Home সাহিত্য ও বিনোদন অনুগল্প: পাতা ঝরা দিন

অনুগল্প: পাতা ঝরা দিন

21

পলাশ কলি হোসেন শোভা: খুব ভোরে দরজার সামনে এসে দাড়ালো মিতি। কামরাঙ্গিচরের এই দিকটায় খুব একটা আসেনি। এর আগে খুব বেশী হলে তিন চার বার হবে তাও প্রয়োজনেই।
দরজায় হাত দিতেই খুলে গেলো। ভয় পেয়ে যায় মিতি চোর ঢুকলো নাকি! খোলা থাকবে কেন? সারা ঘরে তিনজন মানুষ থাকে। চোর নিবেই বা কি? যারা থাকে তাদের সবার সম্পদ মাথার ভেতর। ঐ জিনিস কেউ নেয় নাকি?

আবোলতাবোল ভাবতে ভাবতেই রুমে ঢুকে যায়। বেঘরে ঘুমাচ্ছে একজন। বাকি দুজন কই গেলো?
তবে যার কাছে এসেছে সে তো আছে, তাহলেই হবে।
এই ওঠ্ ওঠ্ জলদি
গভীর ঘুম থেকে একচোখ খুলে হতভম্ব হয়ে যায় আদিয়ান আদি। ঘুৃম জড়ানো কন্ঠে বলে,
তুই এখানে কি করিস?

কি করি? তোর গুষ্টি উদ্ধার করতে আসছি।
না বাবা আমার গুষ্টি আমার সাথে থাকে না তুই রতনদিয়া যা বাপ, আমারে ঘুমাইতে দে।
ওই তোর ফোন বন্ধ কেন? দুদিন ধরে বন্ধ আর লগের গুলা কই? রাগে মিতির মুখের ভাষা বদলে যাচ্ছে।
আদি হাত টেনে মিতি কে বিছানায় বসায় চোখ তখনো খোলেনি
কি হইছে দাদী আম্মা এত সকালে এহানে কি?
আদি একটা সিনেমার অফার আছে….
এই বয়সে নায়িকা হবি তুই?
বদ তুই থাম। ওঠ্ চোখ খোল্, তারপর শোন্।
আদি উঠে বসে। মিতির কাছ থেকে মিষ্টি একটা সুবাস পেলো।

এত ভোরে তুই শাওয়ার নিলি কখন?
বেলা কত হয়েছে জানিস? আটটা বাজে। চা খাওয়া।
আনাচ্ছি। বলে সিগারেটের প্যাকেটটা হাতে নিতেই মিতি কেড়ে নিয়ে বলে ইকটু পর খা গাধা।
কেন আসছিস মিউ? মুড ভালো থাকলে আদি এ নামেই ডাকে।
শুনতে পাস নি? ছবির স্কিপ্ট লিখে দিবি তুই। আমাকে ধরেছে তোকে রাজী করাতে। না করিসনা দোস্ত।
জানিস তা কেন বলিস? লিখবো না। বাদ দিসি অনেক আগেই
প্লিজ এবার শেষ । আর বলবো না?
কি মুভি?
অনুদানের মুভি।
তাহলে তো রেডি আছে সব।
আরে না ফজল ভাইয়ের লোক আছে স্কীপ্ট জমা দিলেই হবে।

আচ্ছা যা করে দিবো, তোর জন্য ।
আদি রুম থেকে বের হয়ে মুখ ধুতে যায়।
মিতি একা বসে বসে আদির টেবিলটা গুছিয়ে দিচ্ছিলো। হঠাৎ খুব পুরানো একটা ডায়েরি তে চোখ যায়। মনে মনে ভাবে কার এটা?
পৃষ্ঠা ওলটাতেই দেখে আদির হাতের লেখা। সাল টার দিকে তাকিয়ে দেখে ষোলো বছর পুরানো ডায়েরিটা এখানে কেন? একটা জায়গায় এসে আটকে যায় মিতি,

নীলাঞ্জনা কথা দিচ্ছি তারাদের সাক্ষী করে কখনো তোমার পছন্দের কেনা জায়গায়….
ওই কি পড়োস?
চমকে উঠে মিতি,
এটা কাকে নিয়ে লিখছিস আদি?
মিউ কবে, কখন কাচা হাতের লেখা। পড়ছিস কেন?
মিতি ভেবে পায় না কার জন্য এই পংক্তিমালা? কে সে?
চা খেতে খেতে মিতি জিগ্যেস করে,

আদি কাহিনি কি?
আরে বাল্যপ্রেমের ছোঁয়া । প্রেম হয়নি। আবার…
আহ্ ঝেড়ে কাশ তো বাপ।
বাড়িতে থাকতে ইন্টার ফাইনাল ইয়ারে পড়ার সময় বাংলার এক লেকচারার আসেন। নীলুফার মিস। ক্লাসে আমার দুষ্টামীতে সবাই অস্হির। জানিস তো কত বড় বান্দর ছিলাম। পড়া কখনোই ইচ্ছে করে পারলেও বলতাম না। আর বকা দিতো। আনম্যারেড ছিলো। বিসিএস দিয়ে আসছে। আমার পিছনেই লেগে গেলো। ক্লাস টেস্ট গুলো তো একটা বড় গোল্লা আমারে দিবেই । আর বলতো ছুটির পর দেখা করবে।

যেতাম। বুঝাতো যত না
তার চে বেশী আমার সম্পকে জানার আগ্রহ তার।
তারপর?
বেশ রাত হলে আমার জানালার সমানে এসে দাড়াতো। আমি বের হয়ে যেতাম। আবছা আলোতে দুটি ছায়ামূর্তি পদ্মার পড়ে বসতাম। আর…
সরকারি কলেজের বাসা তে থাকতো?
হু,ক্লাসে আমাকে এত বকা ঝকা করতো যে বলার নয়। কিন্তু দিন শেষে আমিই তার সব। প্রতি রাতে আমরা নদীতে যেতাম, নৌকার পাটাতনে শুয়ে তারা গুনতাম। ছেলে বেলায় যা হয় আরকি।
আর কেউ টের পায়নি?
নাহ্! মীনা মাঝি শুধু জানতো, কারণ নৌকাটা তো তারই ছিলো।

বাহ্! বাবা রহিম বাদশাহ, তা কতদিন…
নারে মিউ পাঁচ মাস পরেই বদলি হয়ে চলে যায় ঢাকায়। আগের রাতে কপালে একটা ছোট্ট চুমু দিয়ে বলেছিলো,
আদি জানিনা এই সম্পর্কের কি নাম! তবে আমি আমাকে ভুলতে দেবো না তোমায়। কপালের ঐ জায়গাটুকু আমার। কখনো কাউকে তা দিও না আদি।
বাহ্!রক্ষা করছিস তো?

হু কাউকে দখল নিতে দেইনি। আজ তার জন্ম দিন। তাই রাতে ডায়েরিটা পড়ছিলাম।
চল্ চল্ আদি উদ্যানে আজ সারাদিন কাটাবো নীলাঞ্জনার জন্মদিন সেলিবেট করবো ওঠ্ জলদি।
মিতি আদিকে তাড়া দেয়। আদি অবাক হয়ে মিতির দিকে তাকিয়ে থাকে। মনে মনে বলে,
তুই এত ভালো কেনরে মিউ! ! ! !

-লেখক : সাবেক অধ্যাপক, মীরপুর গার্লস আইডিয়াল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, ঢাকা।