যুগবার্তা ডেস্কঃএকাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাসেম আলীকে মৃত্যু পরোয়ানা পড়ে শোনানো হয়েছে।
একাত্তরের এই আলবদর কমান্ডার গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২-এ ফাঁসির কনডেম সেলে বন্দি রয়েছেন।
২০১২ সালে গ্রেফতারের পর থেকে তিনি এই কারাগারে রয়েছেন। ২০১৪ সালের আগে তিনি হাজতবাসকালে ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দির মর্যাদায় ছিলেন। ফাঁসির দণ্ড হওয়ার পর তাকে ফাঁসির সেলে পাঠানো হয়।
মঙ্গলবার সকালে সেখানে মীর কাসেম আলীকে মৃত্যু পরোয়ানা পড়ে শুনান কারা কর্তৃপক্ষ।
কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ এর জেল সুপার প্রশান্ত কুমার বনিক জানান, সকাল ৭টার দিকে মীর কাসেম আলীকে মৃত্যুর পরোয়ানার কপি পড়ে শুনানো হয়।
এর আগে সোমবার দিনগত রাত ১টার দিকে তার মৃত্যুর পরোয়ানার কপি কারাগারে পৌঁছে।
প্রশান্ত কুমার বলেন, রায় পড়ের শুনানোর সময় মীর কাসেম আলী স্বাভাবিক ছিলেন।
রায়ের বিরুদ্ধে মীর কাসেম আলী রিভিউ আবেদন করবেন বলে তার আইনজীবীরা জানিয়েছেন। রিভিউ করার আগে আইনজীবীরা কারাগারে মীর কাসেম আলীর সঙ্গে দেখা করবেন।
রিভিউ নিষ্পত্তির পরও তার দণ্ডের কোনো পরিবর্তন না হলে ফাঁসির কাষ্ঠে যেতে হবে প্রায় ৬৪ বছর বয়সী এ যুদ্ধাপরাধীকে।
এর আগে গতকাল সোমবার দুপুরে মীর কাসেমের মৃত্যুদণ্ডের ২৪০ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করে আপিল বিভাগ। এরপর এটি সুপ্রিমকোর্টের ওয়েবসাইটে দেয়া হয়।
পরে রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। ট্রাইব্যুনালের বিচারকদের সামনে উপস্থাপন করার পর রায়ের প্রত্যায়িত কপি রাতেই পাঠানো হয় কারা কর্তৃপক্ষ ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে। নিয়ম অনুসারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও অবহিত করা হয়।
আপিল বিভাগের সর্বোচ্চ সাজার আদেশ হাতে পেয়ে ট্রাইব্যুনাল কারাগারে মৃত্যু পরোয়ানা পাঠায়, যেটি আজ তাকে পড়ে শুনানো হল।
এই মৃত্যু পরোয়ানার ভিত্তিতেই সরকারের তত্ত্বাবধানে কারা কর্তৃপক্ষ সাজা কার্যকরের প্রস্তুতি নেবে।
অবশ্য দণ্ড কার্যকরের আগে আপিলের রায় পুনর্বিবেচনার সুযোগ পাবেন মীর কাসেম আলী। রিভিউ না টিকলে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষাও তিনি চাইতে পারবেন। দুই আর্জিই নাকচ হলে সরকারের সিদ্ধান্ত অনুসারে কারা কর্তৃপক্ষ দণ্ড কার্যকরের ব্যবস্থা নেবে। তার আগে আসামির সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ পাবেন পরিবারের সদস্যরা।
একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ২০১২ সালের ১৭ জুন গ্রেফতারের পর ট্রাইব্যুনালের নির্দেশে জামায়াতের কোষাধ্যক্ষ হিসেবে পরিচিত মীর কাসেমকে কারাগারে পাঠানো হয়। পরের বছর ৫ সেপ্টেম্বর অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এ আলবদর কমান্ডারের বিচার প্রক্রিয়া।
ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে ১৪টি অভিযোগ আনেন প্রসিকিউশন। পরে বিচার শেষে ১০টি অভিযোগ প্রমাণিত উল্লেখ করে ট্রাইব্যুনাল রায় দেন ২০১৪ সালের ২ নভেম্বর।
এর মধ্যে দুটি অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড এবং অন্যান্য অপরাধে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়। এ রায়ের বিরুদ্ধে একই বছরের ৩০ নভেম্বর আপিল করেন মীর কাসেম আলী। আপিলে তার খালাস চাওয়া হয়।
গত ৮ মার্চ আপিল আংশিক মঞ্জুর করে তার ফাঁসি বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। আপিলের রায়ে ১১ নম্বর অভিযোগে তার ফাঁসি বহাল রাখা হয়। এ অভিযোগটি ছিল কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসিমকে অপহরণ, ডালিম হোটেলে তাকে অমানুষিক নির্যাতন করে হত্যা এবং মৃতদেহ কর্ণফুলী নদীতে ফেলে দেয়ার অপরাধ সংক্রান্ত।
এর আগে যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াতে ইসলামীর ৫ নেতার ফাঁসির দণ্ড কার্যকর হয়েছে। এছাড়া যুদ্ধাপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ড ও আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ১২ জনের পক্ষে-বিপক্ষে করা আপিল সর্বোচ্চ আদালতে চূড়ান্ত নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে।
এর মধ্যে ১১ জন দণ্ড হ্রাসের আপিল করেছেন এবং একজনের সাজা বৃদ্ধির আবেদন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। এ ছাড়া দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুদণ্ড চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) আবেদনও শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। আপিলে তার সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাভোগের আদেশ দেয়া হয়।