Home সাহিত্য ও বিনোদন অনুগল্প: বুনো ফুল

অনুগল্প: বুনো ফুল

58

পলাশ কলি হোসেন শোভা : বাবুরে চা দে, মাধুরী একটা গোল্ডলিফ দে, ওই মাধুরী কথা কানে যায় না তবক দিয়া পান দে, এক সাথে এত ফরমায়েশ অস্হির হয়ে উঠলেও হাসি মুখে সবার চাহিদা পূরণ করতে থাকে। পানের খিলি বানাতে বানাতে বলে কাকু জর্দা কতটুকু দিবো?
আরে দে তুই যা দিবি তাই খামু। তোর হাতের জাদুতে পান এমনিই ডবল মজা বলেই খিক খিক করে হাসতে থাকে মজু মিয়া।

মাধুরীর সব গা সয়া হয়ে গেছে। বাবা মা হারা মেয়ে জ্যাঠা আর কাকিমার কাছে মানুষ । বয়স আর কতই হবে? খুব বেশি হলে সতেরো কিংবা আটারো এর বেশি নয়। সংসদ ভবনের রাস্তার পাশে কাকি জ্যাঠুর সাথে চা পান বিড়ি বিক্রি করে। নিয়ম করে চারটার দিকে আসে সন্ধ্যার পর পরই চলে যায়। প্রচুর কস্টমার তার চায়ের। যত না চা খেতে আসে তারচে বেশি আসে ইকটু ছোঁয়া পেতে। কাপটা নেয়া সময় হাতটা ছুঁয়ে দেয়ে বিডি নেবার সময়ও অনেকেই তাই করে।

কথায় বলে না আপন যৌবন বৈরী। কথাটা মাধুরীর বেলায় যেন সাত সত্যি।
কত মানুষ বিকেল হলেই ঘুরতে আসে আর মাধুরীকে দেখলেই যেন চায়ের তৃষ্ণা গলায় এসে ঠেকে। কাকিমা চিলের চোখ দিয়ে পাহারা দিতে থাকে আর বসে বসে কস্টমারদের গালাগলি করে যখন দেখে মাধুরীর সাথে রংঢং করার মতলবে থাকে।
এই মেয়ে চা তো মজার বানাও নাম কি?
চায়ের সাথে নামের কি দরকার?
রুপ তো বাইয়া পড়ে, ধর্ম কি?
চা খাইবেন না ধর্ম খাইবেন?
আরে শালি কয় কি? ওই আমারে চিনোস? তুইলা লইয়া যামু।

ভয় পেয়ে যায় মাধুরী আশে পাশে চেয়ে দেখে সবাই চুপ কেউ কোন কথা বলছে না
বাবা মাইয়াডা না বুইঝা কইয়া ফালায়ছে ক্ষমা করে দেন। কাকির কথায় অনেকেই মাথা নেড়ে সায় দেয়, জ্যাঠু খুক খুক করে যে কাশি শুরু করছে থামার নাম নাই
আজ পয়লা দিন কিছু কইলাম না। আমারে চিইন্না রাখ্, আমার নাম মনা এলাকা আমার। তোর কথা শুইনা দেখতে আইলাম। দিল ভইরা গেছে অহন থন আর মিস হইবো না, দে আরেক কাপ চা
মাধুরী কাকির দিকে অসহায় ভাবে তাকায় ইশারা পেয়ে চা ঢেলে দেয়, বেশ জোরেই হাতটা ধরে ফলে মনা, মাধুরী ঘৃনায় মুখ ফিরিয়ে রাখে ঠিক তখনই শুনতে পায়,

আরে মনা ভাই আপনি? বলেই হাত বাড়িয়ে দেয়, মনা হাত ছেড়ে দিয়ে বলে আপনি কতক্ষণ?
আমি তো অনেক ক্ষণ, এত ভীড় তাই চুপ করে বসে আছি। চা খাবো।
আচ্ছা খান আমি গেলাম। বলেই মনা চলে যায়।
মাধুরী কৃতজ্ঞতার দৃষ্টিতে এক নজর দেখে নেয় তাকে। এমন বিব্রতকর অবস্থা প্রায়ইপরতে হয় মাধুরীকে। প্রতিদিনই ঠিক সোয়া পাঁচটায় ছেলেটা চা খায়, আর একটা পান। তবে পান যে সে খায়না বোঝা যায়। এখানে এলেই সব কিছু খেতে ইচ্ছে করে।

সজল ওর নাম। সংসদ ভবনের বড় রাস্তার ওপারে একটা বিশাল নাম করা ব্রান্ডের শপে জব করে। বেশ উচ্চ পদেই আছে। একদিন সংসদ দিয়ে হেটে যেতেই চোখ যায় মাধুরীর দিকে সেই থেকে একটা ঘোরের মধ্যে থাকে। কখন বিকেল হবে অফিস থেকে ছাড়া পাবে আর চা খেতে আসবে।চা বিড়ি পান মাধুরীর হাত থেকে নেবার সময় অন্য দের মত ছুঁয়ে দেয়না অবাক হয়ে মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। মাধুরী অবাক হয়, ছেলেটা তো আর সবার মত নয়।

আজকের ঘটনার পর রাতে সজল ভাবতে থাকে মেয়েটাকে নিজের করে পাওয়া কি করে সম্ভব!
পরদিন কাকির সাথে ভাব জমাতে চেষ্টা করে। সেয়ানা কাকি জানে এই মেয়েরে হাত ছাড়া করা যাবে না, তাহলে না খেয়ে মরতে হবে।
সংসদের এই জায়গাটায় মাধুরীর চায়ের চাইতে রুপ দেখতে এসে কত কিছু কামনা করে, সজল তা খুব ভালো করেই জানে। কাকি ইকটু দূরে যেতেই সজল বলে,

তোমাকে আর এভাবে চা বিড়ি বিক্রি করতে হবে না
তাহলে আমি কি করবো? কিভাবে চলবো?
কেন আমি আছি না?
আপনি কি করবেন? বিয়ে তো করবেন না তাহলে?
না মাধুরী আমি তোমাকেই বিয়ে করবো যাবে আমার সঙ্গে?
আপনি তা পারবেন না। আমি হিন্দু ঘরের মেয়ে।
আরে তাতে কি?তুমি মানুষ এটাই সত্য আর কিছু আমার চাইনা
আমি, আমি….
কাকিমা গলা খাকারি দিয়ে বলে, ওই মাধু কি কস বাবুর লগে?

বলছিলাম বাবুর অফিসে সুন্দর ড্রেস পাওয়া যায় আমি একটা কিনতে চাই
ওওওওহ ভাত খাইতে ভাত নাই খাট্রা খাট্রা করে, ঐ বাবুরে চা দে
সজল সহজ করে বলেখালা আমাদের ওখানে সস্তা ড্রেসও পাওয়া যায়, এমনি একটা ওকে দিবো। সব সময় চা খাওয়ায়। লোভ হয় কাকির দিও বাবা তা শাড়ি নাই?
আছে তো নিয়ে আসবো।

মনে মনে সজল ভাবে আমার ব্রান্ডের ড্রেস দিলেও শাড়ি দেয়া যাবে না গাউছিয়া তে ঢু মারতে হবে।
মনা আসে সজলও আসে সজল মনাকে কোন সুযোগই দিতে চায় না। বিষয়টা মাস্তান মনা বুঝতে পারে, আড়ালে ডেকে বলে, স্যার আপনি মনে হয় মেয়েটার প্রেমে পড়ছেন, সত্যি কথা কন, জান্ কোরবান আপনার লাইগা
মনা ভাই আসলে ওকে আমি বিয়ে করতে চাই।
হায় হায় কন্ কি হে তো হিন্দু কেমনে কি?ওগুলো সমস্যা না, ওরে তে খালা ছাড়বো না তাইলে?
দুর কি কন্? তুইলা লইয়া যামু আপনার লাইগা। খালি কন কবে?

এর পর থেকে সজল খুব স্বস্তির সাথে চা খায় মনার সাথে টুকটাক কথা বলে।আর
ইশারায় মাধুর সাথে কথা হাসি সব চলে কাকির চোখ এড়িয়ে। আজ সুন্দর একটা শাড়ি খালা কে দিয়ে বললো,
পছন্দ হয়েছে?
খুব সুন্দর পছন্দ হইছে। মাধুরটা আনো নি?
এনেছি এইতো। লোক জন উৎসুক হয়ে উঠতে পারে
এখানে খুলো না কাল পরে এসো
মাধু মাথা নাড়ে আচ্ছা।

রাতে মাধু ড্রেসটা পড়ে দেখতে যেয়ে একটা চিরকুট পায়। লেখা আছে। রেডি থেকো, ঠিক সাড়ে পাঁচ টা স্কুটার নিয়ে আমি থাকবো মনা তোমাকে সাহায্য করবে। আমায় বিশ্বাস করো।
সারারাত ঘুমায়নি মাধু উথাল-পাথাল চিন্তা।

পরদিন সুন্দর করে সেজে নতুন ড্রেসটা পরলো ওড়নাটা লাল রঙের খুব সুন্দর। মাথায় ঘোমটা দিয়ে নিজেকে দেখেই বলে উঠলো আপন মনে, বাহ্! আমি এতটাই সুন্দর!

কাকিমা দেখেই হা। কিরে আইজ এত সাজছিস কেন?
নতুন জামা পরেছি তাই সখ হলো সাজার
ওওওহ, চল্ জলদি চল।
চা দিচ্ছে আর বারবার রাস্তার দিকে চোখ পড়ছে।অস্হির হয়ে উঠছে মাধু। ঠিক তখনই মনা এসে হাজির।

কিগো আপামনি এত সোন্দর লাগতাছে কেন?
মাধু কিছু বলে না, মুখ টিপে হাসে
ঐ মুহূর্তে একটা স্কুটার এসে থামে হর্ণ দিয়েই যাচ্ছে।
মাধুরী যাও, যাও দৌড় দাও। মাধু কোন দিকে না তাকিয়ে দৌড়ে স্কুটারে উঠতেই স্টাট বন্ধ হয়ে গেলো। কাকিমা উঠে দাড়াতেই মনা সামনে, খবরদার নড়বা না। বইয়া থাকো।
পর মুহূর্তেই স্কুটারটি স্টাট নিয়ে ফার্মগেটের দিকে চলে গেলো।

কিছুক্ষণের মধ্যে সবাই জানলো, সংসদ ভবনের সামনে চা বিক্রেতা রুপসী মাধুরী কিডন্যাপ হয়েছে।
পরদিন কাকির ফোনে খবর আসে মাধু নিজ ইচ্ছায় সজলের সাথে চলে গেছে। মুসলমান হয়ে বিয়ে করে সজলের মায়ের সাথে আছে।

(সত্য ঘটনা অবলম্বনে )

-লেখক : অধ্যাপক ( অব) মীরপুর গার্লস আইডিয়াল বি‍শ্ববিদ‍্যালয় কলেজ, ঢাকা।