Home সাহিত্য ও বিনোদন অনুগল্প: নুবায়া

অনুগল্প: নুবায়া

36

পলাশ কলি হোসেন শোভা: এতো রাতে আবার কে কল দিলো? ঘুম ভেঙে যেতেই রাজ্যের বিরক্ত হয়েউঠে আসাদউল্লাহ। পর মুহূর্তেই মনে পড়ে রিংগার অফ করতে ভুলে গেছে। ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে আননোন নাম্বার তাও বাইরের।
ইচ্ছের বিরুদ্ধেই কলটা রিসিভ করে সে।
ওপাশ থেকে শুদ্ধ উচ্চারণে বলছে,
সরি আমাকে মাফ করবেন, এতরাতে এভাবে ডিস্টার্ব করবার জন্য । আপনি কি সাইকিয়াট্রিস্ট আসাদ বলছেন?

আসাদ ভেবে পায় না মানুষের কি কমনসেন্সের এতই অভাব!পর মুহূর্তেই মনে হয় এ্যাবনরমাল লোক নিয়েই তো তার কারবার। বলে,
জ্বী বলছি। কে আপনি? এত রাতে?

প্লিজ ফোনটা রাখবেন না অনেক সমস্যায় আছি,আজই একজন আমাকে নাম্বারটা দিলো আমি আর ওয়েট করতে পারছিলাম না তাই….
তাই রাত দুপুরে কল দিয়েছেন? ওকে আমি রাখছি সকালে আমাকে রিং দিলে কথা হবে, বলেই কলটা কেটে দেয় আসাদ।

সকালে উঠে পেপারে চোখ বুলাচ্ছে, আবার ফোন বেজে উঠতেই মনে পড়লে গত রাতের কথা। যা ভেবেছে তাই, সেই ফোনটাই এসেছে।
বলুন মিস..
আমি মিসেস, নাম আমার নুবায়া শিকাগো থাকি আমার গত কয়েক বছর ধরে….
একটানা বলে যায় ওনার সমস্যার কথা।

শুনলাম নুবায়া আপনার প্রবলেম কিন্তু এত লং ডিস্টেন্স এ তো ট্রিটমেন্ট সমস্যা হবে আপনি…
দুদিন পর আমি ঢাকা আসছি। তখন আপনার চেম্বারে আসছি। কত কত সাইকিয়াট্রিস্ট দেখিয়েছি পীর ফকিরও বাদ যায়নি বরং….
কথা শেষ করতে পারেনা নুবায়া, আসাদ বলে বসে, আপনি আসুন। তখন দেখবো তবে হ্যা আপনার সমস্ত মেডিকেল পেপার গুলো নিয়ে আসবেন।

ফোনটা রেখেই আসাদ ভাবতে বসলো এ সমস্যা তো অনেকেরই আছে। তবে কম আর বেশী। শুনে সে বুঝতে পারে অসুখ টা যে রিলিজিয়াস ওসিডি ডিজঅর্ডার এতে কোন সন্দেহ নেই। এর কাউন্সিলিং আর মেডিটেশন এর মধ্যেই পেশেন্ট ভালো হয়ে যায়।
এর উপরে ইন্টারেসটিং কিছু চ্যাপ্টার পড়তে বসে যায় আসাদ।

সাত দিন পর
বিকেলের দিকে চেম্বারে বসে আছে। আজ ইচ্ছে করেই দুটো পেশেন্ট রেখেছিলো নুবায়া আসবে বলে।
স্যার আসবো?
তাকিয়ে দেখে খুব ই সুন্দরী এক মেয়ে, হিজাব পরা শুধু মুখ টুকুতেই বোঝা যাচ্ছে কতটা রুপসী সে
আসুন। আপনিই তো নুবায়া?
জ্বী ডক্টর ।

কতদিন থকবেন? আসতে সমস্যা হয়নি তো?
না, না না ইজি। আমি তো ধানমন্ডিরই মেয়ে।
ডক্টর আমার কেন এমন হয়? নামাজে দাড়ালে আল্লাহু আকবার বললে, মন হয় ঠিক হয়নি আবার বলি, তখন মনে হয় উচ্চারণ সঠিক হয়নি,আবার বলি তখন মনে হয় বেশি জোরে বলেছি আবার…

বুঝেছি আর?
নামাজ পড়তে লাগে দু’ঘন্টা । ওজু বার বার করি তাও মনে হয় ঠিক হচ্ছে না। আর হাসব্যান্ড এর সাথে ইন্টিমিসি হতে গেলেই চোখের সামনে নবী রাসুল আর আল্লাহ ভেসে উঠে।
কি বলছেন নুবায়া? আল্লাহ কে দেখা যায় নাকি? নাউজুবিল্লাহ।
নানা দেখি নাতে মনে হয় উনি দেখছেন। আমি তার সাথে থাকতেও পারছি না, কাউকে বলতেই পারছিনা।

কতদিন ধরে এ অবস্থা?
বছরের বেশি। কাউকে বলতে পারছিনা, শুনলেই বলবে আমার ঈমান নেই, মুরতাদ । ভয়ে স্বামী কেও বলিনি। এক পীর বললো,দোয়া তাবিজ করলে ঠিক হয়ে যাবে। এওো এওো ডলার দিলাম কিছু হলো না উল্টো আমাকে সেক্সচুয়াল এবিউস করে ছাড়লো। আমার ঈমান নাই এটা মানতে পারবো না ডাঃ। এত নামাজি আমি অথচ….

চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি গড়িয়ে পড়ছে।
নুবায়া আপনার যেটা হয়েছে এটা অনেকেরই আছে অনেকেই অজু করে আবার করে, আবার করে মনে করে তারা সহি অজু হচ্ছে না। আপনি সুস্থ হয়ে উঠবেন ইনশাআল্লাহ।
আপনার কথা শুনেই তো এসেছি ডাঃ।জানেন ডাঃ সারাদিন দোয়া নামাজ নিয়ে থাকি, এই মনে হয় ঈমান আছে, আবার মনে হয় নাই।

আমি বুঝতে পেরেছি আপনার সম্পূর্ণ প্রবলেমটা। আপনি বরং আগামী পরশু পাঁচ টায় আসবেন। তখন আবার কথা হবে।
রাতে বিছানায় শুয়েশুয়ে নুবায়ার কেস-হিস্ট্রি টা চিন্তা করতে থাকে। ইউটিউবে হেমন্তের রবীন্দ্র সংগীত বাজছে,
” তুই ফেলে এসেছিস কারে
মন মনরে আমার, তাই….
এক সময় ঘুমিয়ে পড়ে আসাদ।
একদিন পর চেম্বারে চলে আসে নুবায়া।
চা না কফি? কোনটা?
নুবায়া সহজেই বলে কফি হলে মন্দ হয়না
নুবায়া আমি কোল্ড কফি নিচ্ছি আপনি?
হেসে দেয় নুবায়া, এক যাএায় দুরকম ফল হওয়া উচিত নয়, আমিও তাই।
বেল বাজিয়ে এ্যাসিস্টেন্ট ডেকে অর্ডার করে আসাদ।

অনেক ক্ষণ কাউন্সিলিং দিয়ে বলে,।নুবায়া আমাদের ব্রেনে সেরেটরিন এর অভাবে এমন উদ্ভট চিন্তা আসে। সেরেটরিন ব্রেনে চিন্তা তৈরি করে, এটার কম বা বেশি হলে এমন হয়। লোকে বলবে , তুমি চিন্তা করো না, এটা তো পেশেন্ট এর হাতে থাকে না, পেশেন্ট নিজেও জানে না এটা একটা রোগ। যাকে বলা হয়, রিলিজিয়াস ওসিডি ডিজঅর্ডার। এটা অনেক খানি আত্নবিশ্বাস এর সাথে জড়িত।পেশেন্ট এর আত্নবিশ্বাস ধ্বংস করে দিলে মারাত্মক পর্যায়ে চলে যায়। ৯০% কাউন্সিলিং আর ১০% ঔষধ দিয়ে পেশেন্ট কে সুস্থ করা সম্ভব। আমি কতগুলো মেডিসিন দিচ্ছি আর আগামী একমাস সপ্তাহে তিনদিন আমরা সিটিং দিবো। আপনি আশা করি সুস্থ হয়ে শিকাগো ফিরে যাবেন
দেড় মাস পর

আজ নুবায়া আসাদের চেম্বারে নয় বাসায় গিয়েছে বিশাল একটা ফুলের বুকেট নিয়ে।
শেষ পর্যন্ত আমরা পারলাম কি বলেন নুবায়া?
হু ডাঃ সময় কিন্তু অনেক বেশি নিয়েছেন।
এখন কি সমস্যা হচ্ছে বলেন তো?
হচ্ছে তো ডাঃ মারাত্মক সমস্যা হচ্ছে । আগামীকাল রাত এগারোটায় ফ্লাইট । দোয়া রাখবেন ডাক্তার।

কৈ বললেন না তো এখন কি মারাত্মক সমস্যা ?
ডাঃ এখন ওকে নিয়ে ইন্টিমিসি হলেই কিংবা ইবাদতে বসলে মনে পড়ে আপনাকে। আপনার জন্য ই আমি আনন্দ করছি পাচ্ছি স্বস্তি ……..
কথাটা শেষ করার আগেই খুব জোরে আসাদ হো হো করে হেসে উঠে সাথে নুবায়াও তাল মিলিয়ে হাসতে থাকে।

-লেখক : অধ্যাপক (অব) মীরপুর গার্লস আইডিয়াল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, ঢাকা।