Home সাহিত্য ও বিনোদন অনুগল্প : তোমার সান্নিধ্যে

অনুগল্প : তোমার সান্নিধ্যে

51

পলাশ কলি হোসেন শোভা: ইশ্! কে যে ফোন করে সকাল বেলা। মহা বিরক্ত হয়ে ফোনটা ধরে আদি। ওপাশ থেকে শুনতে পায়,
ঘুমাচ্ছো কেন? কয়টা বাজে জানো? আজ আমার সাথে বাইরে যাবে রেডি হও
না আমি পারবো না, ঘুমাবো, আপনি অন্য কাউকে নিয়ে যান

আরে বলে কি! আমার লাগবে তোমাকে আর তুমি বলছো এই কথা! একঘন্টার মধে আসছি। শিকদারের সামনে থেকো।
বলেই লাইনটা কেটে দিলো।
বিছানায় শুয়েই আদি ভাবলো আচ্ছা মানুষ তো রীতিমতো আদেশ! ! !

আদিয়ান আদি কবি সাহিত্যিক, আরও পরিচয় আছে ও গুলো তে সে স্বাচ্ছন্দ বোধ করে না।
শাহরীন শিফা লেখক, এন্ড বিজনেস লেডি। লন্ডনে বসবাস গত বইমেলায় ঢাকাতেইপরিচয়। আদির গতি জড়তা পড়ে মুগ্ধ হয়ে নিজেই পরিচিত হতে আসেন। সেই সূএ ধরেই বন্ধুত্ব।

কয়েক দিন আগে হুট করে নারায়ণগঞ্জে একটা গার্মেন্টস ভিজিটে যাবার সময় জোর করে আদি কে নিয়ে যায়। বিরক্ত হয় আদি। কিন্তু সেটা প্রকাশ করতে পারছিলো না শত হলেও একজন সিনিয়র লেখক। বয়সে দশ বারো বছরের বড় হলেও তা বোঝার সাধ্বী কারো নেই। আদি কম জ্বালায়নি তাকে। গাড়িতে বসে টুকটাক কথা হচ্ছে শিফা লটকন খাচ্ছিলো আর আদিকে দিলো।
জানো আদি আমাদের দেশীয় ফল আমার খুব পছন্দ । খাও।
না খাবো না।

কেন? পছন্দ না? খুব মিষ্টি কিন্তু ।
হাতে ময়লা, ধরবো না।
ওওওহ্! আমি খাইয়ে দিচ্ছি।
শিফা লটকন খুলে আদির মুখে দিচ্ছে সেও মজা করে খাচ্ছে।
মনে মনে বলে,

এবার বোঝো আমাকে আনার মজা। দাড়াও আরও খেইল দেখাবো।
গাড়ি চলছে। একসময় আদি বলে বসে,
বিড়ি খাবো।
এ্যাই না না না, এসি তে গন্ধ হয়ে যাবে। আর বেশীক্ষণ নেই চলে আসছি।
না এখনই খাবো, গাড়ি থামাতে বলেন।
কি আর করা অগ্যতা গাড়ি সাইড করতেই আদি নেমে সিগারেট ধরায়। আয়েশ করে টানছে আর সামনের বিলে বকের ঝাক দেখছে
আদি হয়নি? আর কতক্ষণ?
বসেন আরেকটা খাবো।

শিফা কিছুই বললো না ঘড়িতে সময় দেখতে থাকে।
সে নারায়ণগঞ্জের কথা মনে থাকলে তো শিফার আজ ওকে আবার কল দিতো না।
আবার কে কল দিলো। উঠে বসে, ফোনের স্কীনে নাম দেখেই বলে,

খবর আছে আমার, শনি লাগলো বলে।
হে বল্? কল দিসিস কেন?
আরে! আমি কল দিলে তুই ওমন ছেত্ করে উঠিস কেন?
বল্

বিকেলে উদ্যানে আসিস কাজ আছে।
পারবো না, বের হচ্ছি শিফার সাথে
আবার ঐ বেটির সাথে। তোরে কি পাইছে? যাবি না
আরে বলছি যাবো। বিকেলে আমি ঠিকই এসে যাবো।

তুই ওর সাথে যাবি না। আমার পছন্দ না।
ওই দাদী আম্মা আপনে আমার লগে কারে দেখতে পছন্দ করেন? লিজা রে সরাইলি, তিশারে ভাগাইলি, সীমারে খেদায়লি

থাম্ থাম্ বদ, মারিয়া ছাড়া কারো সাথে মিশবি না। আজ কে ওনাকে বলে দিবি, তুই আর নাই
আইচ্ছা জননী জন্মভুমি। রাখলাম।

এস্কাই কালারের জিন্সের সাথে ব্লাক টিশার্ট পড়ে জলদি মোবাইলটা হাতে নিয়ে শিকদারের সামনে এসে দাড়ায়। হাজারীবাগের এদিকটা নিরিবিলি এখনো। তাই শহরের কোলাহল ছেড়ে এখনেই আদি থাকে। শিকদার মেডিকলের কয়েকটি মেয়ে পাশ দিয়ে যাবার সময় আদিকে দেখতে দেখতে যাচ্ছে। আদি ভাবতে থাকে মেডিকেলের মেয়েরাও…
আদি কি ভুলে গেছে এরাও মেয়ে। নিজের মনে হেসে উঠে।

দরজা খুলে শিফা ডাকতে থাকে,
আদি, জলদি আসো।
গাড়িতে বসতেই বলে,
তুমি কি ভাবছিলে? এত জোরে ডাকছি শুনছোই না!

ও কিছু না, তা আজ কোথায় যাচ্ছি? আকাশে অনেক মেঘ বৃষ্টি হবে।
হোক না। গুলশান যাচ্ছি, ওখানে গিয়ে গাড়ি ছেড়ে রিক্সা নিবো।
কেন, রিক্সা নিবো কেন?
মেঘলা দিনে রিক্সায় মজা।
বৃষ্টি এলে?
ভিজবো?
বলেন কি? কেন যাচ্ছেন?

গ্লোরিয়া জীন এ যাবো, কফি খেতে। আমার নেক্সট উপন্যাস টা আমি সমাজের হাই সোসাইটি কে নিয়ে লিখবো। ওখানে বসে কফি খেতেখেতে গল্পের সূএ খুঁজবো।
তা আমাকে কেন? আপনার সোসাইটির একজন কে নিলেই তো হতো।
তোমাকে আমার দরকার। তোমার সঙ্গ আমার ভালো লাগে তাই।

আদি কোন কিছু বলে না। চুপ করে থাকে। গুলশান দুই নম্বরে এসে গাড়ি ছেড়ে দেয় শিফা। বৃষ্টি পড়ছে ঝিরিঝির করে। সামনে একটা ও রিক্সা নেই পানিতে পা দিয়ে হাটতে গিয়েইআদির পুরানো স্যান্ডেলটা ছিড়ে যায়। অসহায়ের মত সেদিকে তাকাতেই। শিফা বলে,

ভালো হয়েছে, চলে খালি পায়ে হাটি। নিজের স্যান্ডেলটা খুলে হাতে নিয়ে আদিরটা দূরে ছুড়ে মারে। আদি মনে মনে কষ্ট পেলেও কিছু বলে না।
রিক্সায় যখন সামনের দিকে যাচ্ছে, আদি লক্ষ্য করে শিফা আজ আকাশ নীল শাড়ি পড়েছে। চোখে গভীর করে কাজল দেয়া, একটা মায়ার আভা ছড়িয়ে আছে। মুহূর্তের মধ্যে ভালো লেগে যায় আদির। পরক্ষণেই মিতির চেহারা ভাসে।
ওরে বাপরে ডাইনি মেরে ফেলবে।

কফি শপে এক কোনায় গিয়ে বসে দুজন। বেলা বারোটা বাজে প্রায়। এদিকটা থেকে আসা যাওয়ার পথটা সুন্দর দেখা যায়।
আদি কেন এসেছি জানো?
জানি তো হাই সোসাইটি…
শেষ করতে পারে না সে

সেটা ছাড়াও তোমাকে জানার আগ্রহটা অনেক বেড়ে গেছে। তাই তোমার গল্প শুনবো।
আমার তো তেমন কোন গল্প নেই!
আছে, তোমার মিতি আছে না?
হাহাহা জোরে হেসে উঠে আদি।
ও তো একটা পাগল , একটা বালিকা।
ওর গল্প , তোমার লেখার গল্প আরও সব।
দুজনের গল্প জমতে সময় নেয় না। কি মনে করে আদি যেন আজ নিজেকে তুলে ধরে শিফার কাছে। অনেক দিন এমন মন খুলে কথা বলে নাই সে
ওরা দুজনেই লক্ষ্য করে উঠতি বয়সী মেয়ে গুলো বয়ফ্রেন্ডদের নিয়ে আড্ডা দিচ্ছে, দেদারছে সিগারেট খাচ্ছে। শিফা দশ বছর দেশের বাইরে। আজকের ঢাকার এই সোসাইটি দেখে সে হতবাক। ভাবে, কারা এদের বাবা মা, আমাদের মায়েরা তো….
কথায় ছেদ পড়ে যায়।

চলেন এবার যাই। উদ্যানে যেতে হবে।
ফেরার পথে শিফা বলে, খুব জলদি আমি এই উপন্যাস টি প্রকাশ করবো।তোমাকে এক কপি প্রকাশক কুরিয়ার করে পাঠাবে।
আদি ঘাড় নেড়ে সায় দেয়।

তিন মাস পর
আদি দুপুরে সাধারণ মুভি দেখে। এমন সময় কুরিয়ার এলো ওর নামে। বুঝতে পারে শিফার বই।আদি খুব এক্সাইটেড হাই সোসাইটি কে নিয়ে কি লিখলো শিফা । আদি নিজেও ঐ সোসাইটির সাথে মোটেও পরিচিত নয়

প্যাকিং খুলে দেখে বইয়ের নাম ” তোমার সান্নিধ্যে “
এমন নাম কেন? পৃষ্ঠা ওলটাতেই দেখে উৎসর্গ আদিয়ান আদি কে হতবাক আদি। আরে উল্টাতে চোখে পড়ে তাকে নিয়ে পুরো উপন্যাস । মানে কি?শিফা কি লিখতে গিয়ে কি লিখলো?

আদি ভয় পেয়ে যায় খাইছে আমারে মিতি জানতে পারলে আমারে জবাই করবে। শিফা কে লন্ডনে কল দিবে?
না না তার আগে মিতি কে কি ভাবে ম্যানেজ করবে সেই ভাবনায় পড়ে যায়

-লেখক : অধ্যাপক (অব) মীরপুর গার্লস আইডিয়াল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, ঢাকা।