৃতিকর্মী নূর সাফা জুলহাস মনে করেন, চলচ্চিত্র নির্মাণ নীতিমালা তৈরি করা হয়েছে নির্মাতাদের নিয়ন্ত্রণ করার জন্য। তিনি বলেন, “আমাদের এখানে যেটা হয় বা এশিয়ান কন্টেক্সটে যেটা হয়, নীতিমালার নামে এখানে নিয়ন্ত্রণমালা হাজির করা হয়। আমরা এখানে যারা আছি, আমরা সবাই এই নিয়ন্ত্রণমালার বিরুদ্ধে। আমি স্পষ্ট বলতে চাই, আমরা নীতিমালার বিরুদ্ধে নই, নিয়ন্ত্রণমালার বিরুদ্ধে।”

নূর সাফা জুলহাস-এর বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনেই গুণী চলচ্চিত্র নির্মাতা, নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু বলেন, “যেকোনো সেন্সর, বিধি-নিষেধ সৃষ্টিশীলতার যে গতি থাকে একটা মানুষের মাঝে সেটার জন্য অন্তরায়। সুতরাং এটি আমি বারবার বলছি, অনুপ্রেরণা দেয়ার জন্য একটি নীতিমালা হতে পারে, নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কোনো নীতিমালা আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না।”

সেন্সরবোর্ড গঠনে সিনেমাবোদ্ধাদের তুলনায় সরকারি আমলাদের আধিপত্যই তুলনামূলক বেশি। এই অবস্থা পরিবর্তনের আহ্বান জানিয়ে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, “সেন্সরবোর্ডের সদস্য নির্বাচনের ক্ষেত্রে সরকারের আধুনিক হওয়ার সময় এসেছে। একটা বিষয়ে খেয়াল রাখা জরুরী। এখনকার সিনেমার চেহারা, সেটা বাংলাদেশের সিনেমার চেহারা হোক বা পৃথিবীর অন্য কোনো দেশের হোক; সে চেহারাটা যাদের বসানো হচ্ছে এখানে তারা বোঝেন কিনা? আমি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে জানি, এরা অনেকে এই চেহারা বোঝেন না। এটা পরিবর্তনের সময় এসেছে।”

চলচ্চিত্র নির্মাণে সেন্সর বোর্ডের হস্তক্ষেপের ঘটনা এই প্রথম নয়। বারবার চলচ্চিত্র নির্মাণে রাষ্ট্র বা অন্য যেকোনো পক্ষের অনাধিকার চর্চা চলচ্চিত্র নির্মাতার সৃষ্টিশীলতাকে বাধাগ্রস্থ করে বলে মনে করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদ। এই প্রসঙ্গেই গত ১ সেপ্টেম্বর ২০২২, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদ আয়োজন করে ওয়েবিনারটি। যেখানে উঠে আসে সেন্সরবোর্ড সংক্রান্ত নানা আলোচনা-সমালোচনা। ওয়েবিনারটি সংগঠনের ফেসবুক পেজ থেকে সরাসরি উপভোগ করেন সাধারণ দর্শক।