Home সারাদেশ আইনজীবীরা আদালতে যাবেন আশাবাদ আইনমন্ত্রীর, সভা ছাড়া সিদ্ধান্ত নয়: আইনজীবী সমিতি

আইনজীবীরা আদালতে যাবেন আশাবাদ আইনমন্ত্রীর, সভা ছাড়া সিদ্ধান্ত নয়: আইনজীবী সমিতি

19

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি॥ ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালতে আইনজীবী ও বিচারকদের মধ্যকার চলমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে বিচারাঙ্গনের অচলাবস্থা নিরসনে ফের উদ্যোগ নিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী এডভোকেট আনিসুল হক। রবিবার সকাল সাড়ে ১০ টায় তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সার্কিট হাউজে জেলা জজসহ একাধিক বিচারক, স্থানীয় প্রশাসন ও আইনজীবী সমিতির নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠক করেছেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর ও বিজয়নগর) আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি র. আ. ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, আইন সচিব গোলাম সারোয়ার, জেলা জজ শারমিন নিগার, জেলা প্রশাসক মোঃ শাহগীর আলম, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩ এর বিচারক রবিউল হাসান, যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ নজরুল ইসলাম, সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ আল আমিন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট তানভীর ভূঞা, সদ্য বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট মফিজুর রহমান বাবুল, সাবেক সভাপতি এডঃ শফিউল আলম লিটন ও এডঃ নাজমুল হোসেন, এডঃ মাহবুব আলম খোকনসহ প্রায় অর্ধশত আইনজীবী। রুদ্ধদ্বার বৈঠক শেষে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আইনজীবীরা সোমবার থেকে আদালতে ফিরবেন বলে আশা প্রকাশ করেন আইনমন্ত্রী এডভোকেট আনিসুল হক। তিনি বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালতে একটি ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছিল। আমি এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের সংসদ সদস্য র.আ.ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীসহ আমরা বসে এটার সমাধান করে দিয়েছি। আমার মনে হয় সোমবার তারা মিটিং করে সোমবার অথবা মঙ্গলবার থেকে আইনজীবীরা আদালতে যাবেন এবং আদালতের কার্যক্রম শুরু করবেন।
তবে আদালতে ফেরার বিষয়ে কিছুই বলতে চাননি জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট তানভীর ভুইয়া। তিনি জানিয়েছেন, সোমবার আইনজীবী সমিতির সাধারণ সভা শেষে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে। ‘আইনমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। আমরা বলেছি, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর মোহাম্মদ ফারুকের বিষয়ে কোনো ছাড় আইনজীবীরা দেবেন না। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক দ্রুত এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি জেলা জজ শারমিন নিগারের বিষয়ে আমাদের নমনীয় হতে বলেছেন। আমরা বিষয়টি সাধারণ সভায় আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব বলে জানিয়েছি। সোমবার আইনজীবীদের সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে চলমান অচলাবস্থাসহ সার্বিক বিষয়ে আলোচনা শেষে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
এদিকে রবিবার সকাল থেকেই আদালতে আইনজীবীদের কর্মবিরতি চলছে। দূরপ্রান্তের বিচারপ্রার্থীরা আদালতে এসে দুর্ভোগে পড়ছেন।
এদিকে গত ৫ জানুয়ারী থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ও দায়রা জজ শারমিন নিগার এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক মোহাম্মদ ফারুক এবং আদালতের নাজির মোমিনুল ইসলামের অপসারণের দাবিতে আদালত বর্জন করে আসছিলেন জেলা আইনজীবী সমিতির নেতৃবৃন্দ। একপর্যায়ে আইনমন্ত্রীর আশ^াসে জেলা ও দায়রা জজ এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর আদালত বর্জন অব্যাহত রেখে বাকি সব আদালতের কার্যক্রমে অংশ নেওয়া শুরু করে আইনজীবীরা। তবে ৭ ফ্রেব্রুয়ারি ৬ষ্ঠ দফায় বাড়ানো কর্মসূচীর শেষ দিনেও তাদের অপসারণ না করায় আবারো সব আদালত বর্জনের ঘোষনা দেয় আইনজীবীরা। তবে বুধবার আদালতের নাজির মোমিনুল ইসলামের বদলীর আদেশ হওয়ায় আইনজীবীদের মাঝে ইতিবাচক প্রভাব লক্ষ্য করা যায়।
উল্লেখ্য, গত ১ ডিসেম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এ আইনজীবীরা মামলা দাখিল করতে গেলে বিচারক মোহাম্মদ ফারুক মামলা না নিয়ে আইনজীবীদের সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য করেন বলে অভিযোগ করেন আইনজীবীরা। এ ঘটনায় ২৬ ডিসেম্বর সমিতির সভা করে আইনজীবীরা ১ জানুয়ারি থেকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক মোহাম্মদ ফারুকের আদালত বর্জনের ঘোষণা দেয়। এদিকে বিচারকের সঙ্গে অশোভন আচরণের অভিযোগে ৪ জানুয়ারি কর্মবিরতি পালন করেন আদালতের কর্মচারিরা। এ অবস্থায় জেলা জজ, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ ও আদালতের নাজির মোমিনুল ইসলামের অপসারণ চেয়ে ৫ জানুয়ারী থেকে পুরো আদালত বর্জনের লাগাতার কর্মসূচি পালন করে আসছিলেন আইনজীবীরা। পরবর্তীতে দফায় দফায় ৭ কর্মদিবস আদালত বর্জনের কর্মসূচি পালন করে আইনজীবীরা।

এছাড়াও বিচারকের সাথে অশোভন আচরণ ও অশালীন শ্লোগান দেয়ার অভিযোগে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আইনজীবী সমিতির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ ২৪ আইনজীবীকে দু’দফায় তলব করেছে উচ্চ আদালত। এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আইনজীবীদের সাথে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সাথে বৈঠকের পর দুটি আদালত বাদে বর্জনের কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।