যুগবার্তা ডেস্কঃ লিওনেল মেসি, অ্যাঙ্গেল ডি মারিয়া ছাড়াই শেষ আট আগেই নিশ্চিত হয়ে যাওয়ায় জেরার্ডো মার্টিনো ঝুঁকি নিতে চাননি আরও কজন খেলোয়াড়কে নিয়ে। বলিভিয়ার বিপক্ষে গুরুত্বপুর্ন অনেক খেলোয়ার ছাড়াই আর্জেন্টিনার দুর্দান্ত শুরু। আধঘণ্টাতেই বলিভিয়ার জালে চলে গেল তিন গোল। শেষ পর্যন্ত ওই ৩-০ গোলের জয় দিয়েই গ্রুপ পর্বে টানা তিন জয় আর ১০ গোল করে কোয়ার্টার ফাইনালে গেল আর্জেন্টিনা। কোপা আমেরিকার ইতিহাসে গ্রুপ পর্বে এটাই সবচেয়ে বেশি গোল করার রেকর্ড।
রেকর্ডটা অবশ্য আর্জেন্টিনার একার নয়। ভাগাভাগি করতে হচ্ছে। কিন্তু একসময় তো মনে হচ্ছিল, গ্রুপ পর্বেই না ১২-১৫ গোল করে বসে আর্জেন্টিনা। দলের আক্রমণভাগের দুই মূল খেলোয়াড়ের পাশাপাশি হাভিয়ের মাসচেরানো ও মার্কোস রোহোকেও খেলাননি কোচ। দুজনই গ্রুপ পর্বে একটি করে হলুদ কার্ড দেখেছিলেন। এই ম্যাচে একটি হলুদ কার্ড তাদের শেষ আটে নিষিদ্ধ করে রাখত।
তবু আর্জেন্টিনার একের পর এক আক্রমণের ঢেউ আছড়ে পড়ল বলিভিয়ার রক্ষণ-সৈকতে। ১৩ মিনিটেই বাঁ পায়ের জোরালো ফ্রি কিকে এরিক লামেলা এগিয়ে দেন দলকে। লামেলার শট বলিভিয়ার ওয়ালে লেগে দিক পরিবর্তন করে ঢুকে যায় জালে।
২ মিনিটের মধ্যেই ২-০ করে দেন এজেকুয়েল লাভেজ্জি। লাভেজ্জির পাস থেকে ফ্লিক করে ৩-০ বানিয়ে দেন ভিক্টর কুয়েস্তা। প্রথম দুই ম্যাচে বেঞ্চে বসে থাকা লাভেজ্জি এক গোল করে এবং করিয়ে এই ম্যাচের নায়ক।
এবারের কোপায় সবচেয়ে উজ্জ্বল, সবচেয়ে গতিশীল দেখাচ্ছে আর্জেন্টিনাকে। মাসচেরানো না থাকায় মাঝমাঠে একটু নিচে নেমে খেলা এভার বানেগা ছিলেন আক্রমণের হৃৎপিণ্ড। তিনিই দলের ধমনি-শিরায় ছড়িয়ে দিচ্ছিলেন আক্রমণের লোহিত কণা। বাঁ প্রান্তে ওপরে লাভেজ্জি ছিলেন বর্শার ফলার মতো। পাঁচ ডিফেন্ডার আর চার মিডফিল্ডার নিয়ে খেলতে নেমেও বলিভিয়া যেন অপারগ ছিল আর্জেন্টাইন আক্রমণের প্রতিরোধে।
৩২ মিনিটেই ৩-০; আরও তীব্র গোলের ক্ষুধা নিয়ে আর্জেন্টিনা ঝাঁপালো। তবু সিয়াটলের গ্যালারিতে ‘মেসি’ ‘মেসি’ স্লোগান। মেসিকে তাঁরা এক পলক দেখতে ব্যাকুল। টিকিটের পয়সা তো উশুল করতে হবে!
দরকার ছিল না; তবু দর্শকদের চাওয়া পূরণ করে দিলেন মার্টিনো। মেসিকে আরও একটু ম্যাচ অনুশীলনের সুযোগও। মেসি নামলেন দ্বিতীয়ার্ধে। পানামা ম্যাচে তাঁর ১৯ মিনিটের জাদুর ঝলক তখনো অনেকের চোখে–মুখে। কিন্তু বিস্ময়ের ব্যাপার হলো, ম্যাচের শেষ এক ঘণ্টায় আর্জেন্টিনা কোনো গোলই করল না। হয়তো জমিয়ে রাখল কোয়ার্টার ফাইনালের জন্যই!
তিন ম্যাচে ১০ গোল, ১০টি গোলই দারুণ ছন্দ আর আত্মবিশ্বাসে। কোপার শিরোপা-পথের প্রধান দুই বাধা উরুগুয়ে ও ব্রাজিল বাড়ির পথ ধরেছে, আছে কেবল চিলি। চিলি আজ গ্রুপের শেষ ম্যাচে পানামাকে ৪-২ গোলে হারিয়ে পা রেখেছে শেষ আটে। সব মিলিয়ে মার্টিনোর খোশমেজাজেই থাকার কথা। তবু কোচের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ থাকতেই পারে। এই ১০ গোলের মাত্র একটি যে তাঁর স্ট্রাইকারদের, সেটিও বদলি হিসেবে নামা আগুয়েরো গত ম্যাচে গোল করেছিলেন বলে।
হিগুয়েইন আজও প্রথম ২৫ মিনিটে বল একবারই ছোঁয়ালেন। হিগুয়েইন-আগুয়েরো দুজনকেই নামিয়ে দিলেও আর্জেন্টিনার আসল কাজ করেছে তার মিডফিল্ডই। স্ট্রাইকারদের জ্বলে না ওঠা টুর্নামেন্টের যেকোনো পর্যায়ে ভোগাতে পারে আর্জেন্টিনাকে। সামনে নকআউট পর্ব। জমিয়ে রাখা গোলগুলো এবার নাম্বার নাইন ও ইলেভেন সিন্দুক থেকে বের করলেই হয়!