‘বিপ্লবের নামে মানুষ হত্যা করে ভুল করেছি, ক্ষমা চাচ্ছি’

যুগবার্তা ডেস্কঃ স্বাধীন দেশের স্বপ্ন ফেরি করে অনেক রক্ত ঝরিয়েছে ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ইউনাটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব আসাম- উলফা। স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযুদ্ধের নামে অসংখ্য নিরাপরাধ মানুষ উলফা বিপ্লবের বলি হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন, জীবনের জন্য পঙ্গু হয়েছেন, অনাথ হয়েছে অনেক শিশু, স্বামীহারা হয়েছেন অনেকে, তছনছ হয়ে গেছে বহু পরিবার।
অবশেষে স্বাধীন আসাম বিপ্লবের অন্যতম শীর্ষ নায়ক উলফার সাধারণ সম্পাদক অনুপ চেটিয়া বললেন, ‘বিপ্লবের জন্য কাজ করতে গিয়ে অনেক মানুষ মেরেছি। প্রচ- ভুল হয়েছে আমাদের। এভাবে কাজ করা ঠিক হয়নি। এই কৃতকর্মের জন্য আমরা এখন অনুতপ্ত। এ জন্য আমরা ক্ষমা চাইছি আসাম রাজ্যবাসীর কাছে।’
দীর্ঘ আঠারো বছর বাংলাদেশের কারাগারে বন্দিত্ব জীবন শেষে গত ১১ নভেম্বর ভারতে ফিরে হত্যা, অপহরণ, ব্যাংক ডাকাতিসহ একাধিক মামলায় গ্রেফতার হন আসামের স্বাধীনতার লক্ষ্যে দুই দশকেরও বেশি সময় সশস্ত্র তৎপরতা চালানো ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব আসামের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক অনুপ চেটিয়া, যার আসল নাম গোলাপ বড়ুয়া। ৪৮ বছর বয়সী এই বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা সোমবার গুয়াহাটির টাডা আদালতে হাজিরা শেষে সাংবাদিকদের কাছে এসব কথা বলেন।
উলফার সঙ্গে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের শান্তি আলোচনায় তার ভুমিকা কী হবে এ নিয়ে সংশয় ব্যক্ত রয়েছে। গুজব উঠেছে বিশেষ আদালতে চলা মামলা থেকে রেহাই পেলে অনুপ চেটিয়া পালিয়ে যাবেন। আবারো ফিরবেন সশস্ত্র আন্দোলনে। তবে তিনি এটা স্পষ্ট করে দেন অনুপ চেটিয়া। বলেন, ‘পালিয়ে যাব না, পুনরাবৃত্তি হবে না। আমি আলোচনার পক্ষেই আছি।’
অনুপ চেটিয়াকে সোমবার দুটি মামলায় বিশেষ আদালতে শুনানির জন্য গুয়াহাটি আনা হয়েছিল। বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রত্যর্পণের পর থেকেই প্রশ্ন উঠছিল যে, অনুপের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী? তিনি কি পরেশ বড়ুয়াপন্থী উলফাকে সমর্থন করবেন,নাকি আলোচনাপন্থী উলফার সঙ্গে শান্তি আলোচনার গতি ত্বরান্বিত করবেন? এতোদিন এ সম্পর্কে তার মতামত জানা যায়নি। সোমবার গুয়াহাটির টাডা আদালত থেকে বেরিয়ে আসার সময় দীর্ঘ আঠারো বছর পর সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হন। এ সময় তিনি বলেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়াল ও আসামের মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তাদের জন্যই আজ আঠারো বছর পর আমি দেশে ফিরতে পেরেছি।’
এদিকে, আসামের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ বলেন, ‘আমি বরাবরই শান্তির পক্ষে। আলোচনাপন্থী উলফা নেতারা আমায় জানিয়েছেন, শান্তি আলোচনার ক্ষেত্রে চেটিয়ার অংশগ্রহণ আবশ্যিক। তাই, আমিও চেটিয়ার জামিন চাই। এ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে কথাও বলেছি’।
উল্লেখ্য, অনুপ চেটিয়ার বিরুদ্ধে আসামের টাডা আদালতে ছয়টি মামলার চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। এই মামলাগুলির বিচার প্রক্রিয়ার জন্যই সোমবার তাকে আদালতে হাজির করা হয়। এদিন দুটি মামলায় জামিনের জন্য আবেদন করেছেন অনুপ। ১৭ ডিসেম্বর তার জামিনের আবেদনে শুনানি গ্রহণ করা হবে। আদালত তাকে ফের ১৪ দিনের জন্য বিচার বিভাগীয় হেফাজতে পাঠিয়েছে। আমাদের সময়.কম